১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এলে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের জন্য এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জ এ দাবীর যৌক্তিকতা অনুভব করে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯১২ সালের ২৭মে বেঙ্গল গভর্নমেন্ট ব্যারিষ্টার রবার্ট নাথানকে সভাপতি করে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে। এই কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল: (এক) বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত। (দুই) এটি হবে আবাসিক ও শিক্ষাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়। (তিন) ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণা - এর শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে। বড়লাট লর্ডচেমর্সফোর্ড কর্তৃক ১৯১৭ সালের ৬ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মসূচী নির্ধারণের জন্য লিডস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এম.ই. স্যাডলার এর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিশন “কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন” নামে পরিচিত। এ কমিশনের দুইটি সুপারিশ উল্লেখযোগ্য: (এক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিকরণ ক্ষমতা থাকবে না। এটি হবে একমাত্র বিশিষ্ট শিক্ষাদানকারী শিক্ষায়তন। (দুই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্ত্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান। কমিশনের সুপারিশমতে বিশ্ববিদ্যাল হবে আবাসিক হল কেন্দ্রিক। এর ফলে ছাত্রদের সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটবে। প্রত্যেক শিক্ষক এক একটি হলের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে ছাত্রদেরকে খুব কাছাকাছি থেকে শিক্ষা প্রদান করবেন। প্রত্যেক হলে একজন প্রভোষ্টের তত্ত্বাবধানে ৪০০ ছাত্র থাকবে। প্রতিটি হল ৪ বা তার বেশী হাউজে বিভক্ত করা হবে। যার প্রত্যেকটির দায়িত্বে থাকবেন এক একজন হাউজ টিউটর। প্রতি হলে টিউটোরিয়েল ক্লাশ, কমনরুম, লাইব্রেরী এবং লেকচার থিয়েটার থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট এর ১৯ আর্টিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসূচী গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণের জন্য কোর্ট, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, একাডেমিক ফ্যাকাল্টি Authorities হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯২১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, একাডেমিক কাউন্সিল এবং অনুষদসমূহ সর্বময় কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলার গভর্নর পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের প্রধান ব্যক্তি। কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে চ্যান্সেলর কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উপাচার্য শিক্ষা নির্বাহী প্রধান। চ্যান্সেলর কর্তৃক কোষাধ্যক্ষ (অবৈতনিক) নিযুক্ত হন। কোষাধ্যক্ষ, পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট ও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একজন সদস্য। রেজিষ্ট্রার, কোর্ট ও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য। ১৯২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় আইন সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৮ মার্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ্যাক্ট – এ পরিণত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক “দি ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট” অনুমোদন লাভ করে। এর আওতায় ঢাকায় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। এই আইনের বলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ দেশের ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বিশ্ববাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। শুধু শিক্ষা, গবেষণা, ক্রীড়া, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে এই বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। শিক্ষা বিস্তারের প্রায় সকল শাখায় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পদচারণা এবং উজ্জ্বল উপস্থিতি প্রনিধানযোগ্য।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ