‘তার গলদেশে খর্জুরপত্রের পাকানো রশি’। অর্থাৎ খেজুরপাতা দিয়ে পাকানো রশি দিয়ে কাঁটাযু্ক্ত লতাগুল্ম বেঁধে ঘাড়ে করে বা গলায় ঝুলিয়ে সে বহন করে আনত। হাসান বাসরী রহ. বলেন, ‘মাসাদ’ হ’ল ইয়ামনে উৎপন্ন এক প্রকার গাছের পাকানো রশি। আবু ওবায়দা রহ. বলেন, পশমের রশি (কুরতুবী)।
তানতাভী বলেন, কঠিনভাবে পাকানো রশি, যা গাছের ছালপাতা দিয়ে বা চামড়া দিয়ে বা অন্যকিছু দিয়ে তৈরী হ’তে পারে। (তানতাভী) যাহহাক ও অন্যান্যগণ বলেন, ‘ঐ রশিই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের রশি হবে’।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রহ. বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রীর মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান একটি কণ্ঠহার ছিল। যেটা দেখিয়ে সে লোকদের বলত, ‘লাত ও ওযযার কসম! এটা আমি অবশ্যই ব্যয় করব মুহাম্মাদের শত্রুতার পিছনে’। এ কণ্ঠহারই তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আযাবের কণ্ঠহার হবে’। তাফসীরে কুরতুবী
(সংগৃহিত)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

আয়াতটি হচ্ছেঃ তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক, আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। আর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। এ ব্যাপারে তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই, কিন্তু 'ধর্তব্য হল' তোমাদের অন্তরের সংকল্প। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


পালক পুত্র, পাতানো ছেলে। অর্থাৎ পালক পুত্র প্রকৃত পক্ষে তোমাদের পুত্র নয়। সেজন্য আল্লাহ তাআলা পালক পুত্রের আসল বাবার পরিচয়ে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন।


জাহিলী ও ইসলামের প্রথম যুগে যদি কোন ব্যক্তি অপর কারো পুত্রকে পোষ্য পুত্ররূপে গ্রহণ করত তবে এ পোষ্যপুত্র তার প্রকৃত পুত্র বলে পরিচিত হত এবং তারই পুত্র বলে সম্বোধন করা হতো। এ পোষ্যপুত্র সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত পুত্রের মর্যাদাভুক্ত হতো। যথা তারা প্রকৃত সন্তানের ন্যায়ই মীরাসের অধিকারী হত এবং বংশ ও রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব নারীদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদেরকে বিবাহ করতে পারত না। অনুরূপভাবে পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও সেই পালক পিতার জন্য বিবাহ করা হারাম ছিল। এ প্রথা রহিত করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বিধান দিলেন পালক পুত্র তোমাদের প্রকৃত পুত্র নয় এবং পালক বাবা প্রকৃত বাবা নয়। সুতরাং যখন পালক পুত্রকে ডাকবে তখন তার প্রকৃত পিতার পরিচয় দিয়ে ডাকবে।



আবদুল্লাহ বিন উমার (রাব) হতে বর্ণিত, যায়েদ বিন হারিসা (রাঃ) ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পালক পুত্র। আমরা তাকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলেই ডাকতাম। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাযিল করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮২, সহীহ মুসলিম হা: ২৪২৫)।


সুতরাং আল্লাহ তাআলা এখানে পালক পুত্রকে তার পিতৃ পরিচয়ে ডাকার জন্যই নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর এটাই আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক ন্যায়সঙ্গত বিষয়। 


আর যদি কারো পিতৃ পরিচয় না পাওয়া যায় তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই এবং বন্ধু বলে গণ্য হবে। তবে কিছুতেই সন্তান বলে গণ্য হতে পারে না। হাদীসে এসেছে,


সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যকে পিতা বলে দাবী করবে অথচ সে জানে যে, এ ব্যক্তি তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ৬৩)।


আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা তোমাদের পিতা অর্থাৎ পিতার পরিচয় দেয়া থেকে বিমুখ হয়ো না। যে ব্যক্তি তার পিতা থেকে বিমুখ হয়ে যায় সে কুফরী করল। (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৮, সহীহ মুসলিম হা: ৬৯)।


শেষ কথাঃ এই আদেশ দ্বারা সেই প্রচলিত প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জাহেলী যুগ থেকে চলে আসছিল এবং ইসলামের প্রারম্ভিক যুগেও প্রচলিত ছিল। আর তা হল পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্র ভাবা। সাহাবায়ে কিরামগণ বলেন, আমরা (উদুউহুম লিয়াবাইহি) আয়াত অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত যায়েদ বিন হারেসাহ (রাঃ)-কে যাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুক্ত করে বেটা বানিয়ে নিয়েছিলেন যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলে ডাকতাম। (বুখারীঃ সূরা আহযাবের তফসীর)।


উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আবু হুযাইফা (রাঃ) যিনি সালেমকে পোষ্যপুত্র বানিয়ে রেখেছিলেন, তার ঘরে এক সমস্যা দেখা দিল যে, যখন পোষ্যপুত্রকে আপন সন্তান ভাবতে নিষেধ করে দেওয়া হল, তখন তার স্ত্রীর জন্য তার থেকে পর্দা করা অপরিহার্য হয়ে গেল। নবী (সাঃ) আবু হুযাইফার স্ত্রীকে বললেন, তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দুধ-বেটা বানিয়ে নাও। কারণ এতে তুমি তার জন্য মাহরাম হয়ে যাবে। সুতরাং তারা তাই করলেন। (মুসলিমঃ শিশুদের দুধপান অধ্যায়, আবূ দাঊদঃ বিবাহ অধ্যায়)


অর্থাৎ, যাদের আসল পিতার খবর জানো, তাদেরকে অন্যের দিকে সম্বদ্ধ না করে তাদের আসল পিতার দিকে সম্বদ্ধ কর। তবে যাদের পিতার পরিচয় জানা নেই, তোমরা তাদেরকে বেটা নয়; বরং ভাই বা বন্ধু মনে কর।


কারণ ভুলে গিয়ে বা ভুল করে কৃত অপরাধ ক্ষমার্হ; যেমন হাদীসেও বলা হয়েছে।


অর্থাৎ, যে ব্যক্তি জেনেশুনে (পিতা-পুত্রের) সম্পর্ক অন্যের দিকে জুড়বে, সে বড় পাপী হবে। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য পিতার দিকে সম্পৃক্ত করে, সে কুফরী করে। (বুখারীঃ মানাক্বিব অধ্যায়)।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ