নারীদের কোরআন তিলাওয়াতের বিষয়টি প্রদর্শনের সামান্যতম কোনো সুযোগ নেই এবং সেটা কোনোভাবেই প্রচারের বিষয় নয়।
যদি এটা প্রচারের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তবে এই কাজটি বড় ধরনের ফেতনা। এটা শোনাও জায়েজ নেই আর যারা করেছে, তাদের জন্য এই কাজটি হারাম। যারা এটা প্রচার করছে, তারাও বড় ধরনের গুনাহগার হবে।
কারণ এর সাথে ফেতনার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এখানে নারীদের প্রদর্শনের বিষয়টি আসে, যা ইসলামের শরীয়তে একেবারেই হারাম।
আল্লাহ তায়ালা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না,ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে,যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বরং তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাবঃ ৩২)।
এ আয়াতে নবী পত্নীদেরকে সম্বোধন করা হলেও বিধান পৃথিবীর সকল নারীদের জন্য প্রদত্ত। উক্ত আয়াত দ্বারা পর পুরুষের সাথে অসংগতিপূর্ণ বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা না জায়েজ প্রমাণিত হয়। তাই তো প্রয়োজনবশতঃ কথা বলা বৈধ থাকলেও মহিলা সাহাবীগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরপুরুষের সাথে কথা বলতেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলতেন। যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয়।
উক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় বিনাপ্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলা জায়েজ হবে না। সুতরাং কথা বলা যদি নাজায়েয হয় তাহলে তাদের গজল নাসিদ শোনা আরো উত্তম ভাবে নাজায়েয হবে। কারণ, গজল নাসিদ আবৃত্তি করা হয় সুর দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য।
গায়রে মাহরাম মহিলার গান গজল সঙ্গীত নাসিদ শ্রবণ করার হুকুমের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য।
ইমাম ইবনুল জাওযি রহমালাতুল্লাহি আইহি বলেন, গায়রে মাহরাম মহিলার গান গজল সঙ্গীত শ্রবণ করার ব্যাপারে শাওয়াফিগণ বলেন, গায়রে মাহরাম মহিলার গান শ্রবণ করা জায়েয নেই চাই সে স্বাধীন মহিলা হোক অথবা দাসী।
তিনি বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, যে গায়িকার মালিক গান শোনানোর জন্য লোকদের একত্রিত করে সে অজ্ঞ তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো কঠোর ভাষায় বলেন, সে দাইউস। (তালবিসে ইবলিসঃ ২৭৭)।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন বলেন, আজনবী মহিলার গান গজল শ্রবণ করা সর্বাপেক্ষা হারাম কাজ এবং দ্বীনের সবচেয়ে দূষিত বিষয়। (ইগাসাতুল লুহফান,১/২৩০)।
শাইখ ইবনে উছাইমিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার মতামত হলো এটা হারাম যে, উপবিষ্ট পুরুষদের সম্মুখে মহিলাদের আওয়াজ উচু হবে এবং তারা তাদের আওয়াজ শ্রবণ করে স্বাদ উপভোগ করবে। (আল লিকাউস সাহরী, ৫৫)।
ইমাম খরাশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে মহিলার আওয়াজ শুনে স্বাদ উপভোগ করার আশঙ্কা রয়েছে তার আওয়াজ উচু করা জায়েয নেই। মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করার ক্ষেত্রেও জায়েয নেই, এবং বিবাহের ভোজ আয়োজনেও জায়েয নেই। (শরহে মুখতাছার খলিল, ১/২৭৬)।
উচ্চস্বরে কোরআন তিলাওয়াত করা নারীদের জন্য নাজায়েজ নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে। সেটা হলো বেগানা পুরুষ, ভিন্ন পুরুষ বা যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েজ রয়েছে, এ ধরনের বেগানা পুরুষ যেন তিলাওয়াত শুনতে না পারে। বেগানা পুরুষের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য বা ফেতনা সৃষ্টি করার জন্য যদি মেয়েরা উচ্চস্বরে কোরআন তিলাওয়াত করেন/গজল গান তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন। তার জন্য এটা জায়েজ নেই। মহিলাদের কণ্ঠেরও পর্দা আছে। বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে কথা বলার পদ্ধতি এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে শিক্ষা দিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে যদি কথা বল, তাহলে আকর্ষণহীন ভাষায় কাটাকাটা কথা বলবে। নরম ও ললিত ভাষায় কথা বলো না। এতে যেসব পুরুষের মনে রোগ আছে (পরনারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার মত ব্যক্তিদের রোগী বলা হয়েছে) তারা অকারণেই ফেতনায় পতিত হতে পারে। যার দায় আকর্ষণকারীনী নারীকেও নিতে হবে। সুতরাং নারীর কণ্ঠও একরকম পর্দার আওতায় চলে এসেছে। নারীরা নারী মহলে আলোচনা বা ওয়াজ করতে পারে। কিন্তু পুরুষ মহলে পর্দার আড়াল থেকেও তারা কেরাত, হামদ-না’ত বা ওয়াজ নিঃশর্তভাবে করতে পারে না। অল্প বয়সী বালিকারা যারা এখনও প্রকৃতই শিশু রয়েছে, তারা এসব পরিবেশন করতে পারে। যাদের ওপর এখনও পর্দা ফরজ হয় নি। নারীদের কেরাত, না’ত বা ওয়াজের রেকর্ড পরিচ্ছন্ন অন্তরের বয়সী ব্যক্তিত্ববান ও দায়িত্বশীল পুরুষের জন্যও ফেতনা থেকে মুক্ত নয়। সাধারণভাবে তরুণ, যুবকসহ সব পুরুষের জন্য কীভাবে নিরাপদ হতে পারে। এর মধ্য থেকে দিলের খাহেশাত পূরণের নিয়ত না থাকলেও অনিচ্ছাকৃত ভালো লাগাটুকু যে একসময় গুনাহের পর্যায়ে চলে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কি? সুতরাং এটি নাজায়েজ বিষয়ের মতোই এড়িয়ে চলতে হবে। ইমাম সাহেবও এর বাইরে নন। তবে, এজন্য যেমন কোনো মুসল্লির নামাজ অশুদ্ধ হবে না, ইমাম সাহেবেরও ইমামতি অশুদ্ধ হবে না। গুনাহকে গুনাহ ভেবে করলে তা ছাড়ার বা তওবা করার সুযোগ থাকে। আর গুনাহকে গুনাহ মনে না করলে ঈমানের মধ্যেও ঘাটতি দেখা দেয়। মাসআলা সবার জন্যই, তবে অধিক সতর্কতা অবলম্বনকারী অধিক নিরাপদ। সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।