মায়া ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের একটি মৌলিক ধারণা। ভারতীয় দর্শনের বিশেষ করে বেদান্ত দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মায়াবাদ। শংকরাচার্যের দর্শনের সঙ্গে মায়াবাদ এতটাই সম্পৃক্ত যে তাঁর দর্শনকে প্রায়শ মায়াবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে মায়াবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের ইতিহাসে ‘মায়া’ শব্দটিকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বৈদিক সাহিত্যে এ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহূত হয়েছে তার সাথে পরবর্তীতে ব্যবহূত এ শব্দের অনেক ক্ষেত্রেই কোনো মিল নেই। সেজন্য ভারতীয় দর্শনে মায়া শব্দটির অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ‘মায়া’ বলতে এমন একটি অনির্বচনীয় শক্তিকে বুঝায় যা রহস্যজনকভাবে জগৎরূপে প্রতিভাত। মায়া সব রকম অবভাসিক সত্ত্বার সমন্বয়। যখনই আমরা পরম সত্ত্বার একত্বকে অনুভব করতে ব্যর্থ হই তখনই মায়ার উদ্ভব ঘটে। কোনো বস্ত্ত বা বিষয় প্রকৃতই যা নয় সেভাবে প্রতিভাত হবার নামই মায়া। যেমন অন্ধকারে একটি রজ্জুকে ভ্রমবশত আমরা সাপ মনে করি। ভ্রম দূর হলে সাপের অস্তিত্ব রূপ নেয় বাস্তব রজ্জুর। এ জাতীয় ভ্রান্ত জ্ঞানকেই সাধারণত মায়া বলে আখ্যায়িত করা হয়। শংকরাচার্যের মতে, একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং এ জগৎ মিথ্যা। অজ্ঞতাবশত রজ্জুতে সর্প ভ্রম হয় এবং সর্প দর্শনে আমরা আতঙ্কিত হই। ঠিক তেমনিভাবে আমরা অজ্ঞতার কারণে ব্রহ্মের স্থলে জগৎ দর্শন করি এবং জগতের প্রতি আকৃষ্ট হই। যথার্থ জ্ঞান লাভ করলে আমরা যেমন বুঝতে পারি, সর্প সত্য নয় এবং এর পেছনে সত্য হলো রজ্জু, ঠিক তেমনিভাবে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে, জগতের পেছনে পরম সত্য হলো ব্রহ্ম। রজ্জুর পরিবর্তে সর্প অথবা ব্রহ্মের পরিবর্তে জগৎ প্রত্যক্ষণই হলো মায়া।
[সংরক্ষিত]