শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

মানত নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর।

মানত শব্দের সঙ্গে সব ধর্মের অনুসারীরাই কম-বেশি পরিচিত। মানতের বিষয়ে সব ধর্মের অনুসারীরা একমত পোষণ করলেও মানতের ক্ষেত্র নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। যেমন- মানত কোথায় করবে, মানত কীভাবে করবে, মানতের যৌক্তিকতা কি এবং আদৌ মানতের বৈধতা আছে কিনা ইত্যাদি। সাধারণত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষে কোনো কিছু উৎসর্গ করাকে মানত বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মানত করা জায়েজ। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূর্ণ করে। ’ হাদিসে বাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মানত করে, সে যেন একে আদায় করে। ’ তবে ইসলাম মোটেও মানত করার জন্য উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করেনি। এখন তো মানতের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়- এটা করব ওটা পেলে। মানত করা হয়ে থাকে মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর শর্ত আরোপের মাধ্যমে। যে কাজটি সত্যিকার অর্থে শুদ্ধ ও সুন্দর নয়। জায়েজ কিন্তু বিষয়টি সুন্দর নয়। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘কৃপণ ব্যক্তির মাল থেকে আল্লাহতায়ালা কিছু বের করেন। ’ কৃপণরা আল্লাহর রাস্তায় দান করে না। তখন আল্লাহতায়ালা তার বিভিন্ন রোগবালাই, বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে দেন আর তখন সে মানত করে বসে। আল্লাহ এই কৃপণের মাল থেকে এভাবেই গ্রহণ করে থাকেন। এটি ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী নাজায়েজ নয়- জায়েজ রয়েছে। মানতের পূর্বশর্ত হলো- মানতের বস্তু, প্রাণী এবং নগদ অর্থ হালাল হতে হবে। সেই সঙ্গে মানতের নিয়ত সহিহ-শুদ্ধ হতে হবে। হারাম কিংবা অবৈধ কোনো বস্তুকে মানত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। কোনো উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য অবশ্যই মানত করতে হবে এমন বাধ্যতামূলক বিধি-বিধানও ইসলামে নেই। তবে কেউ যদি মনে করেন, আমি এ কাজে সফল দশ রাকাত নফল নামাজ আদায় করব এবং দশটি নফল রোজা রাখব এতে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। দান সদকা যেমন আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য করতে হয়। তদ্রুপ মানতও আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আর কিছু (ব্যয় করার জন্যে) মানত করো, আল্লাহ পাক অবশ্যই জানেন। ’ -সূরা বাকারা : ২৭০ মানত নিয়ে সমাজে নানান ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তাই মানতের নিয়ম-কানুন জানা প্রয়োজন। যেমন, কেউ মানতের নিয়ত করল যে, অমুক (হালাল) কাজে সফল হলে পশু (ছাগল, ভেড়া, গরু ও মহিষ ইত্যাদি) দিয়ে একশ’ দরিদ্রকে খাওয়াবে। এ ধরনের মানত আদায়ের ক্ষেত্রে দোষের কিছু নেই। দরিদ্রদের খাওয়ানো সওয়াবের কাজ। এমন কাজে আল্লাহ খুশি হন। কোরআন ও হাদিস অনুমোদিত বৈধ বিষয় দিয়ে মানত আদায় করতে হবে। হালাল বস্তু বা প্রাণী দিয়ে মানত আদায় করতে হয়। অদ্ভুত, উদ্ভট ও ইসলাম সমর্থন করে না এমন কিছু দিয়ে মানত করা জায়েজ নেই। যেমন কেউ নিয়ত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে দশবার অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করব। এমন মানত বৈধ হবে না। কারণ, নফল নামাজ আদায় ও অজু করার বিষয়টি উত্তম কাজ হলেও কোনো নামাজ আদায়ের পূর্বে দশবার অজু করার বিধান নেই। এ জন্যে তার মানত শুদ্ধ হবে না। আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে যে কোনো সৎকর্ম সম্পাদন করা উত্তম। তাই যদি মানত করতেই হয়- তাহলে উপকারি বিষয়ে মানতের নিয়ত করতে হবে। অসম্ভব, কাল্পনিক, অহেতুক, হাস্যকর ও অবিবেচনাপ্রসূত বিষয়ে মানত করা যাবে না। তেমনি মানত পূরণে এমন কিছু করা যাবে না। এছাড়া কোনো ব্যক্তি বিশেষকে খুশি করার উদ্দেশ্যে, কিংবা জীবিত বা মৃত মানুষের প্রতি উৎসর্গ করে কোনো মানত করা কিংবা মানত আদায় করা যাবে না। এটা ইসলাম সমর্থন করে না

ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ