শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sanjoyrand1

Call
image
 

দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন অনেক কিছুই ব্যবহার করি যেগুলোর উদ্ভাবনের পেছনে আছে বেশ মজার কোনো কাহিনী। তেমনি একটি জিনিস হলো ‘ম্যাচের কাঠি’। এই অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের পেছনের কাহিনীটি নিয়েই এই লেখা।

বর্তমানে আমরা যেসব ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করি এর উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেয়া যায় জন ওয়াকারকে (১৭৮১-১৮৫৯)। এই ইংরেজ ভদ্রলোক প্রথমে সার্জন অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন যে মানুষের অপারেশনের এসব ব্যাপার-স্যাপার তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না।
তাই ওয়াকার তার চলার পথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন, ঝুঁকে পড়লেন রসায়নের দিকে। সহজে আগুন জ্বালানোর একটা কৌশল বের করতে তিনি বেশ উৎসাহী হয়ে উঠলেন। আর এর পেছনে যুক্তিও ছিলো। তখন পর্যন্ত আগুন জ্বালানোর জন্য এমন কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি যার দ্বারা ঘর্ষণের ফলে আগুন জ্বালিয়ে সাথে সাথেই সেটিকে ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকা অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যাবে (ম্যাচের কাঠি আর এর মাথার বারুদের সম্পর্কের মতো)।

তো যা-ই হোক, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন জন ওয়াকার। একদিন তিনি তার গবেষণাগারে অ্যান্টিমনির সালফাইড, পটাশের ক্লোরেট এবং আঠার মিশ্রণ নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। এই মিশ্রণটিকে তিনি সালফারের প্রলেপ দেয়া একটি কাঠের টুকরা দিয়ে নাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত একসময় এই কাঠের টুকরাটির সাথে তার ঘরের ফায়ারপ্লেসের একটি ঘর্ষণ হয় আর সাথে সাথেই জ্বলে উঠে আগুন!
জন ওয়াকার তখনই বুঝতে পারলেন যে এতদিন পর অবশেষে তার স্বপ্ন সত্যি হলো। তাই দেরি না করে তিনি তার নতুন উদ্ভাবিত আগুন জ্বালানোর এই কৌশলটিকে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

image

ওয়াকার যে ম্যাচবাক্সগুলো বাজারজাত করতেন তার প্রতিটিতে পঞ্চাশটি করে ম্যাচের কাঠি থাকতো, প্রতিটি বক্সের দাম ছিলো ১ শিলিং করে। প্রতিটি কাঠিতেই সালফারের আস্তরণ দেয়া হতো। আর একেবারে মাথার দিকে অ্যান্টিমনির সালফাইড, পটাশের ক্লোরেট এবং আঠার মিশ্রণের একটি প্রলেপ দেয়া হতো। এই সালফারই আসলে আগুণকে কাঠের সংস্পর্শে আনতে সাহায্য করতো। সেই সাথে প্রতি বক্সের সাথে দেয়া হতো একটি করে শিরীষ কাগজ যার উপর ঘষে আগুন জ্বালানো হতো।
ইংরেজ উদ্ভাবক ও আর্টিলারি রকেটের গবেষণায় অগ্রদূত স্যার উইলিয়াম কনগ্রেভ-এর সম্মানার্থে জন ওয়াকার তার এই ম্যাচের নাম দিয়েছিলেন – ‘Congreves’।
সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই জন ওয়াকার তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার কখনো নিজের নামে প্যাটেন্ট করেননি।
প্রায় আড়াই পর, ১৮২৯ সালে, স্যার আইজ্যাক হোলডেনও আগুন জ্বালানোর একই কৌশল উদ্ভাবন করেন, তবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। ততদিনে অবশ্য জন ওয়াকার তার Congreves ম্যাচ ২৫০ বক্সের মতো বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যার প্রথমটি ছিলো ১৮২৭ সালের ৭ এপ্রিলে।

image

তবে দুঃখের বিষয় হলো, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনটির জন্য জন ওয়াকার তার জীবদ্দশায় কখনো তেমন কোনো স্বীকৃতি পাননি। অবশেষে একটা সময় তিনি ঠিকই স্বীকৃতি পান। কিন্তু ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে, জন ওয়াকার চলে গেছেন এই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে...
 

 

 

 

তথ্যসুত্রঃ ১। www.omgfacts.com
২। http://en.wikipedia.org

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ