শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Limon

Call

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন। কারো মতে, পৃথিবী আদি ও অনন্ত, এর কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। কিন্তু বিরোধীরা বলেছেন অন্য কথা। তাঁদের মতে, পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি হয়েছে এবং এক সময় তা ধ্বংসও হয়ে যাবে। আধুনিক বিজ্ঞান পৃথিবীর অসীমতত্ত্বকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। শুধু তাই নয়, আধুনিক বিজ্ঞান পৃথিবীর মোটামুটি নির্ভুল একটা বয়স নির্ণয় করতেও সক্ষম হয়েছে। তা হলো ৫০০ কোটি বছর। পৃথিবীর সময় নির্ণয়ের মতো একটা অকল্পনীয় কাজকে বাস্তবায়ন করতে মূল ভূমিকা পালন করেছে ইউরেনিয়াম। মানে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয় ধর্ম ব্যবহার করা হয় এই পরীক্ষায়। কেবলমাত্র পৃথিবীর বয়স নয়, লক্ষ লক্ষ বছরের পুরোনো কাঠ, হাজার হাজার বছর আগে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইত্যাদির বয়স নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও মৌলের তেজস্ক্রিয় ধর্ম ব্যবহৃত হয়। তাই বয়স নির্ণয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে মৌলের তেজস্ক্রিয় ধর্ম তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে খানিকটা ধারাণা রাখা দরকার। তেজস্ক্রিয়তা এমন একটা সময় ছিল যখন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, পরমাণুই একটি মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম ও অবিভাজ্য কণা, সুতরাং এক ধরনের মৌলিক পদার্থকে অন্য কোনো মৌলিক পদার্থে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। ১৮৯৭ সালে স্যার জে জে থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করলেন। তখন বিজ্ঞানীরা আগের ধারণা থেকে সরে আসতে হলো। পরবর্তীকালে আরও দুটি সূক্ষ্ম কণিকা প্রোটন ও নিউট্রন আবিষ্কৃত হয়। প্রত্যেক মৌলের প্রত্যেক পরমাণুই মূলত এই তিনটি সুক্ষ্ম কণিকা (ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন) দিয়ে গঠিত। এ সমন্বয় অনেকটা আমাদের সৌরজগতের মতো। সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে যেন গ্রহগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে, তেমনি পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো একটি নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে সর্বদা ঘুরছে। প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরের প্রোটন ও নিউট্রনের মিলিত সংখ্যাকে ওই মৌলের ভরসংখ্যা বলে। এক একটি নির্দিষ্ট মৌলের জন্য ভরসংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। অধিকাংশ মৌলের ক্ষেত্রেই পরমাণুর ভর সংখ্যা স্থিতিশীল। কিন্তু কিছু মৌল আছে, যাদের ভর সংখ্যা পরিবর্তনীয়। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সাহায্যে প্রথমে এসব মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ভাঙন সৃষ্টি করা হয। অতঃপর ভরসংখ্যা পরিবর্তন করে (নিউক্লিয়াসের প্রোটন অথবা নিউট্রন সংখ্যা হ্রাস বা বৃদ্ধি করে) এক ধরনের মৌলকে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী অন্য কোনো মৌলে পরিণত করা সম্ভব। আবার এমন কিছু অস্থিতিশীল মৌল আছে, যাদেরকে অন্য মৌলে পরিণত করতে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। এসব মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে এক ধরনের রশ্মি (আলফা বা বিটা বা গামা রশ্মি) বিকিরণ করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয। ফলে সংশ্লিষ্ট পরমাণুর ভরসংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে অন্য মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয়। মৌলের এই রশ্মি বিকিরণ ধর্মকে তেজস্ক্রিয়তা বলে। বিকিরিত রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি এবং বিকিরক মৌলকে তেজস্ক্রিয় মৌল বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলে। তেজস্ক্রিয় মৌলের রশ্মি বিকিরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত এবং এর উপর বহিঃশক্তির কোনো প্রভাব নেই। একটি অস্থিতিশীল মৌল তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত হয়ে ভিন্নধর্মী একটি স্থিতিশীল মৌলে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার তেজস্ক্রিয়তা অব্যহত থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর একটি তেজস্ক্রিয় মৌল রশ্মি বিকিরণ করে আদি ওজনের অর্ধেকে পরিণত হয় এবং বাকি অর্ধেক অন্য মৌলে পরিণত হয়। ঐ নির্দিষ্ট সময়কে ঐ মৌলের অর্ধায়ু বলে। যেমন--থোরিয়ামের (একটি তেজস্ক্রিয় মৌল) অর্ধায়ু ২৪ দিন। অর্থাৎ ২৪ দিনে একখণ্ড থোরিয়াম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মূল ওজনের অর্ধেকে পরিণত হয়। আরো ২৪ দিন পর অর্থাৎ মোট ৪৮ দিন পর প্রাথমিক ওজনের এক-চতুর্থাংশ, ৭২ দিন পর এক-অষ্টমাংশ এবং ৯৬ দিন পর এক ষোঢ়শাংশ থোরিয়াম অবশিষ্ট থাকবে এবং বাকি অংশ অন্য মৌলে রূপান্তরিত হবে। অর্থাৎ ১০০ গ্রামের একটি থোরিয়ামখণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, ২৪ দিন পর খণ্ডটিতে ৫০ গ্রাম, ৪৮ দিন পর ২৫ গ্রাম, ৭২ দিন পর ১২.৫ গ্রাম এবং ৯৬ দিনে ৬২.৫ গ্রাম থোরিয়াম অবশিষ্ট থাকবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি ওজনের সাথে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের (রশ্মি বিকিরণের) কোনও সম্পর্ক নেই। তাই একই তেজস্ক্রিয় মৌলের বিভিন্ন খণ্ডের অর্ধায়ুও এক হবে। আবার বিভিন্ন মৌলের রশ্মি বিকিরণের হার বিভিন্ন। তাই দুটি ভিন্ন প্রকার মৌলের অর্ধায়ু কখনো এক হবে না। আবার একটি মৌলের সবগুলো পরমাণুর নিউক্লিয়াস একই সাথে রশ্মি বিকিরণ শুরু করে না। এ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় ধাপে ধাপে। যদি তা না হত, তাহলে একই সাথে একটি মৌলের সবটুকু অংশ অন্য মৌলে পরিণত হতো। সেক্ষেত্রে অর্ধায়ু অস্তিত্বহীন (বাস্তবে যা অসম্ভব) হয়ে পড়ত। ইউরেনিয়ামের সাহায্যে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক গঠন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়--এটা একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ। এর পরমাণুর ভেতরে থাকা নিউক্লিয়াসগুলো ক্রমাগত রশ্মি বিকিরণ করে সীসাতে রূপান্তরিত হয়। সীসা হলো অতেজস্ক্রিয় স্থিতিশীল মৌলিক পদার্থ। প্রতি সেকেন্ডে রশ্মি বিকিরণের হার ব্যবহার করে একটা গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু নির্ণয় করা হয়। সকল তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু এ প্রক্রিয়ায় নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর। অর্থাৎ এক খণ্ড ইউরেনিয়ামের প্রাথমিক পর্যায়ে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম পরমাণু থাকে ৪৫০ কোটি বছর পর ঐ খণ্ডতে তার অর্ধেক পরিমাণ ইউরেনিয়াম পরমাণু অবশিষ্ট থাকবে এবং বাকি অর্ধেক পরমাণুর নিউক্লিয়াস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সীসা’র পরমাণুতে রূপান্তরিত হবে। ধারণা করা হয় মহাবিস্ফোরণ দ্বারা সৌরজগত সৃষ্টির সময় এর সকল গ্রহ নক্ষত্রের সাথে আমাদের পৃথিবী জন্ম লাভ করে। প্রথমে এটা ছিল একটা জলন্ত অগ্নিগোলক। কালের বিবর্তনে তাপ বিকিরণ করতে করতে এক সময় এটা কঠিন রূপ লাভ করে। বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরোনো যেসব কঠিন শীলা খণ্ডগুলো পাওয়া গেছে, ধারণা করা হয় তা পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর দিকের শিলাখণ্ড। সুতরাং এ সব শীলাখণ্ডগুলোর বয়স পৃথিবীর বয়সের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং শীলাখণ্ডগুলোর বয়স নির্ণয় করতে পারার অর্থই হলো পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা। ইউরেনিয়ামযুক্ত কতগুলো প্রাচীন শীলাখণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, এগুলোতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম পরমাণু আছে ঠিক সেই পরিমাণ সীসার পরমাণুরও রয়েছে। যেহেতু ইউরেনিয়াম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অনবরত সীসায় পরিণত হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি শীলাখণ্ডগুলো সৃষ্টির সময় তাতে শুধুমাত্র ইউরেনিয়াম পরমাণু ছিল, কোনো সীসার পরমাণু ছিল না। সময়ের হাত ধরে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে করতে ইউরেনিয়াম পরমাণুগুলোর অর্ধেক সীসায় পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ শীলাখণ্ডগুলোতে বিদ্যমান ইউরেনিয়াম বর্তমানে তার অর্ধায়ুতে অবস্থান করছে। যেহেতু ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর। সুতরাং শীলাখণ্ডগুলোর বয়সও ৪৫০ কোটি বছর। আবার শীলাখণ্ডগুলোর বয়স পৃথিবীর বয়সের কাছাকাছি ধরলে পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছরের কিছু বেশি বলে ধরে নেয়া হয়। সেটা কেউ বলেছেন ৫০০ কোটি বছর কারো মতে ৬০০ কোটি। যেটাই হোক, তা ৪৫০ কোটির চেয়ে খুব বেশি ব্যবধানের তো নয়। তেজস্ক্রিয় কার্বনের সাহায্যে বহু পুরানো বস্তুর বয়স নির্ণয় ইউরেনিয়ামের সাহায্যে নির্ণীত পৃথিবীর বয়সটা পুরোপুরি নির্ভুল না হলেও তেজস্ক্রিয় কার্বণ পদ্ধতিতে যেসব বস্তুর বয়স নির্ণয় করা হয় তা সম্পূর্ণরূপে ভুলত্রুটির উর্ধ্বে। যেমন, বহু বছরের পুরোনো কাঠ, কয়লা, বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রভৃতি। উদ্ভিদ, প্রাণীসহ সমস্ত জীবকুলের দৈহিক গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান কার্বন। কার্বন প্রধানত দুই প্রকার। একটা স্থিতিশীল অতেজস্ক্রিয় কার্বন। অন্যটা অস্থিতিশীল তেজস্ক্রিয় কার্বন। তেজস্ক্রিয় কার্বন ক্রমাগত রশ্মি বিকিরণ করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয। স্থিতিশীল অতেজস্ক্রিয় কার্বণ প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় বা যৌগিক পদার্থের উপাদান হিসাবে পাওয়া যায়। আর তেজস্ক্রিয় কার্বন নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সাহায্যে সৃষ্টি হয়। স্থিতিশীল কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসসমূহ বায়ুমণ্ডেলর প্রধান উপাদান। মহাকাশের বিভিন্ন্ গ্রহ, নক্ষত্র, মহাজাগতিক থেকে আসা এক ধরনের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের বায়মন্ডলে। এইসব রশ্মিকে মহাজাগতিক রশ্মি বলে। মহাজাগতিক রশ্মিতে যেসব নিউট্রন থাকে সেগুলো বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসগুলোকে আঘাত করে। ফলে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াসে ভাঙ্গনের ধরে। ফলে সম্পূর্ণ নতুন ভরসংখ্যার দুটি ভিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। নবগঠিত দুটি পরমাণুর একটা হলো হাইড্রোজেন। অন্যটা তেজস্ক্রিয় কার্বন। উৎপন্ন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তেজস্ক্রিয় কার্বন পরমাণুগুলো বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে তেজস্ক্রিয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গঠন করে। সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির উদ্দেশ্যে বায়ুমণ্ডল হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (স্থিতিশীল ও তেজস্ক্রিয় উভয় প্রকার) শোষণ করে। শোষণ করা এসব কার্বন-ডাই-অক্সাইড অণু উদ্ভিদের দেহাভ্যান্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে কাবর্ন (তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয়) ও অক্সিজেন পরমাণুতে বিভক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে অক্সিজেন পরমাণুগেুলো উদ্ভিদের দেহ থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় উভয় প্রকার কার্বন পরমাণু দেহাভ্যান্তরে থেকে যায়। যেহেতু পশুপাখি ও মানুষ খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদ, ফলমূল ও শস্যদানা গ্রহণ করে, ফলে উদ্ভিদের দেহে জমে থাকা কার্বণ (তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয়) পশুপাশি ও মানুষের শরীরে চলে যায়। আবার মাংশাসী প্রাণী খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন প্রাণীকে ভক্ষণ করে, সুতরাং এসব প্রাণীর মাধ্যমে মাংশাসী প্রাণীর শরীরেও কার্বন পৌঁছে যায়। জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহে কার্বনের এই সরবরাহ এমনভাবে ঘটে, মৃত্যুর সময় প্রতি

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ