মানবদেহে জিংক এর কাজঃ-
১। বিপাকীয় কাজঃ
২০০ এরও বেশি এনজাইমের কাজ করতে জিংক অংশ গ্রহণ করে। এছাড়াও দেহের আরও অনেক বিপাকীয় কাজে জিংক অংশ নেয়।
শর্করা ভাঙনে ভূমিকা রয়েছে, এছাড়া দেহ কোষের বৃদ্ধি, জনন এসবেও সহযোগীতা করে।
২। রোগ-প্রতিরোধেঃ
জিংক এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এন্টিঅক্সিডেন্ট-প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়া
রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জিংক এর অভাব রয়েছে এমন প্রাণি সহজে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
৩। রুচি বাড়াতেঃ
লালা গ্রন্থির জিংক নির্ভর পলিপেটাইড, গাসটিন এর মাধ্যমেই স্বাদের অনুভূতি পাওয়া যায়।
কাজেই যদি জিংক এর অভাব থাকে তবে স্বাদ বোঝার ক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ রুচি কমে যায়।
৪। বংশবৃদ্ধিঃ
পূর্ণ যৌন পরিপক্কতা এবং বংশবৃদ্ধির সক্ষমতা অর্জনের জন্য জিংক অত্যাবশ্যক।
জিংক এর অভাবে পোল্ট্রীতে ডিমের হ্যাচাবিলিটি কমে যায়।
জিংক ডিএনএ ও আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের একটি আবশ্যক উপাদান ।
কিছু হরমোন যেমন: গ্লুকাগন, ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন এবং সেক্স হরমোন এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫। চর্ম ও হাঁড়ের বৃদ্ধিঃ
জিংক এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা পোল্ট্রীর দৈহিক বৃদ্ধি, হাঁড়ের বৃদ্ধি, পালক বিন্যাস, এনজাইমের গঠন ও তার কাজ এবং রুচি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভ্রুণের বৃদ্ধিকালিন সময়ে কঙ্কাল-এর বৃদ্ধির জন্য
কেরাটিন তৈরি ও তার পরিপক্কতা, ক্ষত সারানো, আবরনি কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজের দ্বারা জিংক ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।
৬। তাপ জনিত ধকল প্রতিরেধে
তাপ জনিত ধকলে প্রাণির উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। দেখা গেছে যদি খাদ্য তালিকায জিংক এর সরবরাহ থাকে তবে তা এই ধকল প্রতিরোধে সাহায্য করে।
# অভাব জনিত লক্ষণঃ
জিংক-এর অভাব জনিত লক্ষণ
বীর্যের গুণগত মান খারাপ হওয়া।
ছোট বাচ্চা খর্বকায় হওয়া, পায়ের হাড় খাটো ও মোটা হওয়া, hock joint এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ত্বক মোটা হওয়া বিশেষত পায়ের চামড়া, দূর্বল পালক বিন্যাস, পুষ্টি উপাদানের ব্যবহার হ্রাস পাওয়া, রুচি কমে যাওয়া এবং তীব্র অভাবে মৃত্যু পর্য়ন্ত হতে পারে।
ডিম পাড়া মুরগিতে উৎপাদন কমে যাওয়া।
অস্বাভাবিক অস্থি গঠন যুক্ত বাচ্চা হওয়া।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর কার্যকারিতাঃ
অপ্রচলিত হলেও জন্ডিস হলে টোটকা ঔষধ হিসেবে লবণ ছাড়া পান্তা ভাত দিনে তিনবার শুধু কাঁচা পেঁয়াজসহ আহার করলে এবং বিশ্রামে থাকলে এক দুই সপ্তাহের মধ্যেই জন্ডিসের প্রকোপ বহুলাংশে কমে যায় এবং তিন সপ্তাহের মধ্যেই নিমূর্ল হয়।
এই সব অতীব জরুরী বি-ভিটামিন খাদ্য-উপাদনে থেকে শরীর সংগ্রহ করে থাকে। উল্লেখযোগ্য খাদ্যদ্রব্য যেমন - ভূষিসমেত গমের আটা, ঢেঁকিছাঁটা অথবা লাল চাল, খোঁসাসহ ডাল, মটরশুটি, দুধ, ডিম, কলা, আপেল, পনির, টমেটো, বাদাম, সূর্য্যমূখীর বীজ, কলিজা, সয়াবিন দানা ইত্যাদি। এছাড়া অতি সহজেই এবং কম খরচে নি¤œ বর্ণিত পদ্ধতিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স তৈরী করে নিয়মিত গ্রহন করলে বি-ভিটামিনের প্রতিদিনের চাহিদা নিশ্চিত করা যায়।
বি-ভিটামিন ঘরে তৈরীর সহজ উপায়ঃ
ক) সন্ধ্যায় দেশী লালচালের (ঢেঁকি ছাঁটা হলে উত্তম) মাড় না ফেলা ভাত পরিমাণ মত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সারারাত আস্তে আস্তে মজে যাবে এবং তৈরী হয়ে যাবে বি-ভিটামিন সমৃদ্ধ জীবন্ত খাবার। গ্রাম বাংলায় এর নাম পান্তাভাত। শহুরে মানুষেরা ঘটা করে পহেলা বৈশাখে এটা শখ করে ইলিশমাছ ভাজা সহকারে খেয়ে থাকেন। সকালের নাস্তায় লবণছাড়া এই পান্তাভাত পানি সমেত কাঁচা পেয়াজ এবং মরিচ সহ খেলেই পান্তাভাতে তৈরী হওয়া ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীর সম্পূর্ণ গ্রহণ করতে পারে, যা ল্যাবের তৈরী করা সিনথেটিক বি-কমপ্লেক্স পারেনা।
খ) লবণ ছাড়া ভূষিসমেত গমের আটাঃ মেখে এক/দু ঘন্টা ঢেকে রেখে রুটি বানালে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স পাওয়া যাবে।
আমরা জেনেছি বি-ভিটামিন গুলি দলবদ্ধ হয়ে থাকে এবং কাজও করে দলবদ্ধভাবে।
এই অতীব জরুরী ভিটামিনের অভাব হলে প্রথম উপসর্গ যা দেখা দেয় তাহলো- জিহ্বার উপর ছোট ছোট স্বাদ কুড়ির কার্য্যকারিতা কমে বা নষ্ট হয়ে যাবে ফলে কোন খাবারের আসল স্বাদ পাওয়া যায় না। তখনই বুঝতে হবে বি-ভিটামিনের অভাব হয়েছে। দেহের সিস্টেমের অবনতি হবার পূর্বেই পান্তাভাত অথবা পান্তাভাতের পানি এবং পূর্বের রাতের মাখান আঁটার রুটি খাওয়া শুরু করলেই বি-ভিটামিনের অভাব দূর হবে, এবং সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে। এছাড়া আহারে প্রচুর পরিমাণে সালাড জাতীয় সবজি যেমন গাঁজর, পেয়াজ, মুলা, রসুন, কাঁচা মরিচ, কাঁচা গোল আলু (খোসা সহ) রাখতে হবে।
এই বি-ভিটামিনের আরো একটি বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট হলো এরা দেহে ২৪ঘন্টার বেশী অবস্থান করেনা। কোন সময় এই ভিটামিন বেশী পরিমাণে দেহে প্রবেশ করলেও শরীরে যতটুকু পরিমাণ দরকার ততটুকুই শরীর গ্রহণ করবে বাড়তি সবটুকু প্রস্্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। অতএব প্রতিদিনই বি-ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মাত্রায় বজায় রাখতে হবে।