শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জ্ঞানের পিতা সক্রেটিস থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক দার্শনিক, চিন্তাবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করে গেছেন, করছেন। তবে আজও তারা শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো অভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে। শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মধ্যে তিন ধরনের মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। এক শ্রেণির দার্শনিকগণ মনে করতেন শিক্ষা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার নয় বরং শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন। কাজেই অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা দান অসমীচীন। আর এক শ্রেণির দার্শনিকগণ বিশ্বাস করতেন যে, বিদ্যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ আয়-বাড়িয়ে দেয়, কাজেই অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা দেওয়া ন্যয়সঙ্গত। তৃতীয় মতবাদের প্রবক্তারা মনে করতেন বিদ্যার জন্য, অর্থের ঠিকই প্রয়োজন আছে। তবু বিদ্যাকে অর্থের দাসে পরিণত করা মোটেও বাঞ্ছনীয় হবে না।

প্রথম মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন সক্রেটিস, তার মতে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো আত্মার বিকাশ অর্থ উপার্জন নয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অর্থের বিনিময়ে বিদ্যা বিক্রয় পাপ। তিনি অর্থের বিনিময়ে শিক্ষাকে দেহ ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

দ্বিতীয় মতবাদের প্রবক্তা হলেন প্রেটাগোরাস, তিনি বিশ্বাস করতেন, বিদ্যার মূল উদ্দেশ্য হলো বাস্তব জীবনে সাফল্যের জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। কাজেই তিনি শিক্ষাদানের জন্য অত্যন্ত চড়া মজুরি দাবি করতেন। তখনকার সময়ে তিনি প্রতি ছাত্রের শিক্ষার জন্য প্রায় দশ হাজার দ্রাকমা গ্রহণ করতেন। দ্রাকমা মানে রৌপ্যমুদ্রা।

 

তৃতীয় মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন এরিস্টপাস, তিনি শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সক্রেটিসের সঙ্গে একমত ছিলেন না। অন্যদিকে প্রেটাগোরাসের সঙ্গেও একমত ছিলেন না। তিনি বলতেন, বিদ্যার উদ্দেশ্য দারিদ্র্যও নয় আবার ঐশ্বর্যও নয়।

আবার অন্যদিকে, শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে আরো দুই ধরনের মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। একদল মনে করেন শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য শুধু পার্থিব কল্যাণই নয় বরং পরকালীন মুক্তি লাভও এর আওতাভুক্ত। তারা ধর্মকেও শিক্ষার উদ্দেশ্যের সঙ্গে এক করে দেখেছেন ।

এদের মধ্যে এরিস্টটল অন্যতম। তিনি বলেন, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা। কমেনিয়াস-এর মতে, শিশুর সামগ্রিক বিকাশই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর মানুষের শেষ লক্ষ্য হবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে সুখ লাভ করা।

অন্যদিকে যারা শিক্ষার উদ্দেশ্যের সঙ্গে ধর্মকে এক করে দেখেননি অর্থাত্ যারা সাধারণভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হার্বার্ট, জনলক, জনডিউক, পার্কার প্রমুখ দার্শনিক ও শিক্ষাবিদগণ।

হার্বার্ট বলেছেন, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হবে শিশুর সম্ভাবনা ও অনুরাগের পূর্ণ বিকাশ ও তার নৈতিক চরিত্রের প্রকাশ। জনলক বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো সুস্থ দেহে সুস্থ মন প্রতিপালনের নীতিমালা আয়ত্তকরণ।

শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত এ নিয়ে দার্শনিক প্লেটো একটি সুন্দর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায়, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সেসব গুণাবলীর যথাযথ বিকাশ সাধন যেসকল গুণাবলী নিয়ে একটি শিশু এই পৃথিবীতে আগমন করেছে। অন্যদিকে শুধু পয়সা উপার্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। তবে এটা পরোক্ষ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রত্যক্ষ বা আসল উদ্দেশ্য হবে জ্ঞানদান ও জ্ঞান আহরণ।

 

লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Unknown

Call
Valo manus kora
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ