জাতীয় বাজেট বাংলাদেশ সরকার প্রণীত একটি বার্ষিক দলিল যাতে রাষ্ট্রের সাংবাৎসরিক আয়- ব্যয়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। বাজেট ইংরেজী শব্দ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ "থলে" বা ইংরেজীতে Bag। অতীতে থলেতে ভ'রে এটি আইন সভা বা সংসদে আনা হতো বলে এই দলিলটি 'বাজেট' নামে অভিহিত হয়ে আসছে। জাতীয় বাজেটের মূল অংশ দুটি । প্রথম অংশ রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত। এই অংশে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা ও আদায় সংক্রান্ত প্রস্তবসমূহ বিবৃত থাকে দ্বিতীয় অংশে থাকে সরকারী ব্যয়ের প্রস্তাব সমূহ। প্রতি বৎসর একটি আইনপ্রস্তাব বা "বিল" আকারে জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। একে বলা হয় অর্থ বিল। সংসদ সদস্যরা অনুমোদনের পর এটি আইনে পরিণত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে এবং অর্থ বিভাগ ব্যয় প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে প্রতি বৎসর জুন মাসে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হয় এবং অনুমোদনের পর তা পরবর্তী অর্থবৎসরের জন্য কার্যকর হয়। । দেশের অর্থ মন্ত্রী জাতীয় সংসদের অর্থ বিল পেশ করেন। বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন করা হয় ১২ মাসের জন্য যা চলতি বছরের ১লা জুলাই থেকে পরবর্তী বৎসরের ৩০শে জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। প্রতি বছর জুন মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী বাজেট বিল পেশ করেন। এর আগে এই বাজেট বিল ক্যাবিনেট সভায় বিবেচনা ও অনুমোদন করা হয়। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের তুলনায় প্রায় সতের শতাংশ বড় বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জাতীয় সংসদে তিনি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ দু’শ’ ৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত দশমিক চার শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশের নীচে রাখার প্রত্যয়ও আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। টানা নয় বার জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়াও এরশাদ আমলে দিয়েছিলেন আরো দুটি জাতীয় বাজেট। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। যেখানে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি এক লাখ ছয় হাজার সাতশ’ বাহাত্তুর কোটি টাকা। জিডিপির অনুপাতে যা চার দশমিক আট শতাংশ। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ বারো হাজার দুইশ’ ছিয়াত্তর কোটি টাকা। যা কিনা জিডিপির পাঁচ শতাংশ। এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর দুই লাখ আটচল্লিশ হাজার একশ’ নব্বই কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর প্রাপ্তির লক্ষ্য আট হাজার ৬২২ কোটি টাকা। কর ছাড়া অভ্যন্তরীণ প্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেট বা এডিপির আকার ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এতে খাত ওয়ারী হিসেবে সবচেয়ে বেশী ব্যয় হবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ২৭.৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ আছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত ১৯.৪ শতাংশ। এর পরে আছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত ১৫.৩ শতাংশ। এর পরে বরাদ্দের ক্রম অনুসারে আছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ১৩.৫ শতাংশ,অন্যান্য খাত ৬.৭ শতাংশ, স্বাস্থ্য ৬.১%, কৃষি ৫.৭ শতাংশ, , জনপ্রশাসন ৩.১ শতাংশ, এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দের অনুপাত ২.৮ শতাংশ প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থায়নের মূল উৎসই হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর। যা থেকে মোট বাজেটের ৬২ শতাংশ অর্থায়ন করার পরিকল্পনা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ২.১ শতাংশ। কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৭.৮ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ১৫.১ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের পরিমান যথাক্রমে১১.৬ শতাংশ ও ১.৪ শতাংশ। রাজস্ব আয় ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদের অন্যান্য উৎস হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীন ঋণ। বৈদেশিক ঋণ বাবদ আশা করা হচ্ছে, ৪৬ হাজার ৪২০ কোটি টাকা । আর অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্য ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবার পরিকল্পনা ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। আর ব্যাংক বর্হিভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে বেতন ভাতা পরিশোধে। যা মোট ব্যয়ের বাইশ শতাংশ। দেশি বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সাহায্য মঞ্জুরি বাবদ খরচ হবে একই পরিমানে। যা মোট ব্যয়ের ১৬.৯ শতাংশ।পরে আছে পণ্য ও সেবা খাত, ১০ শতাংশ। পেনশন পরিশোধে ব্যয় হবে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ৯.৪ শতাংশ। ভর্তূকি ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় ৭.৯ শতাংশ। অনুন্নয়ন বিনিয়োগ বাবদ ৫.৮ শতাংশ। সম্পদ সংগ্রহে খরচ ৫.৩ শতাংশ। বিবিধ খাতে ৪.৪ শতাংশ এবং থোক বরাদ্দ থাকছে ১.৪ শতাংশ। এই বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা। আশা করি বুজছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ