আল মাহমুদের নোলক কবিতার বিষয়বস্তু কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
কবি আল-মাহমুদের ‘নোলক’ কবিতাটির জন্ম হয়েছে তাঁর দেশপ্রেম খেকেই। ‘মা’ বলতে এখানে তিনি দেশকে ই বুঝিয়েছেন। আর তাঁর ‘নোলক’ হলো মায়ের সধবার অহঙ্কার!' সম্মানের তথা স্বাধীন সংস্কৃতি লালনের অধিকার! ‘নোলক’ হলো দেশের স্বাধীনতা সংহত করার, উন্নতির সোপানের উপমা। যার জন্যে এদেশের মানুষ বারে বারে রক্ত ঝরিয়েছেন, মুক্তির আকাঙ্খা নিয়ে অমানিশার অন্ধকারকে ভ্রুকুটি করেছে। সেই অর্জিত সম্মান বা ‘চেতনা’ যখন ভুলুন্ঠিত হতে দেখেছেন তখনই কবির হৃদয় ডুকরে উঠেছে! মুক্তির আনন্দকে, বিজয়ের চেতনাকে, সংস্কৃতির ক্ষুধাকে স্বাধীন ভাবে মিটাবার প্রত্যাশা নিবারণের প্রত্যয়ে কলম ধরেছেন, সৃষ্টি হয়েছে ‘নোলক’ এর মত হৃদয়স্পর্শী কবিতা।

কবি উপমার আশ্রয় নিয়ে যখনই যাদের কাছেই হারানো ঐতিহ্যের সন্ধান করেছেন, তারাই নিজেদের সমৃদ্ধিকেই কবির সামনে তুলে ধরেছেন, যা দেখে কবি মন আহত হয়েছে, তাই ক্ষোভে, দুঃখে হারানো ‘নোলক’ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার অঙ্গীকার করেছেন। “মুক্তির আনন্দকে তিনি মুক্ত করার-ই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

আল মাহমুদের মা আর কারো মা না হলেও, এই নদীমাতৃক সবুজশ্যামল দেশে বেড়ে ওঠা সন্তানদের মা’তো অবশ্যই। যে মাকে সারা বাংলাদেশে খুঁজতে গিয়ে কবি দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন নদীভরা বোয়াল মাছ, সাদা পালক ছড়ানো বকের দল। সবুজ বনে হরিৎ টিয়ের ঝিকমিক।

নোলক আবহমান বাঙালী মায়েদের নাকের অলংকার হলেও এ শুধু তার অর্থগত আর সৌন্দর্যের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপুর্ণ আরো বড় কারণে। কবি এখানে আক্ষরিক অর্থের নোলক খোঁজেনি, খুঁজেছেন এর ঐতিহ্য এবং ঐশ্বর্যকে।

সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝি তার মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বলে একটি কথা আছে। সেই সংস্কৃতির মূল্যবোধকে ভক্তিভরে দীর্ঘ চর্চায় মানুষ এক ধরনের বিশেষ অবস্থানে পৌঁছে যায়। নোলক গ্রাম বাংলার সাধারণ নারীর নাকের অলংকার, এটা যতটা না অলংকার তার চেয়েও বেশি অহংকার। পাত্র বা পাত্রপক্ষের পছন্দ হলে পাত্রীকে পাত্র অথবা পাত্রপক্ষ বিয়ের নিশ্চয়তা স্বরূপ এই নোলক দিয়ে থাকেন। তার নারীত্বের এক ধরনের স্বীকৃতি। নোলক নারী আগলে রাখে যতোটা না অলংকার হিসেবে তার চেয়ে বেশি পুরুষের উপযুক্ত হওয়ার গৌরব এবং পুরুষের অনুভব হিসেবে। দেখা যায় কঠিন অভাবে পড়ে সবকিছু বিকিয়ে দিলেও গ্রামবাংলার সে নারী তার নাকের নোলকটি আগলে রাখার চেষ্টা করে।

সেই নারী মা হলেন। হারালেন তার মহা মূল্যবান নোলক। তখন সন্তান দায়িত্ব নিলো তার মায়ের হারিয়ে যাওয়া নোলক খুঁজে বার করবার।

সন্তান তার মায়ের হারিয়ে যাওয়া নোলক খুঁজতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছে তার প্রাকৃতিক প্রাচুর্য। পাতার ফাঁকে হাজার হরিণের বাঁকানো মুখ। প্রকৃতির সারল্য এবং সুগন্ধের মতো উপঢৌকনের প্রস্তাব। প্রকৃতি তার অকৃত্রিম সারল্যে বলে দেয়-‘আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।

সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি নাতো !

ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো’

অন্যদিকে পাহাড়ও দেখায় তার আহার ভরা বুক।

নোলক কেউ ছিনিয়ে নিলে ফিরে পাবার যুদ্ধ করার একটি সুযোগ থাকে। আমরা সেই যুদ্ধ করেছি। বিজয়ও পেয়েছি।

বাস্তবতা বলছে নোলক এখন আর সেভাবে হারায়নি যেভাবে হারালে প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ করে ফেরত আনা যায়। নোলক হারিয়েছে আমাদেরই মাঝে, যেটা আরো ভয়ংকর।

………………………………………………………..

নোলক // আল মাহমুদ

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে

হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।

নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে ?

-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।

বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে

শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।

জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক

সবুজ বনের হরিণ টিয়ে করে রে ঝিকমিক।

বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,

আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।

কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন

আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।

সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি নাতো !

ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো

বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক

হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।

এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা

আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।

………………………………………………………..

আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছি, দূরে আমরা ইচ্ছে করে যাচ্ছি না-সরাচ্ছে পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র পারছে না আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করতে। পারছে না প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে। বরং তার অগণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রকাশ আমরা পাই যখন দেখি দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় দেয় মোবাইলে রিংটোন কি হবে সে বিষয়ে। তারা কেন জানবে না যে জোর করে বা আইন করে সংস্কৃতির চর্চা হয় না! ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ব্যক্তির কোন ভাষার গান ভালো লাগবে সেটা বোঝাই যায়। রুটি-রোজগারের প্রয়োজন মেটাতে বাংলার চাইতে ইংরেজিই ব্যক্তিকে বেশি সমর্থন দেয়, আমি ইংরেজি-নির্ভর হবো না কেন? পুরো পদ্ধতিটাই হয়ে পড়েছে গোলমেলে। আমি গরুকে ঘাস খাওয়াতে পারব না, খাওয়াতে পারব পানি; কিন্তু গরুর কাছে চাইব দুধ! তা কী করে হয়। সমস্যার মূলে না গেলে সমস্যার সমাধান করতে যে যাবে আল্টিমেটলি সমস্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সে-ই অবদান রেখে আসবে । এতে সংস্কৃতির অবস্থা এবং রাষ্ট্রের সর্বশেষ শক্তি প্রয়োগও দেখা যায়। এগুলো সবই আমাদের সংস্কৃতির করুণ পরিস্থিতিরই ইঙ্গিত দেয়।

নোলক খুঁজতে গিয়ে আল মাহমুদ যে বোয়াল মাছে ভরা নদী দেখিয়েছে, তা আর থাকছে? ৫৪টি অভিন্ন নদী প্রবাহ শুকিয়ে আসছে। আমরা সেটি নিয়ে কতটুকু ভাবি। আল মাহমুদ বোয়াল মাছ দেখিয়েছে যে নদীতে- এখন সেই নদীগুলোই হারিয়ে যাওয়ার পথে।

নোলক খুঁজতে খুঁজতে যে প্রাকৃতিক সম্পদ কবি দেখিয়েছেন এখন তার সব কিছুই হুমকির মুখে। পরিবেশবিদরা বারবার বলছেন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই মহা গুরুত্বপুর্ণ বিষয়টি রাষ্ট্র কতটুকু আমলে নিচ্ছে?

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। সামগ্রিকভাবে বাঁচার প্রয়ােজন হারাচ্ছে তার চ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ