RafiaBegum

Call

একথা সুবিদিত যে, স্ত্রী সহবাস ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে অন্যতম; বরং তা ইহরামের সর্বাধিক কঠিন ও বড় নিষেধাজ্ঞা। আল্লাহ্‌ বলেন, ]الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلا رَفَثَ وَلا فُسُوقَ وَلا جِدَالَ فِي الْحَجِّ[ “হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ করার ইচ্ছা করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া জায়েয নয়। জায়েয নয় কোন অশোভন কাজ করা, না কোন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৭) الرفث এর অর্থ হচ্ছে, সহবাস ও তার পূর্বের কাজ সমূহ। অতএব ইহরামের সর্বাধিক কঠিন নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। হজ্জের ইহরামে থেকে কোন লোক যদি স্ত্রী সহবাস করে, তবে হয় তা প্রথম হালালের পূর্বে হবে অথবা প্রথম হালালের পর হবে। যদি প্রথম হালালের পূর্বে সহবাস হয়, তবে তার উপর নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ প্রথমতঃ তার ঐ হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। চাই উহা ফরয হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক। দ্বিতীয়তঃ সে গুনাহগার হবে। তৃতীয়তঃ হজ্জের অবশিষ্ট কাজ তাকে পূর্ণ করতে হবে। অর্থাৎ- হজ্জ নষ্ট হওয়া সত্বেও হজ্জের অবশিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করতে হবে। চতুর্থতঃ পরবর্তী বছর অবশ্যই তাকে উক্ত হজ্জের কাযা আদায় করতে হবে। চাই তা ফরয হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক। হজ্জ ফরয হলে তো কাযা আদায় করার বিষয়টি সুস্পষ্ট। কেননা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সে হজ্জের ফরযিয়াতের যিম্মা মুক্ত হতে পারে নি। কিন্তু নফল হজ্জ হলেও তাকে কাযা আদায় করতে হবে। কেননা হজ্জ আরম্ভ করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরাকে পূর্ণ কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) তাছাড়া হজ্জের কাজ শুরু করলে তা ফরয হয়ে যায়। যেমনটি পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন। “হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ ফরয করবে...।” এই জন্য আমরা বলব, হজ্জ নফল হোক বা ফরয হোক, যে কোন কারণে তা বিনষ্ট করে ফেললে তা কাযা আদায় করতে হবে। পঞ্চমতঃ কাফ্‌ফারা স্বরূপ তাকে জরিমানা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি উট যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দেয়া। উটের পরিবর্তে যদি সাতটি ছাগল যবেহ করে তাও জায়েয আছে। এই বিধান হচ্ছে প্রথম হালালের পূর্বে হলে। (অর্থাৎ- ১০ তারিখে বড় জামরায় কংকর মেরে মাথা মুন্ডন করার পূর্বে) কিন্তু প্রথম হালালের পর সহবাস করলে তার উপর নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ প্রথমতঃ সে গুনাহগার হবে। দ্বিতীয়তঃ ইহরাম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তৃতীয়তঃ কাফ্‌ফারা হিসেবে নিম্ন লিখিত তিনটি বিষয়ের কোন একটি করবেঃ ক) একটি ছাগল যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে। অথবা খ) ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ পরিমাণ খাদ্য দিবে। অথবা গ) তিন দিন রোযা রাখবে। এ তিনটির যে কোন একটি জরিমানা স্বরূপ আদায় করবে। চতুর্থতঃ নতুন করে ইহরামে প্রবেশ করবে। মক্কার হারাম সীমানার বাইরে নিকটতম কোন স্থানে গমণ করে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে আসবে এরপর তওয়াফে এফাযা বা হজ্জের তওয়াফ সম্পন্ন করবে। এভাবেই ফিকাহবিদগণ বলেছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ প্রথম হালাল হওয়ার অর্থ কি? জবাবঃ হাজী সাহেব যখন ঈদের দিন (যিল্‌ হজ্জের দশ তারিখে) বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করে তখন সে প্রথম হালাল হয়ে যায়। তখন স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যায়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ইহরাম বাঁধার পূর্বে, এবং হালাল হওয়ার পর বায়তুল্লাহর তওয়াফের পূর্বে আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।’ এই হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, হালাল হওয়ার পরেই আছে বায়তুল্লাহর তওয়াফ। যেমনটি পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ঈদের দিন বড় জামরায় কঙ্কর মারার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করার মাধ্যমে প্রথম হালাল হবে। এই হালালের পূর্বে সহবাস হলে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় আবশ্যক হবে। আর এই হালালের পর সহবাস হলে, উল্লেখিত চারটি বিষয় আবশ্যক হবে। কোন লোক যদি মূর্খতা বশতঃ এই কাজ করে অর্থাৎ- ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম একথা তার জানা নেই, তবে তার কোন ক্ষতি হবে না। কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। চাই প্রথম হালালের পূর্বে হোক বা পরে হোক। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি অথবা ভুলে যাই তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ ]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[ “ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্‌ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫) যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম এ লোক যদি একথা জানে কিন্তু এটা জানে না যে, সহবাস করলে এত কিছু আবশ্যক হবে বা এই জরিমানা দিতে হবে, জানলে হয়তো সে একাজে লিপ্ত হতো না। তবে এর বিধান কি? তার এই অজ্ঞতার ওযর কি গ্রহণযোগ্য হবে? জবাবঃ তার এই ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ওযর হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে সম্পর্ণরূপে অজ্ঞ থাকা। বিষয়টি যে হারাম সে ব্যাপারে তার কোনই জ্ঞান না থাকা। কিন্তু বিষয়টি হালাল না হারাম এই বিধান জানার পর, করলে কি লাভ বা না করলে কি ক্ষতি তা জানা আবশ্যক নয়। এই নাজানা ওযর হিসেবে গণ্য হবে না। যেমন, জনৈক বিবাহিত ব্যক্তি যদি জ্ঞান রাখে যে, ব্যভিচার হারাম। সে বিবেকবান ও প্রাপ্তবয়স্ক। সে যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে। সে যদি বলে যে, ব্যভিচার করলে যে রজমের শাস্তি আছে আমি তা জানতাম না। জানলে এ অন্যায় আমি করতাম না, তার এই কথা গ্রহণ করা হবে না। তাকে রজম করতেই হবে। এই কারণে জনৈক ব্যক্তি রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এসে তার করণীয় কি জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে কাফ্‌ফারা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন। অথচ সহবাস করার সময় সে কাফ্‌ফারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। এথেকে বুঝা যায়, কোন মানুষ যদি অন্যায়ে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ সীমা লঙ্ঘন করে, তখন উক্ত অপরাধের শাস্তি তাকে পেতে হবে। যদিও এর শাস্তি সম্পর্কে সে অজ্ঞ থাকে। বিষয়/প্রশ্নঃ (৪৮০) গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম বিভাগের নামঃ কিতাবুল হজ্জ লেখকের নামঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) অনুবাদ করেছেনঃ আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি - আবদুল্লাহ আল কাফী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ