Call
আপনার প্রশ্নের দুটি ভাগ আছে। যথাঃ
১। সাধারণ আনসার, ব্যাটালিয়ন আনসার ও অঙ্গীভূত আনসারদের মাঝে পার্থক্য কী ? 
২। ব্যাটালিয়ন আনসারের চাকরি হলে কি বিজিবি সিপাই পদে আবেদন করা যাবে ?

আমি প্রথম প্রশ্নটির উত্তর দিচ্ছি।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সংক্ষেপে ভিডিপি) এর মাঝে আসলে তিনটি ভাগ আছে। যথাঃ

১। ব্যাটালিয়ন আনসার।
২। সাধারণ আনসার।
৩। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল। 

ব্যাটালিয়ন আনসারঃ ব্যাটালিয়ন আনসারে বাংলাদেশের অন্যান্য সামরিক ও আধা - সামরিক বাহিনীর (বিজিবি) মতো নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাটালিয়ন আনসারে নিয়োগের বয়স হলো সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ হলো ২২। গাজীপুরের আনসার ও ভিডিপি একাডেমীতে ৬ মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণের পর এদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং চাকরির বয়স ৬ বছর হলে চাকরি স্থায়ী হয়। তাই তারা বাংলাদেশের অন্য সকল বাহিনী এবং সরকারি কর্মচারীদের মতো চাকরি শেষে পেনশনও প্রাপ্ত হন। 
ব্যাটালিয়ন আনসারদের কাজ হলো মূলত বাংলাদেশের সামরিক ও আধা - সামরিক এবং পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করা। ব্যাটালিয়ন আনসার নিজেই একটি আধা - সামরিক বাহিনী। এদের সেনাবাহিনীর মতো নিয়ম - কানুন অনুসরণ করতে হয়।

সাধারণ আনসারঃ সাধারণ আনসার আবার দুটি ভাগে বিভক্ত। যথাঃ

১। সাধারণ আনসার।
২। অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার।

অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারঃ যারা অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার তাদেরকেও অন্যান্য বাহিনীর মতোই নিয়োগ দেওয়া হয়। অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারে প্রবেশের বয়সসীমা হলো ১৮ - ৩০ বছর। প্রবেশের জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা জেএসসি পাস। এদেরকে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমীতে ৭০ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তারপর দেশের ভিতরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস, শিল্প - কারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়। অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারের চাকরি সর্বাবস্থায় অস্থায়ী। সমতল এলাকায় নিয়োগ হলে বেতন হয় ১৬,২০০ টাকা এবং পার্বত্য এলাকায় হলে ১৭,৪০০ টাকা। 

সাধারণ আনসারঃ এছাড়াও বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য পুরো দেশের সকল জায়গা থেকেই আরও কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদেরকে প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে আঞ্চলিক রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে রাখা হয়। বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নে একটি পুরুষ আনসার প্লাটুন ও উপজেলায় একটি পুরুষ আনসার কোম্পানি এবং মহিলা আনসার প্লাটুন থাকে। এসব প্লাটুন ও কোম্পানিতে আঞ্চলিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এইসব ইউনিটের সকল সদস্যই অবৈতনিক সেচ্ছাসেবী। শুধুমাত্র এইসব ইউনিটের কমান্ডাররা সরকার প্রদত্ত কাজ করলে যৎসামান্য কিছু সম্মানী পান। সাধারণ আনসারে প্রবেশের বয়সসীমা ১৮ - ৩৫ বছর। বাংলাদেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন, ঈদ ও পূজার সময় এইসব স্থানীয় ইউনিটের সদস্যদের সরকার কাজে লাগায় এবং তার বদলে তাদেরকে কিছু টাকা প্রদান করে।

গ্রাম প্রতিরক্ষা দলঃ আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর এই শাখাটিও দুই ভাগে বিভক্ত। যথাঃ 

১। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি)।
২। শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি)।

গ্রাম প্রতিরক্ষা দলঃ এদেরকেও সাধারণ আনসারদের মতো নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে রিজার্ভ হিসাবে রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক গ্রামে একটি করে পুরুষ ও মহিলা ভিডিপি প্লাটুন থাকে। এই বাহিনী শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় থাকে।

শহর প্রতিরক্ষা দলঃ এটি হলো ভিডিপির মতো আরেকটি বাহিনী। তবে এটি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে সক্রিয় থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডে একটি করে পুরুষ ও মহিলা টিডিপি প্লাটুন থাকে। 

ভিডিপি ও টিডিপি উভয় বাহিনীর সকল সদস্যই অবৈতনিক সেচ্ছাসেবী। হ্যাঁ, এদেরকেও প্রয়োজনের সময় সাধারণ আনসারদের মতো ব্যবহার করে কিছু টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। তবে ভিডিপি ও টিডিপির প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ আঞ্চলিকভাবেই হয়ে থাকে। তাদেরকে আনসার ও ভিডিপি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। 

এবার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আসি। 

হ্যাঁ ব্যাটালিয়ন আনসারে চাকরি হলে বিজিবিতে আবেদন করা যাবে। তবে সেটি আপনার জন্য সুখকর হবে না। কারণ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও বিজিবির সিপাইয়ের বেতন একই। তাই একবার ব্যাটালিয়ন আনসারের ছয় মাসের হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারপর আবার বিজিবির চাকরি নিয়ে সেই প্রায় একই ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ