শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

1905 সালে প্রকাশিত আইনস্টাইনের পাঁচটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধনের একটি ছিল ব্রাউনীয় গতি ব্যাখ্যা নিয়ে । নিচে সেই নিবন্ধন এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতেছি। (গল্পের আকারে )


মাঝ দুপুরে কোনাে ছিদ্রপথে ঘরে যখন তীব্র আলাে ঢােকে, দেখবেন ধুলাবালি ইতস্তত ঘােরাঘুরি করছে। আপনি যদি কোনাে একটি ধূলিকণার ওপর চোখ রেখে অনুসরণ করেন, অবাক হবেন। কণার গতিপথ একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত। কখন কোন দিকে যাবে বলতেই পারবেন। কিন্তু এমন অদ্ভুতুড়ে গতির কারণ কী?


প্রথমে মনে হতে পারে বাতাসের কারণে এমন হচ্ছে। একটু লক্ষ করলেই দেখবেন, বাতাসের গতি এর কারণ নয়। এক মুহূর্তে পাশাপাশি দুটি কণার গতি দুদিকে তাে আর বাতাসের জন্য হতে পারে না। এমন গতি মানুষ বহু আগে থেকেই দেখে আসছে।


কিন্তু প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয় ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী। রবার্ট ব্রাউনের হাত ধরে। তিনি ১৮২৭ সালে একই ধরনের গতি লক্ষ করেন পানিতে পরাগরেণুর মধ্যে। দেখলেন, আঁকাবাঁকা পথে দ্রুতগতিতে পানিতে এদিকসেদিক ছুটে বেড়ায়। প্রথমে তিনি ভাবলেন, জীবিত পরাগরেণু জৈবিক কারণে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাই তিনি দনাদার কণা ও মৃত পরাগরেণু নিয়ে পরীক্ষা করলেন।


সেগুলাের একই রকম আঁকাবাঁকা পথে চলতে দেখলেন। এ গতির নাম দেওয়া হলাে ব্রাউনীয় গতি ।


কিন্তু ওই নাম পর্যন্তই! ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা দেওয়া কিন্তু সহজ হলাে না। এর পেছনে যেন এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করে! ব্রাউন নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। পানিতে কোন ধরনের তড়িৎপ্রবাহ অথবা তরল পদার্থে তাপের পরিচলন, স্বতঃবাষ্পীভবন—কোনাে প্রক্রিয়াই এই গতির কারণ নয়। এরপর বহু বিজ্ঞানী কাজ করেছেন এই গতি নিয়ে। কিন্তু কোনাে কূলকিনারা হয়নি প্রায় আশি বছরেও। অবশেষে সাফল্য ধরা দিল ১৯০৫ সালে । ওই বছর আইনস্টাইন পাঁচটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন ।


এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা। পরাগরেণুর অদ্ভুত গতিপথের ধারণা ব্যাখ্যায় তিনি সাহায্য নেন অণুর ধারণার । বিজ্ঞানীদের কাছে তখন অণু-পরমাণুর ধারণা ছিল একটা দার্শনিক মত; যা ব্যাখ্যার সুবিধায় ব্যবহৃত হতো। আইনস্টাইন এ নিবন্ধে যুক্তি দেন,পানির অণুগুলাে তাপীয় শক্তির জন্য খুব দ্রুত কাপতে থাকে। অণুগুলাে এত ক্ষুদ্র যে এই


কম্পন খালি চোখে, এমনকি অণুবীক্ষন যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। ছোট্ট ৰূর্ণ যেমন পরাগরেণুর মাকে এ সে পড়লে অণুগুলাের সঙ্গে এদিক-সেদিক ধাক্কা


খেতে থাকে। ক্ষুদ্র অণুর ধাক্কা সবদিকে সুষম হয় না । কোনাে দিকে ধাক্কা বেশি, কোনাে দিকে ধাক্কা কম। যেদিকে থাকা বেশি, কণাটি সেদিকে চলতে শুরু করে । আবার অণুর ধাক্কায় হয়তাে অন্য কোনাে দিকে চলা শুরু করে। পরাগরেণু খালি চোখে দেখা যায়। তাই তার চলনও চোখে পড়ে। ধাক্কা যেহেতু সুষম নয়, তাই চলনও এলোমেলাে । পরের বছর স্বতন্ত্রভাবে পােলিশ পদার্থবিজ্ঞানী মারিয়ান স্মেলুচৌস্কি একই ব্যাখ্যা দেন।


আইনস্টাইন লক্ষ করেন, তরলের মধ্যে কণার এই গতির সঙ্গে পর্যবেক্ষণের সময়ের একটি সম্পর্ক রয়েছে। যত সময় ব্যয় কণাটির সরণ তত বেশি হয়।


গাণিতিকভাবে কণার সরণ আর সময়ের সম্পর্ক তিনি দেখান। কপার সরণ সময়ের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক। ব্রাউনীয় পতি ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে অবশ্য আইনস্টাইন কাজ শুরু করেননি। তিনি চেয়েছিলেন বাপনের সহপের সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক স্থাপন করতে। তা করতে গিয়েই তিনি পান ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা।


আবার এই ব্যাখ্যা থেকেই তিনি ব্যাপনের সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক স্থাপন করেন। আইনস্টাইনের এই ব্যাখ্যা যুগান্তকারী । কারণ, এ ব্যাখ্যাই অণুর ভিত্তিকে পাকাপোক্ত করে। ১৮৩ সালে জন ডাল্টনের হাত ধরে শুরু হওয়া আধুনিক রসায়নের মজবুত ভিত্তি গড়ে দেওয়ার কাজটি অণুর ব্যাখ্যার মাধ্যমেই হয়। অ্যাভােগেড্রো সংখ্যা আধুনিক রসায়নের মূল কেন্দে অবস্থিত। অ্যাভােগেড্রো সংখ্যা গণনার একটি পদ্ধতিও আইনস্টাইনের এই গবেষণাপত্র থেকে পাওয়া যায় ।


১৯০৮ সালে বিজ্ঞানী জিন পেরিনের ওপর ভিত্তি করেই সফলভাবে অ্যাভােগেড্রো সংখ্যার মান নির্ণয় করেন। এ জন্য ১৯২৬ সালে তিনি নােবেল পুরস্কার পান। এ দ্বারা পরমাণুর আকার, এক মেলে কতটি পরমাণু আছে,


গ্যাস অণুসমূহের আণবিক ভর গণনা করা সম্ভব হয়। বর্তমানে অণু-পরমাণুর অস্তিত্বের তন্তু খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। শতবর্ষ আগে অপুর উপস্থিতি সম্পর্কে দেওয়া আইনস্টাইনের তথ্য রীতিমতাে বিষয়ক ছিল। এ ব্যাখ্যার আগে পরমাণু নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানী ও রসায়নবিদদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক ছিল। পরমাণুর আসলেই কোনাে অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়েই ছিল


দ্বন্দ্ব। আইনস্টাইনের এই গবেষণাপত্র সে বিতর্ক অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরমাণুর অস্তিত্বের ঘাের বিরােধীদের মধ্যে অন্যতম উইলিয়াম অসওয়াক্ত এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তার ধারণা পরিবর্তন করেন । জন ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হলেও সত্যিকার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি গড়ে দেন সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। 


সূত্র: এলিমেন্টস অব ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি (আশাকরি বুজতে পেরেছেন )এর থেকে সহজে বলতে গেলে আরো জটিল হয়ে যেতে পারে ) ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ