শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
himu০১

Call

ইসলামী সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে জীবিকা অর্জন করতে হবে। রিজিক অন্বেষণে বিচরণ করতে হবে বিস্তৃত পৃথিবীতে। আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব, তোমরা তার পৃষ্ঠে বিচরণ কর এবং তাঁর দেওয়া রিজিক আহরণ কর। শ্রম বলতে বোঝায় কোনো দ্রব্যের উৎপাদন বা রাষ্ট্রের সেবায় ব্যক্তির একক বা যৌথ প্রয়াস। শ্রম দারিদ্র্য মোকাবিলার প্রথম হাতিয়ার। সম্পদ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে প্রেরণ করেছেন এবং পৃথিবীকে আবাদ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর পৃথিবীকে আবাদ, বসবাসযোগ্য করার অন্যতম উপাদান হলো শ্রম। আল কোরআনে হজরত সালেহ (আ.)-এর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘হে আমার জাতি! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনিই জমিন থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন।’ শ্রমের ব্যাপারে ইসলামের মূলনীতি : ক. ইসলাম প্রত্যেক নাগরিককে স্ব স্ব যোগ্যতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে যে কোনো কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করার অবাধ স্বাধীনতা দান করে। রাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র কোনো নাগরিককে গ্রহণে বাধ্য করে না। অনুরূপ ইসলামে নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তি ও সমাজের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিকর কর্ম ছাড়া যে কোনো কাজে ইসলাম বাধা সৃষ্টি করে না। খ. যে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যবস্থা ও বিধি-বিধান বলবৎ আছে, সেই রাষ্ট্রের প্রত্যেকে নিজের শ্রমের ফসল ভোগ করতে পারে এবং নিজের মৌলিক প্রয়োজন ও পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। ইসলামী ব্যবস্থায় কোনো শ্রমিক নিজের শ্রমের ফল ও ফসল থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। শ্রমিক তার ঘাম শুকানোর আগে শ্রমের বিনিময়প্রাপ্ত, এটাই ইসলামের শিক্ষা। শ্রমের বিনিময়দানে কোনো ধরনের গড়িমসি করা চলবে না। শ্রমের যথাযথ মূল্য না দেওয়া একটি জুলুম। জুলুম ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। শ্রমের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করে কেউ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারে। ইসলাম তাতে বাধা সৃষ্টি করে না। শ্রমিক তার সম্পত্তির মাধ্যমে উপার্জনের নতুন পথ উন্মুক্ত করতে পারে। জীবনের মানোন্নয়ন করতে পারে অক্ষমতা ও বার্ধক্যের সময় উপকৃত হওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে বা নিজের সন্তান-সন্ততি ও ওয়ারিশদের জন্য ব্যবস্থা করতে পারে। যেসব চিন্তা ও মানসিকতার কারণে মানুষ কর্মবিমুখ ও শ্রমদানে অনীহা প্রকাশ করে; ইসলাম তার যথাযথ মূলোৎপাটন করেছে। ইসলামে শ্রমের ফজিলত : রসুল (সা.) বলেছেন, সর্বোত্কৃষ্ট উপার্জন হলো পুণ্যময় সততাময় বাণিজ্য ও মানুষের নিজের হাতের কর্ম। ব্যবসার সঙ্গেও শ্রম জড়িত। কোরআন-হাদিসে মুমিনদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমের মাধ্যমে হালাল উপার্জন করতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। তিনি বলেন, ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যেন তোমরা সফলকাম হও।’ আমরা শ্রমের মর্যাদা ভালোভাবে অনুভব করতে পারি যখন দেখি সব নবী-রসুল শ্রম ও শ্রমভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। বৈধ উপার্জনের জন্য শ্রম ও কর্ম করা নবী-রসুল ও সাহাবায়ে কিরামদের সুন্নাত বা রীতি। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা,) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যত নবীই প্রেরণ করেছেন সবাই মেষ চরিয়েছেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি? তিনি বরলেন, হ্যাঁ আমিও নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের মেষ চরাতাম।’ শ্রমিক হওয়া সাহাবিদেরও সুন্নাত, হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.)-এর সাহাবিরা স্বশ্রমিক ছিলেন।’ অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘স্বশ্রমে নিজের হাতে মানুষ যে উপার্জন করে তার চেয়ে উত্তম বা পবিত্রতর উপার্জন আর কিছুই হতে পারে না। আর দাউদ (আ.) স্বশ্রমে নিজের হাতে উপার্জন করে খেতেন।’ আমাদের নবী-রসুল ও সাহাবিদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ দেশেও বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষের যে শ্রমক্ষেত্র রয়েছে সেখানে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে একে-অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা কোরআন, সুন্নাহ ও ইসলামের আলোকে কার্যকারিতা থাকলে সবকিছু স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। শ্রমজীবী মানুষের শ্রম ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও ইসলামের প্রেরণায় আমাদের এই বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের দরবারে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ