ইসলামের মধ্যে ঢোল, তবলা তথা বাদ্যযন্ত্র হারাম। হাদিস শরিফ আছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই এবং অবশ্যই আমার পর এমন কিছু লোক আসবে, যারা যিনা, রেশম, নেশাজাতীয় দ্রব্য, গান - বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র কে হালাল মনে করবে।” (বুখারি ২/২৭৮) সুতরাং, এটি যে হারাম তথা নিষিদ্ধ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই
কুরআন মজীদের আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন,
“তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর।” -সূরা ইসরা : ৬৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন,এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। -ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯
ইসলামে সকল ধরণের বাদ্যযন্ত্রই হারাম। তবে ইসলামে দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা বৈধ। দলিল: রাসূল (সাঃ)বলেন: ﻓَﺼْﻞُ ﻣﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺤَﻠَﺎﻝِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮَﻡِ ﺿَﺮْﺏُ ﺍﻟﺪَّﻑِ ﻭَﺍﻟﺼَّﻮْﺕُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡِ ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ) হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (আহমাদ) এছাড়া ঈদের দিন ছোট ছোট অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকাদের দ্বারা গান শ্রবণ করা ও বৈধ। দলীল- আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত: ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻭَﻋِﻨْﺪَﻫَﺎ ﺟَﺎﺭِﻳَﺘَﺎﻥِ ﺗَﻀْﺮِﺑَﺎﻥِ ﺑِﺪَﻓَّﻴْﻦِ ( ﻭَﻓِﻲ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﺟَﺎﺭِﻳَﺘَﺎﻥِ ﺗُﻐَﻨِّﻴَﺎﻥِ ) ﻓَﺎﻧْﺘَﻬَﺮَﻫُﻤَﺎ ﺍﺑُﻮْﺑَﻜﺮٍ ﻓَﻘﺎﻝَ ﺻَﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺩَﻋْﻬُﻦَّ ﻓَﺎﻥَّ ﻟِﻜُﻞِّ ﻗَﻮْﻡٍ ﻋِﻴْﺪًﺍ ﻭَﺇﻥَّ ﻋِﻴْﺪَﻧَﺎ ﻫَﺬﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡ ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ) একদা রাসূল সা. তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রা. তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল সা. বললেন: তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন। (বুখারী)
জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আধুনিক, ফোক, রক, মেটাল, পপ, জ্যাজ, শ্যামা, নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, মাইজভান্ডারী ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানই হোক না কেন; গান-বাজনা করা ও শোনা হারাম-কবিরা গুনাহ । তবে, বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতিত গানের কথা ভাল হলে; অশ্লীল, কামোদ্দীপক, মিথ্যা ও ইসলামী আক্বীদা-পরিপন্থী না হলে কোন সমস্যা নেই। যেমন, আল্লাহ তা’আলার গুনাবলী বিষয়ে হামদ, না’ত, কাসীদা, গজল ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়েয রয়েছে।
মনে রাখবেন, গান-বাজনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে লেশমাত্র সন্দেহ নেই।
কোরআনের ভাষ্য:
আর আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যারা অজ্ঞতায় লোকেদেরকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসাড় বাক্য বেছে নেয় এবং আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান ৬ আয়াত)
ইবনে মাসঊদ রাযি. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, واللهِ الذي لا إله إلا هو إن لهو الحديث لهو الغناء ‘সেই আল্লাহ্র কসম যিনি ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই! নিশ্চয় তা (অসার বাক্য) হচ্ছে গান।’ (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৮/৩,৪)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়।(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)
কোরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে সম্বোধন করে বলেন,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا وَتُضْرَبُ عَلَى رُءُوسِهِمُ الْمَعَازِفُ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০২০ সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।
الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ
পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (বাইহাকী ২১৫৩৬ তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২)
সলফে সালেহীন; সাহাবা ও তাবেঈনদের ভাষ্য অনুযায়ী গান অন্তরে মুনাফিকী (কপটতা) উদগত করে এবং বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যেমন- ক) নিফাক এর উৎস। খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী। গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ। ঘ) কোরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী। ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী। চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী এবং ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭)
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী
সূত্রঃ http://quranerjyoti.com