F.Rahman

Call

তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব। কিন্তু গর্ত খোঁড়ার কাজটি তো আর তাত্ত্বিক বিষয় নয়। তাই এই কাজটি করার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধাগুলো কী কী হতে পারে, সেগুলো নিজের ধারনা থেকে বলার চেষ্টা করছি-

  • উচ্চ তাপ- পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রায় ১২০০ কিমি ব্যাসার্ধের সর্বাধিক উত্তপ্ত গোলকীয় অঞ্চল অত্যধিক গরম। ওই অঞ্চলের সার্বক্ষণিক তাপমাত্রা ৫০০০ থেকে ৫৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা কতটা মারাত্মক সে সম্পর্কে একটা তুলনামূলক ধারনা করতে পারেন এভাবে যে, এই তাপমাত্রা প্রায় সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান। সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও ৫৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
  • উচ্চ চাপ- স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে লোহা গলাতে ১৫০০ ডিগ্রী তাপমাত্রার দরকার পড়ে। কিন্তু পৃথিবীর কেন্দ্রে তার চারপাশের বস্তুর চাপ এত বেশি যে ৫০০০ ডিগ্রীতেও লোহা গলে না। সেই চাপ প্রায় ৩৬৫ গিগা প্যাসকেল, অর্থাৎ আমরা যে স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে অভ্যস্ত (১০১ কিলো প্যাসকেল), তার তুলনায় ওই চাপ প্রায় ৩৬ লক্ষ গুন বেশি।
  • অভিকর্ষ বলের অভাব- আমরা আমাদের নানান কাজে এই বলকে যে কত ভাবে কাজে লাগায়, তা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না। পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে গেলে অভিকর্ষ বল কমতে থাকবে, সেখানে খোঁড়াখুড়ি করতে গেলে এটা মাথায় রেখে প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হবে।
  • দূরত্ব- এখন পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বা গবেষণার কাজে আমরা মাত্র ৫/১০ কিলোমিটার গভীরে নামতে পেরেছি।সেই তুলনায় ১৩০০০ কিলোমিটার গভীরতা অত্যাধিক বেশি। দুটি সংখ্যার তুলনা করার জন্যে আমরা সাধারণত লগারিদমিক (সূচকীয়) স্কেলে তুলনা করি, যেটা প্রকৃত কাজের পরিমান বোঝাতে চূড়ান্ত রকম বেমানান। তুলনাটা বুঝতে সহজ হবে যদি, আপনি প্রথমে ১ থেকে ১০ গুণতে চেষ্টা করেন, তারপর আবার ১ থেকে ১৩০০০ গুনতে চেষ্টা করেন।

এরকম আরো নানান রকম বৈরী বিষয় আছে যা আমাদেরকে পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর বা তার আশপাশ দিয়ে গর্ত করার কাজটিকে প্রায় অসম্ভব করে রেখেছে। তাই আমরা বরং একেবারে মাঝ বরাবর না যেয়ে অনেকটা পৃষ্ঠ বরাবর যেতে পারি। সেক্ষেত্রে এসব সমস্যা এড়ানো যাবে।

এরকমই একটা চিন্তা মনে হয় ইউরোপ থেকে আমেরিকা যাওয়ার সোজা রাস্তা হিসাবে কল্পনা করা হচ্ছে। এটি করতে পারলে অনেক কম শক্তি ব্যয়ে (ঘর্ষন না থাকলে শুধুমাত্র অভিকর্ষের প্রভাবে) এবং (তাত্ত্বিকভাবে) মাত্র ৪২ মিনিটে যাতায়াত সম্ভব হবে। ওরকম একটি সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে যেকোন কিছু ছেড়ে দিলে বস্তুটি ঢালু পথে চলার মত গড়িয়ে গড়িয়ে চলতে শুরু করবে, চলতে চলতে গতি যাবে বেড়ে, আর সেই গতিতেই শেষের অর্ধেক উজান পথ পার হতে পারবে। শেষের দিকে বস্তুটিকে ধরে নিয়ে গর্ত থেকে তুলে আনতে হবে।

কিন্তু এরকম একটি একপেশে গর্তের মধ্যে দিয়ে চলতে গেলেও পৃথিবীর/পথের কাঠামোর সাথে তার ঘর্ষণ হবে, এখানে প্রচুর শক্তি ক্ষয় হবে। প্রচুর তাপ উৎপন্ন হবে। আর সেই তাপশক্তি কাজে লাগানোর থেকে, সেটা থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে হবে আগে।

পরিশেষে অপ্রাসংগিক হলেও, কিছু দরকারী উপলব্ধির কথা বলি-

  • আমাদের এই পৃথিবীতে, এবং সর্বোপরি- এই পুরো মহাজগতে আমাদের জন্যে বরাদ্দ বেশি না, অত্যন্ত সীমিত।
  • পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরে আর নিচে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের একটা স্বল্প পুরুত্বের চ্যাপ্টা জগতের মধ্যেই আমাদের জীবনধারনের পরিবেশ রয়েছে।
  • অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্যে পৃথিবী পৃষ্ঠের এই বর্তমান পরিবেশ হয়ত আমাদের উপযুক্ত থাকবে। পুরো পরিবেশটা বদলে যায়, সাথে আমরাও বদলায়। তবে সেটাও একটা সীমা পর্যন্ত সম্ভব হবে।
  • একটা বিশাল সিস্টেম যখন ভেঙে পড়তে (মানে দ্রুত বদলে যেতে) শুরু করে, তখন সেই পরিবেশের বাচ্চা-কাচ্চাগুলো চুনোপুটির মত ধুলোয় মিশে যায়।

তাই যেকোন প্রকার ঔদ্ধত্য পরিহার করে, আমাদের পরস্পরের মধ্যকার ব্যবধান ভূলে, মহাজগতের বিশালতার কাছে নিজেদের নগণ্যতা শান্তভাবে মেনে নিয়ে, সবাই মিলে একসাথে উপভোগ করাই আমাদের সকলের কর্তব্য।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ