শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mhf312rand1

Call

মা বোনদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে তাগিদ বা বাধ্যতামূলক করা হয় নাই। তবে তাদের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। এটা তাদের অধিকার। রাসূল (সঃ)-এর পেছনে মহিলারা নামাজ আদায় করেছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call


জবাব:

এক–সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, হাদিসে অবশ্যই মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ إِذَا اسْتَأْذَنَكُمْ نِسَاؤُكُمْ بِاللَّيْلِ إِلَى الْمَسْجِدِ فَأْذَنُوا لَهُنَّ

‘তোমাদের কারও স্ত্রী যদি (জামাতে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে আসতে) অনুমতি চায়, তবে সে যেনো তাকে বাধা না দেয়।’ (বুখারী ৮৩১ ইফা)

তবে বিভিন্ন হাদিসে পরিস্কারভাবে এও বলা হয়েছে, মসজিদে যাওয়া তাদের জন্য জরুরি নয় ;বরং  মসজিদ অপেক্ষা ঘরে নামাজ আদায় করা তাদের জন্য উত্তম। যেমন, হযরত উম্মে  হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন,

قد علمت أنك تحبين الصلاة معي وصلاتك في بيتك خير لك من صلاتك في حجرتك وصلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك وصلاتك في دارك خير لك من صلاتك في مسجد قومك وصلاتك في مسجد قومك خير لك من صلاتك في مسجدي ، قال : فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها وأظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز وجل

‘আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার  বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫)

দুই–সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, লক্ষ্য করুন, নবী-যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার তাগিদ তো দূরের কথা, উৎসাহও ছিল না; বরং কেবল অনুমতি ছিল। উৎসাহ কিংবা তাগিদ ছিল মর্মে কোনো একটি বর্ণনাও কেউ পেশ করতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, অনুমতিই বা কেন ছিল? এর জবাবে –

১. ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামাতের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানগণের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। (মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী)

২. ইমাম আইনী রহ. বলেন, সে যুগ ফিতনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত।

৩. মূলতঃ মহিলাদের মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন করাকেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী শারীফের ৯১৫ নং হাদিসের বর্ণনা দ্বারা। উম্মে আতিয়া রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদেরকেও নিয়ে ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পিছনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের দোয়া করতাম।’

এ হাদিসে এবং অন্যান্য আরও হাদিসে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ শরীয়তে ঋতুবর্তী মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাজের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতো না। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাজসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তালীম গ্রহন করা। তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাযিল হতো তা যেন পুরুষ মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে সে কারণে তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল।

এই অনুমতিটাও ছিল অনেক কঠোর শর্ত সাপেক্ষে। যথা-(ক) পরিপূর্ণ পর্দাসহ গোটা শরীর আবৃত অবস্থায় বের হবে। (খ) ঝনঝনানিপূর্ণ অলঙ্কার পরে বের হতে পারবে না। (গ) সাজগোজ ও সুগন্ধি সহ বের হতে পারবে না। (ঘ) অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না। (ঙ) পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে রাস্তার একপাশ হয়ে চলবে। (চ) অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। (ছ) সবচে’ বড় বিষয় হল, তাদের এ বের হওয়াটা ফেতনার কারণ হতে পারবে না। (আবু দাউদ হাদিস নং ৫৬৫, বযলুল মাজহূদ ৪/১৬১)

তিন–প্রশ্নকারী ভাই,আজও এসব শর্ত পাওয়া গেলে মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। কিন্তু নবী-যুগের পর যখন উক্ত শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে তখন সাহবায়ে কেরাম তা উপলব্ধি করতে পেরে মহিলাদের মসজিদে গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি  করে দিয়েছেন। আর এটা তো স্বতসিদ্ধ কথা যে, নবীজির কথা কিংবা  চাহিদা সাহবায়ে কেরামের চাইতে বেশি কেউ বুঝেছে বলে দাবি করা কিংবা তাদেরকে আদর্শ মনে না করা নিতান্ত মূর্খতা বৈ কিছু নয়।

নিম্নে সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যসমূহ থেকে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল-

১.আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 لو أدرك رسول الله صلى الله عليه وسلم ما أحدث النساء لمنعهن كما منعت نساء بني إسرائيل  ‘যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে।’ (সহীহ বুখারী ১/২৯৬)

. আবু আমর শাইবানি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি.কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আলমুজামুল কাবির ৯৪৭৫, মজমাউযযাওয়াইদ ২/৩৫) আল্লামা হাইছামি বলেন, এই রেওয়ায়তের সকল বর্ণনা কারী সিকাহ-নির্ভরযোগ্য।

. জবাইর ইবন আওয়াম রাযি. তাঁর পরিবারের কোন নারিকে ঈদের জামাতে যেতে দিতেন না। ( মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ ৫৮৪৬)

চার–সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, এবার আপনিই বলুন, মহিলারা সবখানে যেতে পারলে মসজিদে কেন পারবে না– একথাটা উদ্দাম অশ্লীলতার এই যুগে কতটা যৌক্তিক! তাহলে কি আমরা সাহাবায়ে কেরামের চাইতেও দীন বেশি বুঝে ফেলেছি! নাউজুবিল্লাহ। আয়েশা রাযি. তাঁর যুগের নারীদের দেখে বলেছিলেন,’যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে।’(সহীহ বুখারী ১/২৯৬) তাহলে অশ্লীলতায় থৈ থৈ করা এই সমাজের নারীদের দেখলে তিনি কী বলতেন! দীনের দাওয়াত, দাওয়াতের হেকমত ও প্রয়োজনীয়তা তিনি কিংবা অন্যান্য সাহাবা কি এই যুগের কথিত দীন-দরদীর থেকেও কম বুঝেছেন! নাউজুবিল্লাহ।

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী

সূত্রঃ http://quranerjyoti.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ