আমার বিয়ে হয়েছে ৯ বছর আমার স্বামী বিদেশে গিয়ে আরো একটি বিয়ে করেছে একটা বিদেশি মেয়েকে এখন আমি এর প্রতিকার কিভাবে করবো? আমার স্বামীকে কিভাবে দেশে আনবো?         
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে। ইসলামী আইনে বলা হয়েছে, কেউ যখন বস্তুগত দিক দিয়ে এবং স্নেহ ভালবাসার দিক দিয়ে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমান আচরণ করতে পারবে কেবল মাত্র তখনই সে চারটি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারবে।

চাইলেই কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অনুসরণ না করলে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে না। যদি কেউ করে তাহলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। অনেকেই মনে করেন প্রথম স্ত্রী অনুমতি দিলেই দ্বিতীয় বিবাহ করা যায়। ধারণাটি ভুল। দ্বিতীয় বিবাহতে অবশ্যই সালিশি পরিষদের অনুমতি প্রয়োজন। সেইসঙ্গে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি এবং তার সঙ্গে যাবতীয় দেনা-পাওনা সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

***********মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১

আইনের ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ২৫ টাকা ফি দিয়ে সাদা কাগজে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সকল বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো 

যথাথ ১) বর্তমান স্ত্রীর বন্ধাত্য, ২) দৈহিক দৌর্বল্য, ৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪) দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য কোন উম্মত্ততা।

======== বিস্তারিত আলোচনা ============

প্রথমত: (কোরানের আলোকে) -- ‘আর তোমরা যদি আশংকা কর যে পিতৃহীনদের ওপর সুবিচার করতে পারবে না তবে বিয়ে করবে (স্বাধীনা) নারীদের মধ্যে, যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে, বা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে। এভাবেই তোমাদের পক্ষপাতিত্ত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি। আর তোমরা নারীদের তাদের দেনমোহর খুশি মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশি মনে তার কিছু ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।‌’¾ ৪ 

______(সুরা নিসা : আয়াত-৩-৪)

সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, একমাত্র এতিমদের স্বার্থ রক্ষার্থেই একাধিক বিয়ের অনুমতি ইসলাম প্রদান করেছে। তাছাড়া একাধিক স্ত্রী বিদ্যমান থাকলে তাদের মধ্যে অবশ্যই সমান আচরণ ও ব্যবহার প্রদর্শন করতে হবে। মানুষের স্নেহ ও ভালবাসার পরিমানের উপর কারো হাত বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি লাগামহীন গতিতে ভারসাম্যহীনভাবে বিশেষ কারো প্রতি প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। আর এ কারণেই কোরআন মজিদে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বহু বিবাহকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কুরআন মজিদে যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা বহু বিবাহকে নিষেধ করারই শামিল। 

________(আমীর আলী, দি স্পিরিট অব ইসলাম, ২২৯)

দ্বিতীয়ত: = ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ ধারায় বহুবিবাহকে শর্তাধীন করা হয়েছে। এই আইনে কোন ব্যক্তি যদি এক স্ত্রীর বর্তমানে আবারো বিয়ে করতে চায় তাহলে তার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিয়ের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। উল্লেখ্য, আবেদনপত্রের সাথে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি রয়েছে এই মর্মে অনুমতি পত্র থাকতে হবে।

=> বহু বিবাহের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সাহেব স্বামীকে অনুমতি দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। 

=> যদি কোন স্বামী সালিশী পরিষদের মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে যায় তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব তাকে স্মারক নং- সহ দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি প্রদান করবে।

=> অনুমতি ব্যতিত স্বামী বহু বিবাহ করলে চেয়ারম্যান সাহেব তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।

=> সালিশী পরিষদের অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তি যদি অন্য একটি বিবাহ করে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

তৃতীয়ত: = কেউ যদি সালিসী পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেন তাহলে ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যাবে না।

=> সালিসী পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্পূর্ণ দেনমোহর তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।

=> স্ত্রী ও সালিসী পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ের অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে একবছর কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে।

=> অনুমতি বিহীন দ্বিতীয় বা পুনরায় বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু বিয়ে অবৈধ নয়।

=> দ্বিতীয় বিয়ের কারণে প্রথম স্ত্রী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে বিয়ে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন।

চতুর্থত: = কোন ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পুনরায় বিয়ে করার আবেদন করার পর চেয়ারম্যান দেখবেন স্ত্রী স্ব-ইচ্ছায় অনুমতি দিয়েছেন কিনা।

=> চেয়ারম্যান ও সালিসী পরিষদ সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয় বা পুনরায় বিবাহের অনুমতি নাও দিতে পারেন।

পঞ্চমত: = ৫ বহু বিবাহের অনুমতির জন্য আবেদন করা হলে সালিসী পরিষদ বর্তমান স্ত্রীর অনুমতি সহ অন্যান্য যে সকল পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, সেগুলো হলো:

=> বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব 

=> দৈহিক দূর্বলতা

=> দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য দৈহিক অনুপযুক্ততা

=> দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রদত্ত আদালতের কোন ডিক্রিকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়ানো

=> বর্তমান স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি

কিন্তু এ সকল বিষয় বা অন্যান্য কারণসমূহ বিদ্যমান থাকলে সালিসী পরিষদ বহু বিবাহের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য নয়। পরিষদ নিজস্ব পন্থায় এ গুলির প্রেক্ষাপট ও কারণ বিশ্লেষণ করে তাদের সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারে।

 

ষষ্ঠত: 

=> বিবাহ রেজিস্ট্রিকালীন সময়ে কাজীর দায়িত্ব হচ্ছে বিয়েটি বহু বিবাহ কিনা তার খোঁজ নেয়া।

=> বহুবিবাহ হলে শালিসী পরিষদের লিখিত অনুমতিপত্র আছে কিনা তা যাচাই করা।

***********স্ত্রীর অধিকার লংঘনে আইনী প্রতিকার: 

কোন পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি বিনা দ্বিতীয় বিবাহ করেন তবে তিনি অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেন মোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন এবং মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে। এছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ হলে ১ বৎসর পর্যন্ত জেল ও ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড কিংবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। পাশাপাশি দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ৪৯৪ এর বিধান মতে, স্বামী যা স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিবাহ করেন তবে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে যার মেয়াদ সাত বৎসর পর্যন্ত হতে পারে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত, বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

 কপি পোস্ট।  
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ