কোরআনের ভাষায়ঃ হে মোমিনরা!
তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত
সময়ের জন্য ঋণের কারবার করো, তখন তালিখে রেখো। (সূরা বাকারাঃ ২৮২)
ঋণচুক্তি, বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়, বাইয়ে সালাম
কিংবা যে-কোনো ধরনের আর্থিক চুক্তি যদি
লিখে রাখা হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে অনেক
অনাকাংক্ষিত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।
মৌখিক নির্ধারিত শর্ত ও চুক্তি ভুলে যাওয়া
বিচিত্র কিছু নয়। তাই যদি চুক্তিটি লিখিত
থাকে, তাহলে উভয়পক্ষের জন্যই তা নিরাপদ থাকে।
উল্লিখিত আয়াতের আলোকে গবেষক
আলেমরা এ কথাও বলেছেন, যখন ঋণের আদান-
প্রদান করবে, তখন তা পরিশোধের মেয়াদও
সুস্পষ্টভাবে ঠিক করে নেবে, যাতে পরবর্তী
সময়ে দুই পক্ষের মাঝে মেয়াদ নিয়ে কোনো
দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি না হয়। লিখে রাখতে
হবে পরিশোধের সেই মেয়াদও।
যখন কোনো লেনদেনের চুক্তি হয়, তখন
চুক্তিকৃত সব বিষয় স্পষ্ট থাকা জরুরি। যেমন
কেউ বাকিতে একটি পণ্য ক্রয় করল। এক্ষেত্রে
টাকা পরিশোধের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ
করে নেওয়া উচিত। যেন পরবর্তী সময়ে টাকা
পরিশোধ করা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার
মাঝে মনোমালিন্যের সৃষ্টি না হয়। কোনো
কিছু যদি কেউ অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনতে
চায়, ফিকহের পরিভাষায় যেটাকে বাইয়ুস
সালাম বলে।
তাহলে সেখানে পণ্যের মান
কেমন হবে, পরিমাণ কতটুকু হবে, কবে এবং
কোথায় পরিশোধ করা হবে এসবকিছুই চুক্তির
সময় স্পষ্ট করে নিতে হয়। ইমাম বোখারি (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা
করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
তোমাদের কেউ যদি অগ্রিম মূল্যে কোনো
কিছু ক্রয়-বিক্রয় করতে চায়, তাহলে যেন
নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এবং নির্ধারিত
পরিমাপের পণ্যে সে চুক্তি করে। (বোখারিঃ
২২৪০)
আরেক হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আদেশ
করেছেন আগে ভাড়া ঠিক করে নিতে। যেন
পরবর্তী সময়ে দুইপক্ষে কোনো ঝগড়া না হয়।
লিখিত লেনদেনের চুক্তির নানা ধরন হতে
পারে। বড় লেনদেন হলে স্ট্যাম্পে লিখে
রাখার রেওয়াজ আমাদের সমাজে প্রচলিত
আছে। ছোট লেনদেনে অবশ্য এভাবে লিখে
রাখা হয় না। অনেক বিক্রেতাকে বাকিতে
ক্রেতাদের জন্য একটি খাতা রাখতে দেখা
যায়। কেউ বাকিতে কোনো কিছু কিনলে সে
তা সেখানে লিখে রাখে। বর্তমান সময়ে
দোকান থেকে যে ক্যাশমেমো সরবরাহ করা
হয়, সেটাও লিখিত চুক্তির একটি রূপ। পণ্যের
মূল্য কত, কত টাকা পরিশোধ করা হলো, কত
টাকা বাকি থাকল সবই সেখানে লেখা
থাকে। ভালো হয়, যদি সেখানে অবশিষ্ট
টাকা পরিশোধের একটি সম্ভাব্য তারিখও
নির্ধারিত থাকে। শুধু বাকিতে কেনাবেচার
ক্ষেত্রে নয়, নগদ টাকায় কোনো কিছু কেনার
সময়ও অনেক ক্ষেত্রে লিখিত রশিদের
প্রয়োজন দেখা দেয়। বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে
এখন বিক্রিপরবর্তী সেবার সুবিধা দেওয়া হয়।
আপনি একটি মোবাইল কিনলেন। ছয় মাস বা
এক বছর আপনাকে ওয়ারেন্টি দেওয়া হলো।
পরবর্তী সময়ে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে
চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা পাওয়ার জন্য লিখিত
ক্যাশ মেমোর বিকল্প নেই। কখনও ক্রয়কৃত
কোনো পণ্য পরিবর্তন করা কিংবা ফেরত
দেওয়ারও প্রয়োজন হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার
মাঝে যদি আগে থেকেই পরিচয় থাকে,
তাহলে তো এসব ক্ষেত্রে লিখে রাখার
দরকার পড়ে না। শুধু এতটুকু মৌখিকভাবে স্পষ্ট
করে নিলেই চলে যে, ক্রেতা প্রয়োজনে
পরবর্তী সময়ে তা পাল্টিয়ে নিতে পারে।
এ
কথা পবিত্র কোরআনেও রয়েছে তোমাদের
লেনদেন লিখে রাখার নির্দেশনা দেওয়া
হলো, তবে যদি তোমরা নগদ ব্যবসায়িক
লেনদেন করো, তাহলে লিখে না রাখলে
তোমাদের কোনো দোষ নেই। (সূরা বাকারাঃ ২৮২)
কিন্তু যদি আগে থেকে কোনোরূপ পরিচয়
না থাকে, তা-ও লিখে রাখার বিকল্প নেই।
বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতা
যখন লিখে রাখে, তখন কেউ কেউ ক্যাশ মেমোর
গায়ে কিংবা তার হিসাবের খাতায় ক্রেতার
স্বাক্ষরও রাখে। এটা আরও ভালো। উভয়পক্ষ
থেকেই সেখানে স্পষ্টতা থাকে। কিন্তু কেউ
কেউ আবার এতে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। তারা
ভাবে বিক্রেতা কি আমাকে বিশ্বাস করতে
পারছে না? এমনটা উচিত নয়। চুক্তি লিখে
রাখার নির্দেশনা ইসলামই আমাদের দেয়।
(সংগ্রহে গুগল)