দামে বেশি হলেও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বর্তমানে অনেকেই রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন বা করতে চান। এক্ষেত্রে অলিভ অয়েল সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। কারণ, বিভিন্ন ধরণের অলিভ অয়েল আছে। এর স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন। ব্যবহারও আলাদা। আসুন জেনে নিই অলিভ অয়েল কত রকমের হয়, কোন অলিভ অয়েল কী ধরনের রান্নার জন্য উপযুক্ত। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল: সবচেয়ে উচ্চ মানের অলিভ অয়েল হলো এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। স্যালাড ড্রেসিং হিসেবে এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। সবজি রান্না করার জন্যও এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মাখনের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও চলতে পারে এই অলিভ অয়েল। ক্লাসিক অলিভ অয়েল: যদি আপনি ভূমধ্যসাগরীয় বা কন্টিনেন্টাল রান্না করতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনার জন্য সেরা ক্লাসিক অলিভ অয়েল। হালকা ভারতীয় রান্নাতেও অন্য স্বাদ নিয়ে আসে এই তেল। পাস্তা, স্টার-ফ্রায়েড ভেজিটেবল বা রাইস তৈরির কাজে ক্লাসিক অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে। ফলে চুল ও ত্বকের জন্য ভাল এই অলিভ অয়েল। বাচ্চাদের মাসাজ করার জন্যও এই তেল উপকারি। অলিভ পোমেস অয়েল: এই অলিভ অয়েলের নিউট্রাল গন্ধ ও রঙের জন্য বাঙালি রান্নার পক্ষে আদর্শ। উচ্চ স্ফুটনাঙ্কের কারণে ডিপ ফ্রাইং-এর জন্য খুব ভালো এই তেল। পোলাও, পরোটা এমনকি পাকোড়াও তৈরি করতে পারেন এই তেল দিয়ে। লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল: হালকা রং ও মৃদু গন্ধের জন্য সহজেই চেনা যায় এই অলিভ অয়েল। প্রতি দিনের রান্নায় অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন এই তেল। রোজকার ভারতীয় রান্না বা কন্টিনেন্টাল রান্না, যে কোনো রকম পদই তৈরি করতে পারেন লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল দিয়ে। ভাজি, রান্না করা, রোস্ট বা বেকিং সব কাজেই ব্যবহার করা যায় এই অলিভ অয়েল। পার্থক্য: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ফলের স্বাদযুক্ত। রংটি হলুদাভ-সবুজ। রং যত গাঢ় স্বাদ ততই। এতে ০.৮% এসিডিটি থাকে যা খুবই সামান্য। অন্যদিকে ফাইন ভার্জিন অলিভ অয়েলের এসিডিটি হলো ১.৫%। এটি একটু কম দামি কিন্তু তুলনায় এটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের মতোই। রান্নায় ব্যবহার কম। তারপর ভার্জিন অলিভ অয়েল। এটির এসিডিটি ২% হয়ে থাকে, তবে রান্নায় এদের ব্যবহার দেখা যায়। তবে ত্বকেও ব্যবহারযোগ্য। আর ভার্জিন অলিভ অয়েলকে আর এক ধরনের pomace oil নামক তৈলের সাথে যুক্ত করে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে বাজারে অলিভ অয়েল আকারে পাওয়া যায়। উপকারী দিক সমূহ: বিশেষ করে এই শুষ্ক আবহাওয়ায় অলিভ অয়েল দারুণ কার্যকর। সাধারণত তিনধরনের হয়ে থাকে এই তেল। এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন এবং রিফাইনড। অলিভ অয়েল টাইমস ডটকমের মতে খাওয়া ছাড়াও সৌন্দর্য সুরক্ষায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ব্যবহারই সর্বৎকৃষ্ট। কোলেস্টেরল কমায়:- গবেষকরা ২.৫ কোটি (25 million) লোকের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন, ‘প্রতিদিন দুই চামচ কুমারী’ জলপাই তেল (virgin olive oil) এক সপ্তাহ ধরে খেলে ক্ষতিকারক এলডিএল (LDL) কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল (HDL) কোলেস্টেরল বাড়ায়। ক্যান্সার প্রতিরোধক :- কালো জলপাই ‘ই’ ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এটা শরীরের চর্বিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। শরীরের ডিএনএ সেল নষ্ট হয়ে গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে পারে জলপাই তেল। এ তেল ব্যবহারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম থাকে। মাছের তেলেও এ উপকার পাওয়া যায়। (পোড়া অলিভ অয়েলে কিন্তু অনেক সময় একটি কার্সিনোজেনিক উপাদান দেখা যায়। কাজেই কড়াইয়ের তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার না করাই ভালো।) চামড়া ও চুলের স্বাস্থ্য:- কালো জলপাই ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন ‘ই’। এটা শরীরে যেভাবে প্রয়োগ করা হোক না কেন আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে চামড়াকে রক্ষা করে। যা স্কিন ক্যান্সার থেকে মানুষকে রক্ষা করে। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল মুখে মাখলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। গোসলের আগেও জলপাই তেল শরীরে মাখলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে চামড়া ভালো থাকে। নিজেকে শক্তপোক্ত এবং কর্মক্ষম রাখতে যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চুলেরও খাবারের প্রয়োজন। চুলের খাবার হিসেবে জলপাই তেল দারুণ কার্যকরী। ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল নিয়ে চুলে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।