শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

প্রধান পার্থক্য দিন আলোকিত এবং রাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন জেনে নেই দিন রা কেনো হয় আমরা সবাই জানি, পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিকে আহ্নিক গতি ( Diurnal Motion ) বলে । পৃথিবীর আহ্নিক গতি একেক জায়গায় একেক রকম । পৃথিবীপৃষ্ঠ পুরোপুরি গোল না হওয়ায় এর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমান নয় । তাই , সে কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সকল স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয় । দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল । পৃথিবীর নিজস্ব কোন আলো নেই । সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয় । আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীর যেদিক সূর্যের সামনে আসে সেদিক সূর্যের আলোতে আলোকিত হয় । তখন ঐ আলোকিত স্থানসমূহে দিন থাকে । আলোকিত স্থানের উল্টো দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর যেদিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে থাকে সেদিকটা অন্ধকার থাকে । সেখানে সূর্যের আলো পৌছায় না । এসব অন্ধকার স্থানে তখন রাত্রি থাকে । পৃথিবীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে আলোকিত দিকটা অন্ধকারে ও অন্ধকারের দিকটা সূর্যের দিকে চলে আসে। এর ফলে দিনরাত্রি পাল্টে যায় । অন্ধকার স্থানগুলো আলোকিত হওয়ার ফলে এসব স্থানে দিন হয় ও আলোকিত স্থান অন্ধকার হয়ে যায় বলে ঐসব স্থানে রাত হয় । এভাবে পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হচ্ছে পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

দিন-রাতে পরিবর্তনের উপর অনেকগুলো আয়াত রয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীমে। রাতের পর দিন আর দিনের পর রাত এটা একটা সাধারণ নিয়ম। অথচ এ সাধারণ ঘটনাটি সম্পর্কে এতগুলো আয়াত নাযিল হয়েছে- বিনা কারণে? শুধু তাই নয় আরো দাবি করা হয়েছে, দিন রাতের পরিবর্তন জ্ঞানীদের চিন্তার বিষয়। “নিশ্চয়ই দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য।” [সূরা ইউনূস ১০: ৬] “নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে যা মানুষের হিত সাধন করে তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে বারি বর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তাদের মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।” [সূরা বাকারাহ ২: ১৬৪] কুরআনের বিরুদ্ধবাদীদের এমনকি আমাদের অনেকে হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন দিন রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানীদের কি আসে যায়? কেনই বা দিন-রাত হয়? দিন-রাতের পরিমাণ চব্বিশ ঘণ্টার বেশি বা কম হলে এবং সারা পৃথিবীতে শুধু দিন অথবা শুধু রাত হলে কি হত? এসব প্রশ্নের জবাবই হচ্ছে এই প্রবন্ধ। প্রথমেই সৌর পরিবারের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরছি। আপনারা জানেন সূর্য ও তার এগারোটি গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহ নিয়ে মোটামুটি সূর্য পরিবার। এদের মধ্যে দিন-রাতের পার্থক্য অনেক। সূর্যের কাছের কোন গ্রহের তাপমাত্রা দূরের গ্রহের চেয়ে কম। নিম্নে দিনের স্থায়িত্বকাল ও তাপমাত্রা সহ বুধ, শুক্র, মঙ্গল ও চাঁদের একটা ছক দেয়া হল- যাতে সহজেই গ্রহসমূহের মধ্যে তাপের পার্থক্য কত ও কেন তা বুঝা যায়। গ্রহের নাম পৃথিবীর তুলনায় দিনের সায়িত্বকাল দিনের তাপ রাতের তাপ বুধ ২৯দিন ১২ ঘণ্টা ৩৫০ ডিগ্রী সে. -১৭০ ডিগ্রী সে. শুক্র ১২১ দিন ১২ ঘণ্টা ৪৮০ ডিগ্রী সে. ৩৩ ডিগ্রী সে. মঙ্গল ১২ ঘণ্টা ১৮.৫ -৩১ ডিগ্রী সে. -৮৬ ডিগ্রী সে. চাঁদ ২৭ দিন ৮ ঘণ্টা ১১৭ ডিগ্রী সে. -১৬৩ ডিগ্রী সে. উপরোক্ত ছক থেকে দেখা যায়, সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধে রাতের তাপমাত্রা -১৭০ ডিগ্রী সে.। এ তাপমাত্রা থেকেই বুঝা যায় এখানে রাতে প্রচণ্ড শীত। অন্যদিকে এর উল্টো পিঠে দিনে তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রী সে. হলেও তার চেয়ে দূরবর্তী শুক্র গ্রহে দিনের বেলায় (আলোকিত পিঠে) তাপমাত্রা ৪৮০ ডিগ্রী সে.। কিন্তু কেন? লক্ষ করে দেখুন শুক্রের দিনের পরিমাণ বুধের প্রায় চার গুণ অর্থাৎ শুক্র গ্রহ দূরে হলেও বুধের চেয়ে চারগুণ বেশী সময় সূর্যের আলো পায়। আবার শুক্র গ্রহ সূর্য থেকে বুধের চেয়ে দূরে বলে তাপ চারগুণ না হয়ে (৪৮০-৩৫০) বা ১৩০ ডিগ্রী সে. বেশি হয়েছে। কাজেই কোন গ্রহের তাপ নির্ভর করে সূর্য থেকে ঐ গ্রহের দূরত্ব ও কতক্ষণ সূর্যের আলো উক্ত গ্রহে স্থায়ী হয় অর্থাৎ দিনের দীর্ঘতার উপর। মঙ্গলে দিনের স্থায়িত্বকাল পৃথিবীর প্রায় সমান হওয়া সত্ত্বেও দূরত্বের জন্য এতে তাপের পরিমাণ দিনের বেলায় -৩১ ডিগ্রী সে. এবং রাতের বেলায় -৮৬ ডিগ্রী সে.। দিনের স্থায়িত্বকাল সমান হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গল গ্রহ মানুষ বসবাসের অনুপযোগী। বুধ, শুক্র ও মঙ্গল থেকেই প্রমাণ হচ্ছে পৃথিবীতে যেভাবে দিন-রাতের পরিবর্তন ও তাপমাত্রা রক্ষা করা হচ্ছে এটাই প্রাণীদের বাঁচার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। মহান আল্লাহ বলেন-“তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত্রি, তা থেকে আমি দিবালোক অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।” [সূরা ইয়াসীন৩৬: ৩৭] তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং দিবসকে করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে তার জন্য যে উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায়। [সূরা ফুরকান ২৫:৬২] আমাদের জানার বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। কুরআনে দিন-রাত সম্পর্কে যে কয়টি আয়াত এসেছে তাদের একটি বিশেষ দাবি হলো রাত মানুষের বিশ্রাম ও ঘুমের জন্য উপযোগী। দিনের বেলায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায় আর রাত্রিতে তা কমতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টা মোটেও ততটা স্বাভাবিক নয়। আমরা জানি পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরে দিন-রাতের পরিবর্তন ঘটায়। যদি এটি চাঁদের মতো আরো আস্তে আস্তে ঘুরতো তাহলে দিনের স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি পেত। ফলে দিনের বেলায় তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যেত। আবার যদি দিন রাতের পরিমাণ ২৪ ঘন্টার চেয়ে কম হতো তাহলে দিনের তাপমাত্রা অনেক কমে যেত। ফলে বসবাস করা অনেক কঠিন হয়ে পড়তো। এছাড়াও পৃথিবী যদি নিজ অক্ষের চারদিকে না ঘুরতো বা আস্তে আস্তে ঘুরতো তবে এর আলোকিত পৃষ্ঠে তাপ বৃদ্ধি পেতেই থাকতো এবং সূর্যের ক্রমাগত আলো ও উত্তাপে উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডলের সব কার্বনডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে সারা দুনিয়া অক্সিজেন দিয়ে ভরে ফেলতো। অধিক অক্সিজেনের জন্য প্রাণীকুল মৃত্যুমুখে পতিত হতো। অন্যদিকে পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠে দীর্ঘ রাত্রির ফলে সূর্যের আলোর অভাবে গাছ অক্সিজেন তৈরী করতে পারতো না। যার ফলে প্রাণীকূলের মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন উপায়ই থাকতো না। দীর্ঘ রাত বা দীর্ঘ দিন কোনটাই জীবন রক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে পারতো না। মহান আল্লাহ বলেন, “তিনিই যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত্রি দ্বারা দিবসকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিবস দ্বারা।” [সূরা যুমার ৩৯:৫] “তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে এরা একে অন্যকে দ্রুত অনুসরণ করে।” [সূরা আ’রাফ ৭: ৫৪] চাঁদ নিজ অক্ষের উপর ঘুরার সাথে সাথে পৃথিবীর চারদিকেও ঘুরছে। চাঁদের বেলায় এই দুটো ঘূর্ণায়নকাল এক সমান। অর্থাৎ নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে আর পৃথিবীর চারদিকে এক পাক দিতে একই সময় লাগে। এটা একটা আশ্চর্যজনক মিল। এ মিলের জন্য চাঁদের নিজ অক্ষের উপর পাক দেয়া আর পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা এমনভাবে হয় যে, চাঁদের এক পিঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে। পৃথিবী থেকে কখনো অপর পৃষ্ঠ দেখা যাবে না। চাঁদের মতো পৃথিবীও যদি সূর্যের দিকে আজীবন একই দিকে মুখ করে ঘুরতো তাহলে একদিকে হতো চিরদিনের জন্য গরম আর গরম আর অন্যদিক হতো অন্ধকার রাত্রি এবং ঠাণ্ডা আর ঠাণ্ডা। “বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ আছে, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিবসকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করেন আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ আছে কি? যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে। যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পারো? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না?” [সূরা কাসাস ২৮:৭১-৭২] আবার পৃথিবীর যেদিকে সূর্য আছে তার অপরদিকে যদি আরও একটি সূর্য থাকতো তাহলে পৃথিবী যেভাবেই ঘুরতো না কেন সবসময়ই পৃথিবীর সম্পূর্ণ পৃষ্ঠ থাকতো আলোকিত এবং গরম আর গরম। অতি শীত ও অতি গরম এ উভয় অবস্থাতেই পৃথিবীতে কোন জীবজন্তর অবস্থান করা সম্ভব হতো না। যেমন, চাঁদে কোন দিনই মানুষের বসবাস করা সম্ভব হবে না। কারণ একেতো ওখানে বাতাস নেই অধিকন্তু চাঁদের সূর্যের দিকের অংশে তাপমাত্রা ১১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর রাতের অংশের তাপমাত্রা -১৬৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অতএব এক পৃষ্ঠে অতি গরম আর অন্য পৃষ্ঠে ঠাণ্ডা বিধায় মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। প্রশ্ন উঠতে পারে নভোচারীরা কিভাবে চাঁদে ঘুরে এলো? নভোচারীরা যে পোষাক পরে চাঁদে ভ্রমণ করেন তা চাঁদের আবহাওয়ায় ক্ষতি হতে পারে না। এই ধরনের পোষাক পরে মানুষ অল্প কিছুদিন থাকতে পারে, কিন্তু বেশিদিন থাকা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে অক্সিজেন, খাওয়-দাওয়া, টয়লেট সবকিছুর সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। আর বর্তমানে এর মূল্য ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা)। চাঁদে বসে এই পোশাক পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। পরিবর্তন করতে গেলেই মারা যাবে। কোন গ্রহের দু’পাশে দুটি বা দু’য়ের অধিক সূর্য থাকলে তবে সে গ্রহেও কোনদিনই রাত্রি হবে না। আমাদের পৃথিবী একটি গ্রহ। এ গ্রহের মতো অনেক গ্রহ আছে যেখানে কোন রাত্রি নেই। এমনি একটি উদাহরণ হলো ইবঃধপুমহর যার দু’পাশে দুটি সূর্য এবং অষঢ়যধ পবহঃধঁৎর যার পাশে সূর্যের সংখ্যা ৩টি। অতএব পৃথিবী যদি উপরোক্ত অবস্থায় পতিত হতো তাহলে আমাদের অবস্থা কি হতো, একটু ভেবে দেখবেন কি? “আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী, আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি করেছেন সুন্দর এবং তোমাদেরকে দান করেছেন উৎকৃষ্ট রিযিক। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। জগতসমূহের প্রতিপালক। জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ কত মহান!” [সূরা গাফির:৬৪] “তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে, আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন।” [সূরা নাহল:১২] “আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নাই। এ এক মহাসাফল্য।” [সূরা ইউনুস:৬৪]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ