নেতৃত্বগুণ যেন শেখ মুজিবের সহজাত। স্কুলজীবনে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক হামিদ মাস্টারের হাতে দীক্ষা নেন তিনি। প্রিয় শিক্ষক হামিদ মাস্টারের সঙ্গে ধর্মগোলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছেলেবেলায়ই শেখ মুজিবের ভেতর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার সূত্রপাত হয়। গ্রামে ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিতেও পটু ছিলেন শেখ মুজিব। দু’গ্রামের লোকের মধ্যে বিদ্যমান হানাহানি ও মারামারি মীমাংসা করেছেন। জন্মগতভাবেই শেখ মুজিবের ছিল দুঃখী ও মেহনতি মানুষের প্রতি একটি অতি সংবেদনশীল হৃদয়। শোষিত মানুষের এ দুঃখ-বঞ্চনা তাকে গভীরভাবে পীড়া দিত।

নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্মোহন। বাঙালি জাতির সামনে মুক্তিদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অন্যায়ভাবে স্থগিত ঘোষণার পর তিনি একটি কার্যকর সরকার পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি হচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র নেতা, যিনি অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি লোকের জন্য একটি কার্যকর সরকার গঠন করেছিলেন। 

আমরা সচরাচর দেখি, বেশিরভাগ নেতার কথা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। এ সংকটটি এদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে প্রকটভাবে লক্ষ করা যায়। তারা মানুষের মুক্তির কথাই বলে; কিন্তু মানুষ তাদের কথা বোঝে না। অনেকেই ‘পুঁজিবাদ’, ‘সাম্রাজ্যবাদ’, ‘বুর্জোয়া’, ‘পেটিবুর্জোয়া’ ও ‘প্রোলেটারিয়েট’ ধরনের কিছু জটিল শব্দ ছাড়া সাধারণ মানুষের ভাষায় যেন কথাই বলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন না। কৃষক-শ্রমিক-রাজনীতিক-শিক্ষক সবাই তার কথা বুঝতে পারত। বিস্ময় হয়ে শুনত। চুম্বকের মতো তিনি শ্রোতাদের টানতেন।

তৎকালীন বৈশ্বিক জটিল প্রেক্ষাপটে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার প্রয়োজন ও ভূমিকা ছিল অপরিহার্য, যিনি একইসঙ্গে মানবিক ও আপসহীন। তৎকালীন অনেক বাঘা বাঘা নেতৃত্বকে পেছনে ফেলে শেখ মুজিব সবার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন তার সাহস ও স্বকীয়তায়। তার সামগ্রিক ত্যাগ ও সাহসী নেতৃত্বের ফলেই বাঙালি পেয়েছে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ