শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
himu০১

Call

হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। হক অর্থ অধিকার, দাবি বা পাওনা। সে হিসেবে হাক্কুল্লাহ্ অর্থ আল্লাহর অধিকার, দাবী বা পাওনা। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এসব হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক হিসেবে পরিগণিত হয়। ইবাদ শব্দটি আরবি আবদ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ দাস বা বান্দা। কাজেই হাক্কুল ইবাদ বলতে বুঝায় বান্দার হক, বান্দার অধিকার বা বান্দার পাওনা। লেনদেনে ধোঁকা, বাটপারি, কথা দিয়ে কথা না রাখা, কথায় কথায় অভিশাপ দেওয়া, কথার খোঁটা বা গালিগালাজ করা, হিংসা বা নিন্দা করা, কাউকে হেয় মনে করে মিথ্যা কথা বলা, কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা, সালাম না দেওয়া, জানাজায় অংশ না নেওয়া, অন্যের ছবি বিকৃত করা, অন্যের ক্ষতি করা, কাউকে ধোঁকা দেওয়া, কারো সঙ্গে প্রতারণা করা, অন্যের অর্থের লোভ করা, গীবত বা পরচর্চা করা, শত্রুতা করা, অন্যের ঘুম বা ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটানো, নিজকে জাহির করার জন্য অহংকার করা এসব হলো হাক্কুল ইবাদের পরিপন্থী কাজ। এ সকল বিষয়ে সচেতন থেকে বান্দার প্রতি সঠিক আচরণ করায় বান্দার হক আদায় যা হাক্কুল ইবাদ হিসেবে গণ্য। মানুষকে কষ্ট দেয় এ ধরনের সকল কাজ থেকে বিরত থাকা হাক্কুল ইবাদ। মহান আল্লাহ বলেন- “তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করোনা আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, ইয়াতিম, মিসকিন, প্রতিবেশি, পার্শ্ববর্তী সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয় আল্লাহ্ পছন্দ করেন না তাদেরকে, যারা দাম্ভিক ও অহঙ্কারী’ (সূরা আন নিসা : আয়াত ৩৬)। এ আয়াতের নির্দেশনায় বুঝা যায় আল্লাহর হক হিসেবে যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কোরবানি এসব ইবাদত করতে হবে, তার সাথে সাথে বান্দার নানান ধরনের হকও গুরুত্ব সহকারে আদায় করা জরুরি। মাতা-পিতার হক সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন- মা সবার আগে সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার। এভাবে তিনি পর পর তিনবার জিজ্ঞাসার জবাবে মাকে সর্বোত্তম হকদার বলে চতুর্থবার পিতাকে হকদার হিসেবে উল্লেখ করেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ) মাতা পিতার পরে প্রথমেই আত্মীয় স্বজনের অধিকার বা হক আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।” (বুখারী শরীফ) ইয়াতিম ও মিসকিনদের জন্য পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে “কখনো যেন এরূপ না হয় যে, তোমরা ইয়াতিমদের সন্মান করোনা; আর মিসকিনদের খাদ্যদানে উৎসাহিত করোনা।’’ (সূরা: ফজর : আয়াত ১৭ ও ১৮) যারা দুনিয়ার জীবনে ইয়াতিম, মিসকিন, দুস্থ ও অসহায়দের ওপর ইহসান করে, আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে পরকালে জান্নাতের বহু নিয়ামত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতিবেশি মানব সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেজন্য প্রতিবেশির হককে ইসলামে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তদ্রুপ যারা মুসাফির হিসেবে আশপাশে থাকবেন তারাও প্রতিবেশির ন্যায় হকদার হবেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন- “যে আল্লাহ্ ও আখেরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশির সাথে সদাচারণ করে।” (মুসলিম শরীফ) আমাদের পরিবারে যারা কাজের লোক হিসেবে নিয়োজিত থাকেন তাদেরও একই ধরনের খাবার, পরিধানের বস্ত্র এবং ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মহান আল্লাহ্ হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক সম্পর্কে বেশ কয়েকটি আয়াত নাজিল করেছেন। ঝগড়া হলে মিমাংসা করে নেওয়ার ব্যপারে বলা হয়েছে- “নিশ্চয় মুমিনরা পরষ্পর ভাই ভাই, তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে মিমাংসা করে দাও আর আল্লাহ্কে ভয় করো যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’’ (সূরা আল হুজরাত: আয়াত ১০)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ