Call

In memory of Lt General Khwaja Wasiuddin এই ভদ্রলোককে চেনেন? সম্ভবত না। আজকে এক জেনারেলের গল্প শোনেন। উনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন। বাঙালিদের প্রতি চরম বৈষম্য চলাকালেও তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থাকা সর্বোচ্চ র‍্যাংকধারী পূর্ববাংলার অফিসার ছিলেন। 

তার আরেকটা পরিচয় আছে, ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। একইসাথে নবাব সলিমুল্লাহ আর খাজা নাজিমউদ্দীনের আত্মীয় তিনি। জন্ম ঢাকার আহসান মঞ্জিলে, ১৯২০ সালে। ১৯৪০ সালে কমিশন লাভ করেন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়ে যোগ দেন ব্রিটিশ আর্মিতে। বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। মাত্র ৩ বছরের মধ্যে, ১৯৪৩ সালে মেজর হন। ১৯৪৫ সালের মধ্যে হন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং একই সাথে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সের ISSB বোর্ডের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট। অথচ তার বয়স তখন মাত্র ২৫! 

দেশভাগের পর চলে আসেন পাকিস্তানে। পাকিস্তান আর্মির ISSB বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, ঢাকা আর লাহোরে দুইটা ডিভিশনে GOC, একটা কর্প্সের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন তিনি। বাঙালি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে সেনাপ্রধানও হতে পারতেন। পাকিস্তান আর্মির মতন জায়গায় নিজের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সবসময় সাহসিকতার পরিচয় দিতেন জেনারেল ওয়াসি, এমনকি তার সিনিয়রদের সামনেও। তৎকালীন বাঙালি সৈনিকদের প্যাট্রন বা অভিভাবক ছিলেন যে অল্প কয়েকজন অফিসার তাদের মধ্যেই ছিলেন জেনারেল ওয়াসি, ব্রিগেডিয়ার মজুমদার, কর্নেল ওসমানীরা।

 বাঙালি সৈনিকদের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের গর্ব প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখেন জেনারেল ওয়াসি। সেইসময় পাকিস্তানি অফিসারদের নিজেদের প্রাদেশিক ভাষায় কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। আর্মি স্ট্যান্ডার্ড ভাষা ছিল ইংরেজি। গুটিকয়েক যারা বাঙালি অফিসার ছিলেন, তারাও বাংলা বলার সাহস পেতেন না। এসব নিয়মকে তুড়ি মেরে নিজের নেমপ্লেটে তিনি ব্যবহার করতেন বাংলা ভাষা। এমনকী ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্নেল কমান্ডেন্ট হিসেবে অভিষেকের সময় বক্তব্যও দেন তিনি বাংলায়।


 লাহোর এবং শিয়ালকোটে ৪ এবং ৫ ইস্ট বেঙ্গলের প্রেজেন্টেশন বক্তব্য দেন সম্পূর্ণ খাঁটি বাংলায়। পরবর্তীতে জেনারেল খলিল বলেন, শিয়ালকোটের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেলুচিস্তানের কসাই খ্যাত জেনারেল টিক্কা খান। ওয়াসিউদ্দিনের বাংলা বক্তব্য তিনিসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসাররা যেন ভেড়ার মতন শুনতে থাকেন। জেনারেল ওয়াসির এমন স্পষ্টবাদিতা, স্পর্ধা ও সাহসিকতা সবসময়ই পাকিস্তানিদের জন্য তেতো ছিল। কিন্তু অফিসিয়ালি তারা কিছু করতেও পারতেন না। জেনারেল ওয়াসি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন সবসময়। কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে কর্প্স কমান্ডার থেকে তুলনামূলক অ-গুরুত্বপূর্ণ অর্ডন্যান্স জেনারেলের দায়িত্বে পাঠায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে আসতে পারেন নি তিনি। তবে ১৯৭৩ সালে ফিরে আসেন তিনি বাংলাদেশে। জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার যথাক্রমে কুয়েত এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত করেন। পরে জাতিসংঘে বাংলাদেশী স্থায়ী রিপ্রেজেনটেটিভ হন তিনি। ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন অন্তরালে থেকে যাওয়া এই বীর। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। তার প্রতি রইলো অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।  

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ