অনেক মূর্খ আলেম সমাজে শোনা যায় যে আল্লাহর কালামের তাবিজ ব্যবহার নাকি শিরক। নাউজুবিল্লাহ।
ইসলামে কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ
১/কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক
দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল
বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু
এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত
২/ এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম,
কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত
৩/তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত
তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার
ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ
জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম
ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।
৪/যে কালামের অর্থ জানা যায়
না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।
৫/আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায়
মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম
এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত,
দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক
বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কেননা এসব
তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার
মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত
ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত
ঔষধকে মনে করলে ঔষধ সেবনও শিরক ও
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দলিল
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺷُﻌَﻴْﺐٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ -
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺰَﻉِ ﻛَﻠِﻤَﺎﺕٍ « ﺃَﻋُﻮﺫُ
ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ ﻣِﻦْ ﻏَﻀَﺒِﻪِ ﻭَﺷَﺮِّ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻭَﻣِﻦْ ﻫَﻤَﺰَﺍﺕِ
ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻀُﺮُﻭﻥِ » . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮٍﻭ
ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻦَّ ﻣَﻦْ ﻋَﻘَﻞَ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻴﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻘِﻞْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﻓَﺄَﻋْﻠَﻘَﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও
তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন
যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের
ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ ﻣِﻦْ ﻏَﻀَﺒِﻪِ ﻭَﺷَﺮِّ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻭَﻣِﻦْ ﻫَﻤَﺰَﺍﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﺃَﻥْ
দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের
তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের
গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}
এ হাদীস স্পষ্টভাষায় উল্লেখ
করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ বিন আমর
বিন আস রাঃ তাঁর অবুঝ সন্তানদের জন্য
তাবীজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন।
যারা বলেন যে, সকল তাবিজই শিরক,
তাহলে আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস
যে সব হাদীসে তাবীজকে হারাম
শিরক বলা হয়েছে এর জবাব কি?
হাদীস দেখেই ফাতওয়া দেয়া যায়
সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা থাকতে হয়। তাবীজ
কবচ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত
হাদীসে সেসব তাবীজকে নিষিদ্ধ
কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাতো আমরা আগেই উল্লেখ করেছি।
নিষিদ্ধতার হাদীসে কেবল সেসবই
উদ্দেশ্য। এ কারণেই আব্দুল্লাহ বিন আমর
বিন আস রাঃ তার সন্তানদের তাবিজ
দিতেন। যাতে উল্লেখিত শর্তের
আসকালানী রহঃ বুখারী শরীফের
ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন-
ﻭﺍﻟﺘﻤﺎﺋﻢ ﺟﻤﻊ ﺗﻤﻴﻤﺔ ﻭﻫﻲ ﺧﺮﺯ ﺃﻭ ﻗﻼﺩﺓ ﺗﻌﻠﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺃﺱ
ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺘﻘﺪﻭﻥ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻳﺪﻓﻊ ﺍﻵﻓﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﻮﻟﺔ
ﺑﻜﺴﺮ ﺍﻟﻤﺜﻨﺎﺓ ﻭﻓﺘﺢ ﺍﻟﻮﺍﻭ ﻭﺍﻟﻼﻡ ﻣﺨﻔﻔﺎ ﺷﻲﺀ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ
ﺗﺠﻠﺐ ﺑﻪ ﻣﺤﺒﺔ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﻭﻫﻮ ﺿﺮﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻛﺎﻥ
ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻷﻧﻬﻢ ﺃﺭﺍﺩﻭﺍ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻤﻀﺎﺭ ﻭﺟﻠﺐ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻊ ﻣﻦ
ﻋﻨﺪ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺑﺄﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ
তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের
বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য।
জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে,
এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়,
মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর
মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই
একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত।
ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও
উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত
হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর
নাম বা কালাম থাকে। {ফাতহুল
বারী-১/১৬৬, ঝারফুক অধ্যায়}
মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন-
ﺇﺫﺍ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺸﺮﺓ ﻭﻫﻲ ﻛﺎﻟﺘﻌﻮﻳﺬ ﻭﺍﻟﺮﻗﻴﺔ ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻀﻤﻴﺮ
ﺍﻟﺒﺎﺭﺯ ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻱ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻫﻮ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺍﻟﻨﻮﻉ
ﺍﻟﺬﻱ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺎﻟﺠﻮﻥ ﺑﻪ ﻭﻳﻌﺘﻘﺪﻭﻥ ﻓﻴﻪ ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺎ
ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺎﺕ ﺍﻟﻘﺮﺁﻧﻴﺔ ﻭﺍﻷﺳﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻔﺎﺕ ﺍﻟﺮﺑﺎﻧﻴﺔ
ﻭﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﺄﺛﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺒﻮﻳﺔ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﻞ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ
ﺗﻌﻮﻳﺬﺍ ﺃﻭ ﺭﻗﻴﺔ ﺃﻭ ﻧﺸﺮﺓ ﻭﺃﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﻟﻐﺔ ﺍﻟﻌﺒﺮﺍﻧﻴﺔ ﻭﻧﺤﻮﻫﺎ
যদি তাবীজের মত কাগজ লিখা হয়।
বানী “এটি শয়তানী কর্ম” এর
জাহেলী যুগে যদ্বারা চিকিৎসা করা হতো ও
যার উপর নির্ভর করা হতো। আর
যা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম,
দুআয়ে মাসুরা হয়, তাহলে কোন
সমস্যা নেই। বরং এটি মুস্তাহাব। চাই
সেটি তাবীজ হোক, বা ঝারফুক হোক
বা কাগজে লিখা হোক। আর যেসব
ইবরানী ও অন্যান্য ভাষায় লিখা হয়
তা নিষিদ্ধ। কারণ তাতে শিরকের
ﺇﻧﻤﺎ ﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﻌﻮﺫﺓ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﺑﻐﻴﺮ ﻟﺴﺎﻥ ﺍﻟﻌﺮﺏ ، ﻭﻻ ﻳﺪﺭﻯ ﻣﺎ
ﻫﻮ ﻭﻟﻌﻠﻪ ﻳﺪﺧﻠﻪ ﺳﺤﺮ ﺃﻭ ﻛﻔﺮ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ، ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ
ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺃﻭ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ
যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়,
বুঝা যায় না তাতে কি আছে?
কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব
তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয়
তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।
কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মতামত
নামধারী ভাইদের কাছেও গ্রহণযোগ্য
ﻳﺠﻮﺯ ﺃﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻟﻠﻤﺼﺎﺏ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺮﺿﻰ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻦ
ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺑﺎﻟﻤﺪﺍﺩ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﻭﻳﻐﺴﻞ ﻭﻳﺴﻘﻰ ﻛﻤﺎ ﻧﺺ
বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য
কারি দ্বারা আল্লাহর কিতাব,
হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) কাগজের টুকরায়
লিখে দিতেন,তা সন্তানসম্ভবা নারীদের
{ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৯/৬৪}
আল্লামা শাওকানী রহঃ নাইলুল
অধ্যায়ে স্পষ্ট ভাষায় উপরোক্ত শর্ত
সকল প্রকার তাবীজ নাজায়িজ
হলে ঝাড়ফুঁকও না জায়েজ হয়
কবচকে আমভাবে না জায়িজ বলার জন্য
যেসব হাদীস দলিল হিসেবে উপস্থাপন
ﺇﻥ ﺍﻟﺮﻗﻰ ﻭﺍﻟﺘﻤﺎﺋﻢ ﻭﺍﻟﺘﻮﻟﺔ ﺷﺮﻙ
অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও জাদু শিরক।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৮৬}
এ হাদীসে ঝাড়ফুঁককেও শিরক
বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তাহলে কি সকল প্রকার ঝাড়ফুঁক শিরক ও
হারাম? আমাদের কথিত আহলে হাদীস
ভাইয়েরাও তা স্বীকার করেন যে,
কুরআন ও দুআয়ে মাসুরা দ্বারা ঝাড়ফুঁক
জায়েজ। এছাড়া হলে নাজায়িজ।
তাহলে এ হাদীস দিয়ে তাবীজ
নিষিদ্ধের দলিল দেয়া কি ঠিক হবে?
ব্যখ্যা দেয়া হয় যে, এখানে সর্বপ্রকার
নিষিদ্ধতার হাদীসে সব ধরণের
তাবীজ নিষিদ্ধের কথা উদ্দেশ্য নয়।
যেমনটি বিজ্ঞ আলেমগণের মতমত
উল্লেখ পূর্বক ইতোপূর্বে উল্লেখ
ভাইয়েরা সকল প্রকার তাবীজ হারাম
সাব্যস্ত করার জন্য কিছু হাস্যকর
দলিলের অবতারণা করে থাকেন। তার
মাঝে একটি তারা কুরআন ও হাদীসের
সেসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন
করে থাকেন, যাতে তাওয়াক্কুল
তথা ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপর
করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে সব কিছু
করার ক্ষমতা আল্লাহর উপরই ন্যস্ত
এসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন
করে তারা বলতে চান যে, তাবীজের
উপর ভরসা করা মানে আল্লাহর
সাথে শিরক করা তাই তা হারাম।
কিন্তু আমাদের কথিত আহলে হাদীস
ভাইয়েরা ভরসা করা ও ওসীলা গ্রহণের
বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছেন মূলত।
ভরসা করে মুক্তি বা আরোগ্য
কামনা শিরক এর মাঝে কোন দ্বিমত
নেই। কিন্তু মূল ভরসা আল্লাহর উপর
রেখে ওসীলা গ্রহণ করা জায়েজ
এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা। যদি বলা হয়
যে, ওসীলা গ্রহণ জায়েজ নয়।
খাওয়া কি করে জায়েজ হয়?
এখানে যদি বলেন যে, ভরসা আল্লাহর
উপর, আর বড়ি বা চিকিৎসা কেবল
ওসীলা মাত্র, তাই তা নাজায়েজ নয়।
তাহলে তাবীজের ক্ষেত্রে কেন এ
ডাক্তারী বড়িকে আরোগ্যের মূল
কারণ সাব্যস্ত না করে আল্লাহর উপর
ভরসা করে ওসীলা হিসেবে যেমন
শর্তসাপেক্ষে তাবীজ কবচও জায়েজ।
না জায়েজের কোন কারণ নেই।