শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হৃদযন্ত্র বা হৃৎপিন্ডের অসুখ বা পীড়াকে হৃদরোগ বলা হয়। হৃদরোগের লক্ষণসমূহ হৃদরোগে বুক ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হয়ে থাকে। কখনও বুকের বামপাশে অনেকখানি জায়গা জুড়েও তা হতে পারে। এই ব্যথা মৃদু থকে তীব্র, বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণত একটা তীব্র চাপ এই ব্যথার বৈশিষ্ট্য। অনেকের ব্যথা শুধু বুকের মধ্যখানে অথবা বুকে হৃদপিন্ডের উপর সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। যদিও এই ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা বুকে, বাম কাঁধে, বাম বাহুতে, বাম হাতে, বাম কড়ে আঙ্গুলে। কখনও কখনও ডান কাঁধেও এ ব্যথা আসতে পারে। আবার এই ব্যথা গলা দিয়ে চোয়াল পর্যন্তও চলে আসে। কেউ কেউ এ ব্যথা উপরের পেটেও অনুভব করেন। এনজাইমা হলে সাধারণত পরিশ্রমের পর রোগী এই ব্যথা অনুভব করেন এবং বিশ্রাম করলে এই ব্যথা চলে যায়। কিন্তু একবার মাইওকার্ডিক্যাল ইনফ্রাকশন হলে এ ব্যথা এবং চাপ চলতে থাকে। তখন বুকে ব্যথার সঙ্গে প্রায়ই দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়, শরীর ঘামতে থাকে, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং কখনও কখনও বুক ধড়ফড় করে। কোন কোন রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যান। ব্যথার সময় গ্লিসারিন ট্রাই নাইট্রেট (জিহ্বার নিচে দিয়ে চুষতে হয় অথবা জিহ্বার নিচে স্প্রে করতে হয়) ওষুধে ২ মিনিটে যদি ব্যথা না কমে, দম বন্ধ ভাব, দারুণ দুর্বলতা অথবা বুকে চাপ চলতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি মোটামুটি গুরুতর পর্যায়ে। সুতরাং হাসপাতালে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। যারা অতি বৃদ্ধ, যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অথবা যারা অধিক মদ্যপায়ী তাদের বুকে ব্যথা ছাড়াও মাইওকার্ডিক্যাল ইনফ্রাকশন হতে পারে। ওই ধরনের রোগীরা দারুন দুর্বলতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অথবা হৃদপিন্ড ঢিলে হয়ে যাওয়ার দরুন, হাত-পা ফুলে গিয়ে অসুবিধার দরুন ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। হৃদরোগ যেভাবে সনাক্ত করবেন হৃদরোগ সন্দেহ হলে প্রথমে ডাক্তার সাহেব একটি ইসিজি করেন। ইসিজির মাধ্যমে জন্ম থেকে হৃদরোগ এবং ভাল্বরোগের খুব নিশ্চিত সিদ্ধান্ত না পেলেও সন্দেহজনক ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু করোনারি হৃদরোগ বা করোনারি আর্টারিতে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগে ইসিজিতে প্রায়ই অনেক গুরুত্বপর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং ডপলার ইকো- এ দুটি অপেক্ষাকৃত উঁচু দরের সহায়ক পরীক্ষা। ডপলার ইকো হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। করোনারি হৃদরোগ ইকো দেখে হৃদপিন্ডের কোনো অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে থাকলে সেই অঞ্চলের মাংসপেশীর দুর্বলতার পরিমাণ বোঝা যায়। তাছাড়া বাম নিলয়ের সংকোচন ক্ষমতা সম্পর্কেও ইকো থেকে বেশ বোঝা যায়। করোনারি হৃদরোগ সম্পর্কেও যথেষ্ট সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও ইসিজি স্বাভাবিক হলে ইটিটি পরীক্ষা করা যেতে পারে। ইটিটি পরীক্ষা করার সময় রোগীকে নির্দিষ্ট ব্যায়াম দিয়ে ক্রমাগত ইসিজি করা হয়। ব্যায়াম দেয়ার দরুন ইসিজিতে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তন হলে করোনারি হৃদরোগ সন্দেহ প্রবল হয়। করোনারি ধমনী অথবা তার কোন শাখা খুব সরু হয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত পরীক্ষা করোনারি এনজিওগ্রাম। এটি একটি বিশেষজ্ঞ পরিচালিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কোমরের কুচকিতে অথবা হাতের কনুইতে, ধমনীতে একটি সরু নল প্রবেশ করিয়ে এক্স-রে স্ক্রিনিং মেশিনের সহায়তায় চোখে দেখে তা মহাধমনীর গোড়ায় করোনারি আর্টারীতে আয়োডিন সম্বলিত ওষুধ প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে দুটি করোনারি ধমনী এবং তার শাখা-প্রশাখা স্পষ্টভাবে স্কীনে ফুটে উঠে। এগুলোর ভিডিও টেপ এবং এক্স-রে ছবির কপি সংরক্ষণ করা হয়। রোগীকে এর জন্য অজ্ঞান করতে হয় না। কিন্তু রোগী যাতে নার্ভাস না হয় সে জন্য সামান্য ওষুধ দেয়া হয়। ইচ্ছে করলে ওই সময়ে রোগীর করোনারির ছবি তিনি নিজে দেখতেও পারেন। হালে কার্ডিক বা করোনারি এমআরআই বলে একটি নতুন পরীক্ষা বের হয়েছে। এতে টিউব না ঢুকিয়ে করোনারি শিরা ও হৃদপিন্ডের অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। হৃৎপিন্ড কখনও কখনও ধীর গতিতে কখনও খুব দ্রুত চলা, কখনও হৃৎপিন্ডে ছন্দ বা লয়ে অসামঞ্জস্য থাকা ইত্যাদি রোগে হলটার মনিটর টেস্ট বলে একটি পরীক্ষা করা হয়। ২৪ ঘণ্টা ছোট একটি যন্ত্র বুকে লাগিয়ে রোগী তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন। এই পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টার প্রায় ১ লাখ হার্টবীট সংরক্ষণ করা হয়। পরে কম্পিউটার এনালাইসিস করে হৃদপিন্ডের ওইসব বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি করা হয়। হৃদরোগের চিকিৎসা বুকের ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, ঘাম দিয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যেতে হবে। এমআই হলে সাধারণত করোনারি ধমনীর কোন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আজকাল রোগী যদি ব্যথা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে হার্টের ইউনিটে পৌঁছতে পারেন তাহলে ওই জমাট রক্ত তরল করে ফেলার জন্য বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এমআই হবার প্রথম ঘণ্টাকে এজন্য গোল্ডেন আওয়ার বলে। এছাড়া ব্যথা, অস্থিরতা, অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ওষুধ এবং অক্সিজেন দিয়ে রোগীকে আরাম দেয়া হয়। একই সঙ্গে রোগীর হাইপ্রেসার বা ডায়াবেটিস থাকলে তা চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ  করতে হয়। অল্প কিছুদিন পূর্ণ বিশ্রাম করার পর হালকা কাজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে রোগীকে পুনর্বাসিত করতে হয়। ভবিষ্যতের জন্য লাইফ স্টাইল পরবর্তিত করে নিতে হয়। ধূমপান করলে করোনারি রক্তনালি চেপে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ জন্য ধূমপান এ রোগীর চরম শত্রু। কোলেস্টরল এবং লিপিড নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সাধারণত ভাত এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খেতে হয়। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণের জন্য ফুলক্রিম দুধ, সর, ঘি, মাখন, চর্বি, ডিমের কুসুম, মগজ, কলিজা, হাড়ের ভেতরের নরম অংশ, গরু, খাসি, শর্করা, মদ ইত্যাদি খাদ্য শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রক্তের চর্বি এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধও পাওয়া যায়। সাধারণত ফল, শাক-সব্জি, মাছ, ডাল লিপিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেসার রোগের ক্ষেত্রে লিপিড এবং ধূমপান নিয়ন্ত্রণ এবং শক্ত হাতে চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ