সকালে উঠিয়া হাত মুখ ধুইয়া শাক আর আলুভর্তা ঝাল এক সাথে করে ভাত খেয়ে শেষ পাতে একটি পাকা আম খেলাম। তারপর কিছুক্ষন বসে বিশ্রাম নিয়া বাইরে বের হলাম। উদ্দেশ্যে বিলের পাশে ঘেরের ঝড়ে ভাংগা কুড়ে ঘরে বসে ইন্টারনেটে সংবাদ, নোটিশ দেখে, বিনোদন করে সময় কাটানো। কুড়ে ঘরটি জনৈক জুনিয়র বন্ধুর। পাশে খেজুর গাছ, তাল গাছ, খই গাছ(স্থানীয় নাম) রয়েছে। হঠাৎ খেজুর গাছ থেকে একটি পাকা খেজুর আমার পায়ের উপর পড়ে গতি কমে মাটিতে পড়ল। আমি নিউটনের মত যত্তসব বাজে কথা না ভাবিয়া, ভাবিলাম এ বছর এখনো খেজুর খাইনি। কাজেই এটি দিয়া না খেতে পারার অপবাদ ঘুচাই। তারপর সেটি পানিতে না ধুইয়া, হাতও না ধুইয়া খালি হাতে খেজুরটি মালিশ করে মুছে মুখবিবরে পুরিয়া দিলাম। এপাশ ওপাশ চর্বন করিয়া আটি ফেলে দিয়া সগর্বে অপবাদের কালি রঙ্গিন করিলাম। আমি কিন্তু খেজুর গাছের নিচেই বসে আছি। পাশে ভাংগা কুড়ে ঘরটি থাকলেও সেখানে দুটো বাচ্চা খেলছে বলে আমি সেখানে বসিনি। কিছুক্ষন পর আমার সেই বন্ধুটি তার ছোট বাচ্চা এবং "দা" দড়ি নিয়া আসিল। বন্ধুটির বড় ভাই আগে থেকেই পাশে ছিল। এবং আরও কিছু ছোট ছেলে মেয়ে সহ আমাদের বয়সী অন্য একজন আসলো। বন্ধুটির মেজ ভাই ও তার স্ত্রী বাচ্চাও আসিল। বেশ একটা হই হুল্লোড় করার মত দল তৈরি হইল। বন্ধুটির উদ্দেশ্য তাল গাছে উঠে তাল কাটা। বন্ধুটি গাছ বাইতে পারে জানা ছিল কিন্তু তাল গাছে চড়তে পারে তা অবশ্য ভাল জানতাম না। প্রস্তুতি নিয়া সে তাল গাছে উঠে পড়ল। কিন্তু শেষ রক্ষা হইল না। তাল গাছের মাথার দিকটা অপেক্ষাকৃত মোটা থাকায় বেশ চেষ্টার পর উঠতে না পেরে নেমে আসলো। তারপর আরেকজনকে ডাকা হইল। তিনি দক্ষ গেছো হিসাবে তাল গাছে উঠে পড়লেন। আমি এতক্ষনে সেই ভাঙ্গা কুড়ে ঘরে উঠে বসে তক্তার মাচাতে শুয়ে পড়ে মোবাইলে এটা সেটা করে সময় কাটাচ্ছি। তালের কাদি কাটা হল। গেছো নিচে নামলেন। এবার তালের চোখ কেটে খাওয়ার পালা। একে একে তাল কেটে ছেলে মেয়েদের হাতে দিচ্ছে, তারাও খাচ্ছে। এক পর্যায়ে একজন আমাকেও একটি দিতে বলিল। আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু ওদিকে খেয়াল করছিনা। একটি মেয়ে( এসে একটি কাটা তাল আমার পাশে রেখে খেতে বলল। আমি খাইনা বলে নিয়ে যেতে বললাম, কিন্তু তিনি না নিয়া তাল কাটার স্থানে চলে গেল। আমি আগের মতই শুয়ে মোবাইলে ব্যস্ত। তখন বন্ধুটিও ডেকে খেতে বলল। আমি জোরে সোরে বললাম, এই আমি তাল তেমন পছন্দ করিনা, তোর পোলার দে, ও খেয়ে নিক। যদিও আমার ঐ খেজুরটির মতই এ বছর এখনো তাল খাওয়া হয়নি, কিন্তু এটা সত্য যে তালের প্রতি আগ্রহ না। আনন্দ সহকারে খাওয়ার ইচ্ছাটা নাই। আবার একে বারেই তাল খাইনা এমনটিও নয়। যাই হোক এভাবে খানিক ক্ষন পর ভাবলাম, নাহ! দিয়েই গেল, না হয় খেয়েই নিই। ভাবিতে ভাবিতেও কিছুক্ষন কেটে গেল। তারপর উঠিয়া কুড়ের মাচা থেকে নিচে নেমে হাত ধুয়ে নেওয়ার জন্য জুতা পায়ে দিতে পা নামালাম। দেখলাম জুতার পাশেই একটি ছাগল শুয়ে আছে। যাই হোক, নিচে নেমে হাত ধুয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখি তালটির চোখ কাটা অংশে ছাগল চেটে খেতে চেষ্টা করছে। এই দৃশ্য দেখিয়া আমার অনুভূতি কি হইল পাঠকরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন? তবে জানাবেন আপনি এখানে কি মনে করিতেন? আপনার অনুভুতি কি?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে