Call

বেকারত্ব দূর করা এবং মাদকের কুফল সর্ম্পকে সবাই কে সচেতন করা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
MHR

Call

নৈতিক ও ধর্মীয় উপায়ে মাদকতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা : বাংলাদেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বসবাস। এখানে ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকতা নির্মূল করা সম্ভব। ইসলামী দল, সংস্থার দায়িত্বশীল, মসজিদের ইমাম ও খতীব, ইসলামী জালসা ও সেমিনারে আলোচকদের মাধ্যমে মাদকের দুনিয়াবী ক্ষতি ও পরিণতি এবং পরকালে এর শাস্তি ও ফলাফলের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে। এর জন্য জাতীয় বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি এবং বিশ্বাস ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আনা যায়, সেটাই হ’ল সর্বোৎকৃষ্ট ও স্থায়ী সংশোধন। মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে : আজকাল রেডিও, টেলিভিশন, পত্র- পত্রিকাতে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। বরং যারা মাদক সেবন, মাদক পাচার ও ব্যবসার সাথে জড়িত, তাদের তালিকা ও চিত্র তুলে ধরা এবং তাদের থেকে সাধারণ মানুষকে সাবধান করা যরূরী। এছাড়া পিতা-মাতা ও মুরুববীরা ছেলে-মেয়েদের কাছে মাদকতার অপকারিতা তুলে ধরতে পারেন। কোন ছেলে এই ভয়াল নেশায় জড়িয়ে পড়লে সমাজের সচেতন সকলের এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং তাকে ঐ নেশা থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করাও কর্তব্য। রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক প্রতিরোধ : কোন দেশের প্রশাসন যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহ’লে প্রশাসনের সামনে অপরাধ কর্মকান্ড হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ অপরাধীরা যখন দেখবে যে, অপরাধ করলে এর কোন প্রতিকার বা শাস্তি হয় না। অথবা বড় জোর থানা পর্যন্ত গেলে কারো ফোনের মাধ্যমে ছাড়া পাওয়া যায়। অথবা কোর্টে গেলে সহজে যামিনে বের হওয়া যায় ও কিছুদিন পর খালাসও পাওয়া যায়। তখন তারা আরো বেপরোয়া হবে। এজন্য মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। মাদকতা বন্ধে আমাদের কতিপয় প্রস্তাবনা।- ১. মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও সরবরাহের লাইসেন্স বন্ধ করতে হবে। ২. পুলিশ প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ৩. মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পৃথক অধিদফতর গঠন করে সংশ্লিষ্টদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ৪. এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত মন্ত্রী, এমপি, আমলা, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ও রাজনৈতিক নেতাদের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। পক্ষান্তরে সৎ ও ন্যায়পরায়ণদেরকে মূল্যায়ন ও পুরস্কৃত করতে হবে। ৫. মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও মাদকের সাথে জড়িতদের প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এজন্য কঠোর আইন যেমন মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেরূপ চীন, ইরান, সঊদী আরব প্রভৃতি দেশে এর জন্য কঠোর আইন রয়েছে। বিশেষ করে মাদক চোরাচালানদেরকে এ আইনের আওতায় অবশ্যই আনতে হবে। ৬. সমাজে সাধারণ মাদকাসক্তদেরকে ইসলামী আইনের আওতায় এনে কঠোর ও প্রকাশ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে সংশোধনেরও ভাল ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. টেলিভিশন, সিনেমা, পত্র-পত্রিকায় এবং স্যাটেলাইটে মাদকতার দৃশ্য, অশ্লীল ছবি সহ সকল অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এর বিপরীতে মাদকাসক্তি থেকে নিরাময়ের উপায় এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো বেশী বেশী তুলে ধরতে হবে। ৮. দেশের সীমান্তসহ মাদক প্রবেশের যতগুলো রুট রয়েছে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ৯. মাদকদ্রব্য নির্মূলের জন্য মাদক নিবারক আইন যরূরী ভিত্তিতে পাস করতে হবে। ১০. বাংলাদেশে সর্বত্র ধূমপান নিষিদ্ধের আইন পাস করতে হবে। ভুটান, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সহ অনেক রাষ্ট্রে ধূমপান নিষিদ্ধ। একই সাথে তামাক উৎপাদন, বিপণন, আমদানী- রপ্তানী, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ এবং এর বিজ্ঞাপন প্রদানসহ সব প্রচার- প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। ১১. সামাজিকভাবে মাদকতার ভয়াবহতাকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সম্মিলিত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে পারলে এ সামাজিক ক্যান্সার নিমিষে দূর করা সম্ভব। এই কমিটি দল, মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমন্বয়ে হ’তে পারে। এদের কাজ হবে সমাজ ও গ্রামের মাদকাসক্তদেরকে বুঝানো। সামাজিক চাপ সৃষ্টি ও ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করা। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেয়া এবং পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ১২. মাদকতা নির্মুলের লক্ষ্যে দেশের সেনাবাহিনীর উপর দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। পরিশেষে বলব, মাদকতা একটি জাতিকে সহজেই নির্মূল করতে পারে। যেমন হাদীছে এসেছে, ওছমান গনী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটি হ’ল সকল নিকৃষ্ট কর্মের উৎস’। মনে রেখো, তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তি সর্বদা ইবাদতে রত থাকত এবং লোকালয় থেকে দূরে থাকত। একদা এক পতিতা মেয়ে তাকে প্রলুব্ধ করল এবং তাঁর কাছে তার দাসীকে পাঠিয়ে দিল। সে গিয়ে বলল যে, আমরা আপনাকে আহবান করছি একটি ব্যাপারে সাক্ষী থাকার জন্য। তখন সাধু লোকটি দাসীটির সাথে দেখা করল। যখনই সে কোন দরজা অতিক্রম করত তখনই তা পিছন থেকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হ’ত। এভাবে অবশেষে এক সুন্দরী মহিলার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হ’ল। যার কাছে একটি বালক ও এক পাত্র মদ ছিল। তখন ঐ মহিলাটি তাকে বলল, আমি আপনাকে সাক্ষী করার জন্য ডাকিনি। বরং ডেকেছি আমার সাথে যেনা করার জন্য। অথবা এই বালকটিকে হত্যা করবেন কিংবা এই এক পেয়ালা মদ পান করবেন। লোকটি তখন মদ পান করল। অতঃপর বলল, আরও দাও। অতঃপর সে মাতাল হয়ে গেল। ফলে সে উক্ত নারীর সাথে যেনা করল এবং ঐ বালকটিকেও হত্যা করল। অতএব তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা মদ ও ঈমান কখনও একত্রে থাকতে পারে না। বরং একটি অপরটিকে বের করে দেয়’।[30] অতএব আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাদকতা থেকে বেঁচে থাকার এবং এগুলো প্রতিরোধ করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ