shohanrand1

Call

বর্তমানে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হচ্ছে এবং ব্যবহার হচ্ছে। আমরা বিজ্ঞানের কল্যাণে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যদিও এসব নিত্যনতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছি, চলুন আমরা ভেবে দেখি, আমাদের সৃষ্টি করে দুনিয়ায় পাঠানোর পর আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের জন্য কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা রা’আদ-এর ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘প্রত্যেকের সামনে ও পেছনে এমন প্রহরী (ফেরেশতা) নিযুক্ত রয়েছে, যারা আল্লাহর নির্দেশে পর্যায়ক্রমে তাকে হেফাজত করে।’ এ আয়াতে ‘মু’আককিবাতুন’ বহুবচন শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। যে দল অপর দলের পেছনে কাছাকাছি হয়ে আসে, শব্দটি ব্যবহার করে তা-ই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক বান্দার জন্য আল্লাহর এমন কিছু ফেরেশতা নির্ধারিত রয়েছেন, যারা দিনের বেলা তাদের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। সন্ধ্যায় তারা চলে গেলে আরেক দল ফেরেশতা নির্ধারিত রয়েছেন, যারা রাতের বেলা বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করেন। যেমন বান্দার আমলনামা লিখে রাখার জন্য তার ডান ও বাম দিকে ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন। ডান পাশের ফেরেশতা বান্দার নেক আমলগুলো এবং বাঁ দিকের ফেরেশতা তার বদ আমলগুলো লিখে রাখেন। দুজন ফেরেশতার মধ্যে একজন বান্দার পেছনের দিকে অবস্থান করে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, আরেকজন তার সামনে অবস্থান করে তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। দিনে চার জন এবং রাতে চার জন মোট আট জন ফেরেশতা প্রত্যেক বান্দার ক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকেন। সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে রাতের ফেরেশতা এবং দিনের ফেরেশতাদের পরস্পর আগমন ঘটে। ফজর এবং আসরের নামাজের সময় তারা একত্রিত হয়। রাতে দায়িত্ব পালনকারী ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে গিয়ে হাজির হলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এসেছ? আল্লাহ সর্বজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও ফেরেশতারা জবাব দেয়, আমরা যখন তাদের কাছে গিয়ে হাজির হই, তখন তারা নামাজ আদায় করছিল। ফিরে আসার সময়ও তারা নামাজেই মশগুল ছিল।’ ‘তোমাদের সঙ্গে এমন কিছু ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন, যারা প্রস্রাব-পায়খানা ও স্ত্রী মিলনের সময় ছাড়া সর্বদা তোমাদের সঙ্গে থাকেন। অতএব, তোমরা তাদের সঙ্গে লজ্জাশীলতা বজায় রেখো এবং তাদের সম্মান করো।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মু’আককিবাতুন মানে ফেরেশতাগণ। তাঁরা বান্দার সামনে ও পেছনে অবস্থান করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তবে তাকদির তথা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নির্দেশনার অংশ হিসেবে যখন কোনো আজাব-গজব বা বালা-মুসিবত নাজিল হয়, তখন ফেরেশতারা তার দায়িত্ব থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরে পড়েন।’ একবার হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের সঙ্গে কয়জন ফেরেশতা থাকে, দয়া করে বললে জানতে চাই। জবাবে রাসুলে কারিম মুহাম্মদ (সা.) বললেন, ‘তোমার নেক আমলগুলো লেখার জন্য তোমার ডান পাশে একজন ফেরেশতা থাকেন। তোমার বাঁ দিকেও আরেকজন ফেরেশতা থাকেন। ডান পাশের ফেরেশতা তার আমির। তুমি কোনো নেক কাজ করলেই সঙ্গে সঙ্গে ডান পাশের ফেরেশতা বিনিময় হিসেবে ১০ নেকি লিখে নেন। কোনো গুনাহ বা বদ আমল করলে বাঁ দিকের ফেরেশতা তা লেখার অনুমতি চান ডান পাশের ফেরেশতার কাছে। তিনি তাঁকে বোঝান, অপেক্ষা করো, সম্ভবত সে এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তওবা করে নেবে। এভাবে অপেক্ষা করা অবস্থায় সে তিনবার ডান পাশের ফেরেশতার কাছে তা লেখার অনুমতি চায়। তৃতীয় দফায় ডান পাশের ফেরেশতা তাকে গুনাহ লেখার অনুমতি দিয়ে থাকে। আল্লাহ আমাদের এমন পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। এ ব্যক্তি খুবই খারাপ সঙ্গী। আল্লাহর প্রতি তার মোটেও শ্রদ্ধাবোধ নেই। তার মধ্যে লাজ-লজ্জাও নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বান্দার মুখে যেকোনো শব্দই উচ্চারণ হোক, তা সংরক্ষণে একজন ফেরেশতা প্রস্তুত রয়েছেন। দুজন ফেরেশতা তোমার সম্মুখ ও পেছন দিকে পাহারায় নিয়োজিত থাকেন। একজন ফেরেশতা তোমার মাথার চুল ধরে আছেন। তুমি নম্রতা অবলম্বন করলে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর সঙ্গে অহংকারী আচরণ করলে তোমাকে লাঞ্ছিত করবেন; ধ্বংস করে দেবেন। এ ছাড়া দুজন ফেরেশতা শুধুই হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দুরুদ পাঠ করার উদ্দেশে তোমার দুই পাশে অবস্থান করেন। একজন ফেরেশতা তোমার মুখের পাহারায় নিয়োজিত থাকেন, যেন কোনো সাপ-বিচ্ছু তোমার মুখে প্রবেশ করতে না পারে। এ ছাড়া আরো দুজন ফেরেশতা তোমার চোখের পাহারায় নিয়োজিত আছেন। প্রত্যেক মানুষের জন্য দিনের বেলায় ১০জন এবং রাতের বেলা ১০জন করে মোট ২০জন ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন। মানুষকে প্রতারিত করতেই দিনের বেলা শয়তান নিজে অপতৎপরতা চালায় এবং রাতের বেলা তার চেলা-চামুণ্ডারা তার দায়িত্ব পালন করে।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একজন জিন সাথী এবং একজন ফেরেশতা সাথী নির্ধারণ করা আছে।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, আপনার বেলায়ও কি একই অবস্থা? জবাবে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার সঙ্গেও। তবে আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার ওপর বিজয়ী করেছেন। অতএব সে আমাকে ভালো ব্যতীত কোনো মন্দ কাজের নির্দেশ করে না।’ উত্তর দিয়েছেনঃ হাফেজ মাওলানা আবদুস সালাম: ইমাম, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স, মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা। source: daily kaler kantha 23.8.13

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ