এই দুনিয়াটা ইমানদার ব্যক্তির জন্য একটু কঠিন। আর শত চেষ্টার মাঝেও ইমান ধরে রাখতে না পারার কারন হচ্ছে মুমিনদের উপর আল্লাহর পরীক্ষা।
ঈমানের দৃঢ়তার উপর ভিত্তি করে বান্দাদের পরীক্ষা করা হয়। যার ঈমান যত মজবুত তার পরীক্ষাও হয় ততো কঠিন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮)।
আল্লাহ তায়ালা তার সকল বান্দাহকে সব সময় একই অবস্থায় রাখেননা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আল্লাহর বান্দাহরা নানা ধরনের বিপদাপদের সন্মুখীন হয়ে থাকেন। যারা এই ধরনের বিপদের সন্মুখীন হননা তারা তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারেননা,যারা এই ধরনের বিপদে অতীতে পতিত হয়েছে বা বর্তমানে পতিত আছে।
আল্লাহ তায়ালা নানা কারণে ঈমানদারদের পরীক্ষা করেন।আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করেন কারা ঈমানের দাবীতে কতটুকু সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী এবং কারা কতটুকু ধৈর্য্যশীল।
আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষার মাধ্যমে যাছাই করেন কে ঈমানের দাবীতে কতটুকু খাঁটি আর কে কপট। সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তিগণ সব সময় সত্য পথে অটল ও অবিচল থাকেন। কোন অবস্থাতেই জাগতিক সুবিধার জন্য আখিরাতের পুরুষ্কার নষ্ট হতে দেয়না। তারা জাগতিক বিপদাপদকে হাসিমুখে বরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা অতীতেও যারা ঈমানের দাবী করেছেন তাদের সকলকে পরীক্ষা করেছেন। কেন তিনি পরীক্ষা করেছেন তা তার ভাষায়ঃ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যাতে তোমাদের অবস্থা যাছাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল। (মুহাম্মদঃ ৩১)।
আল্লাহ তায়ালা ল কুরআনে এই কথা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন যে ঈমানের ঘোষণা দিলে পরীক্ষা আসবেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
আলিফ- লাম মীম। লোকেরা কি মনে করে রেখেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে আর পরীক্ষা করা হবেনা? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তী সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী। আর যারা খারাপ কাজ করছে তারা কি মনে করে বসে আছে তারা আমার থেকে এগিয়ে চলে যাবে? বড়ই ভূল সিদ্বান্ত তারা করেছে। যে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার আশা করে 'তার জানা উচিত' আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন। যে ব্যক্তি প্রচেষ্টা সংগ্রাম করবে সে নিজের ভালর জন্যই করবে। আল্লাহ অবশ্যই বিশ্ববাসীদের প্রতি মুখাপক্ষেীতাহীন। আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তাদের পাপ গুলো আমি তাদের থেকে দূর করে দিব এবং তাদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজগুলোর প্রতিদান দেবো। (আনকাবুতঃ ১-৭)।
দুনিয়াতে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় কোন ছাত্র/ছাত্রী ভাল পড়াশুনা করেছে আর কে ভালভাবে পড়াশুনা করেনি। একজন ছাত্রের সফলতা ব্যর্থতা যেমনি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় অনুরুপভাবে একজন মু’মিনের মর্যাদা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। পরীক্ষা ছাড়া যেমনিভাবে একজন ছাত্র/ছাত্রী এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে যেতে পারেনা অনুরুপভাবে ঈমানের পরীক্ষা ছাড়া আমরা জান্নাতে যেতে পারবোনা। এই প্রসংগে তিনি ইরশাদ করেনঃ
তোমরা কি মনে করছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের উপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের উপর সে সব নেমে আসেনি। তাদের উপর নেমে এসেছিল কষ্ট ক্লেশ ও বিপদ মুসিবত,তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রাসূল এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল,আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে এই বলে সান্তনা দেয়া হয়েছিল,অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটে। (বাকারাঃ ২১৪)।
আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখেন তাঁরা কঠিন অবস্থায় না পড়লে খুব কমই অনুধাবন করেন যে স্বাভাবিক অবস্থা আল্লাহর বিরাট নিয়ামত।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদেরকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই প্রমাণ করতে হয় যে তারা কতটুকু আল্লাহ প্রেমিক। হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে নমরুদের আগুণে ফেলে পরীক্ষা করেই পরীক্ষা শেষ করা হয়নি এক পর্যায়ে তার প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবাণীর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষা করা হয়। এইভাবে অতীতে বিভিন্ন নবী রাসুলকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এইভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছেন।