F.Rahman

Call

যাবাবরের মতো আমেরিকার শহরে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। একটা করে বিয়ে করছেন। সংসার করছেন কিছুদিন। তারপর মনোমালিন্য, বিচ্ছেদ, শহর থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলেছেন আরেক শহরের দিকে। সেখানেও বিয়ে, সংসার, বিচ্ছেদ…তারপর আবার পথে। কিন্তু কাঠের একটা বাক্স হাতছাড়া করছেন না কখনো। ঘর-সংসারের মায়া যে লোক নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে পারেন, কী মোহে তিনি একটা সামান্য বাক্স আকড়ে ধরে চলেছেন বছরের পর বছর?

থমাস স্টোলৎজ হার্ভে। পেশায় চিকিৎসাবিদ। ১৯৫৫ সালের একটা মৃত্যু পাল্টে দেয় তাঁর জীবনধারা। স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েন। আসলে মৃত্যুটা যে-সে লোকের নয়। বিজ্ঞানের ইতিহাসকে ওলট-পালট করে দেওয়া মহামানব আলবার্ট আইনস্টাইন দেহত্যাগ করেন সে বছর ১৮ এপ্রিল। প্রিন্সটন হাসপাতালে। অনেকে আইনস্টাইনের মৃত্যুকে স্বেচ্ছামৃত্যু বলে মনে করেন। ডাক্তাররা সার্জারি করিয়ে ভালো করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইস্টাইন রাজি হননি তাতে। যদিও তখনও সার্জারিবিদ্যাটা আজকের মতো আধুনিক রূপ পায়নি। তাই অপারেশন করলেও আইনস্টাইন বাঁচতেন কিনা জোর দিয়ে বলার জো ছিল না। শেষ চেষ্টা তো করা যেত। আইনস্টাইনের বিরোধিতায় সেটাও হয়নি।

সেদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল হাসপাতাল প্রাঙ্গন। ভক্ত, সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান ভিড় ঠেলে, তাদের অগোচরে আইনস্টাইনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মর্গে। পোস্টমর্টেমের ভার পড়েছিল ড. থমাস হার্ভের ওপর। সেই পোস্টমর্টেমই কি কাল হয়েছিল হার্ভের জন্য? মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি? তবে সেদিন তাঁর মনে ছিল অন্য চিন্তা। আইনস্টাইনের শবদেহ ব্যবচ্ছেদের পর সরিয়ে রেখেছিলেন মহাবিজ্ঞানীর মগজ। কাজটা তিনি করেছিলেন গোপনে। জানাননি আইনস্টাইনের পরিবারকে। তাছাড়া আইনস্টাইন নিজেই চাননি তাঁর দেহের এতটুকু অংশ পৃথিবীতে টিকে থাকুক। এজন্য পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে বলেছিলেন তাঁর মরদেহ। সেই ছাই কোথায় ফেলা হচ্ছে সেটাও যেন কাকপক্ষিতে না জানে এমনটাই নির্দেশ ছিল মহাবিজ্ঞানীর। কারণ স্পষ্ট। ব্যক্তিপুজো পছন্দ ছিল না আইনস্টাইনের। কেউ যাতে তাঁর সমাধিক্ষেত্র পবিত্র দর্শনীয়স্থান বানিয়ে ফেলতে না পারে, মৃত্যু কিংবা জন্মদিনে ফুলের স্তূপে যাতে চাপা না পড়ে তার কবর, এজন্যই দিয়েছিলেন পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ। সেই নির্দেশের তোয়াক্কা না করে তাঁর মস্তিষ্ক সরিয়ে রাখা হলো। এতো স্রেফ চুরি!

অতটা নোংরা উদ্দেশ্য বোধহয় ছিল না ড. হার্ভের। কী এমন ছাঁচে গড়া আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক, যা তাঁকে শতকোটি মানুষের মধ্যে অনন্যসাধারণ করে তুলেছিল? এটাই যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলেন হার্ভে। তাই আধুনিক যুগের সবচেয়ে প্রতিভাধর মস্তিষ্কাটা তিনি সরিয়ে রেখেছিলেন। এ খবর শুনে বেজায় চটেছিলেন আইনস্টাইনের ছেলে হানস আলবার্ট। তবে হার্ভে তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হন, তাঁর উদ্দেশ্য অসৎ নয়। তাছাড়া আইনস্টাইন নিজেও একবার রাজি হয়েছিলেন তাঁর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করতে দিতে। সেটা তাঁর জীবদ্দশায়। পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সূত্রগুলো নিয়ে কাজ করবার সময় একদিন তাঁর মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হয়। স্ক্যানের ছবি নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ডাক্তার বাড়তি কিছু খুঁজে পাননি আইনস্টাইনের মস্তিষ্কে।

হার্ভে মস্তিষ্কটা খুলি থেকে বের করেন। তারপর সেটা চুবিয়ে রাখেন ফরমালিনের জারে। খুব বেশিদিন রাখা হয়নি প্রিন্সটন হাসপাতালে। হার্ভে বাড়ি নিয়ে আসেন মগজটা। মগজসহ জারটা বাক্সবন্দি করে তুলে রাখেন নিজের ঘরে। এরপরই শুরু হয় হার্ভের জীবনে উল্টোযাত্রা। প্রিন্সটন হাসপাতালের এক নার্সের সাথে তাঁর অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন ওঠে। সেটা নিয়ে হইচই। চাকরি যায় হার্ভের। তারপর পাততাড়ি গুটিয়ে চষে ফেলেন গোটা যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক স্ত্রী ত্যাগ করেছেন, কিন্তু যখের ধনের মতো আগলে রেখেছেন মহামূল্য মগজটাকে।

১৯৭৮ সাল। কেটে গেছে দীর্ঘ ২৩ বছর। সাধারণ মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছেন হার্ভে। মানুষ ভুলে গেছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কথাও। ঠিক তখনই একটা পত্রিকার প্রতিবেদন সাড়া ফেলে দেয় গোটা দুনিয়ায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয় নিউজার্সি মান্থলি নামের এক অখ্যাত ম্যাগাজিনে। লেখক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ষ্টিভেন লেভি। তিনি দাবি করেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করে তিনি থমাস হার্ভের খোঁজ পেয়েছেন। পেয়েছেন আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের সন্ধানও। ওয়াইচিটা নামের একটা ছোট্ট শহরে প্যাথলজির ব্যবসা খুলে বসেছেন হার্ভে। জায়গাটা নিউজার্সি থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরে। হার্ভের সাথে কথা বলেছেন তিনি। তুলেছেন আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের প্রসঙ্গও। তখন হার্ভে তাকে ল্যাবরেটরির এক কোণে পড়ে থাকা নোংরা একটা বাক্স দেখিয়ে বলেন, এর ভেতরেই আছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক। মদের বাক্স। সেটা খুলে দেখেন ফরমালিনে ভরা সাধারণ একটা কাঁচের জারে ডোবানো সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীর মস্তিষ্ক। রাগে, দুঃখে ক্ষোভে হতবাক হয়ে যান লেভি। বিজ্ঞানী মহলে তোলপাড় হয়ে যায় এ খবরে। অনেকেই বিজ্ঞানীর মগজ নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যোগযোগ করেন লেভির সাথেও। কিন্তু ততোদিনে আবার লাপাত্তা হার্ভে!

সাংবাদিকরা কিন্তু পিছু ছাড়েননি হার্ভের। কখন কোথায় নিরুদ্দেশ হচ্ছেন সেটার খবর রাখতে গোয়েন্দা বনে যান একেকজন। তুলে আনেন হার্ভের ব্যক্তিগত জীবনের সব রসাল খবর। আইস্টাইনের মস্তিষ্কের চেয়েও কোথাও কোথাও গুরুত্ব বেশি পায় হার্ভের নৈতিক অবক্ষয়ের গল্প। আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের সেই ভ্রমণ নিয়ে লেখা হয় দু-দুটো সাড়াজাগানো বই। আউটসাইড ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক লেখেন ড্রাইভিং মিস্টার আলবার্ট। পজেসিং জিনিয়াস নামের বইটি লেখেন দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল পত্রিকার মেডিক্যাল রিপোর্টার ক্যারোলাইন আব্রাহাম।

দ্বিতীয় বইটি মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। বহু মানুষের সাক্ষাৎকার যোগ করা হয়েছে বইটিতে। বিশেষ করে আইনস্টাইনের কাছের মানুষদের কথা উঠছে এসেছে। চেষ্টা করা হয়েছে হয়েছে আইনস্টাইনের ব্রেন অন্যদের চেয়ে আলাদা কেন, তার নিখুঁত বিশ্লেষণের।

সাংবাদিরা পিছু নিয়েছেন হার্ভের। তাঁরা জানতে চান আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে তিনি কী গবেষণা করলেন? নতুন কিছু বেরুলো কি?

হার্ভে তাঁদের ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, সময় হলেই পৃথিবী জানবে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কারিশমা। কিন্তু হার্ভে পারেননি নতুন কোনো তথ্য দিতে। চেষ্টা অবশ্য করেছিলেন। মাপ নিয়েছেন, ছবি তুলেছেন। কেটে টুকরো টুকরো করেছেন। সুগার কিউবের আকারে ২৪০টা টুকরো। বেশিরভাগাই ডুবিয়ে রাখেন সেলোয়োডিন দ্রবণে। কয়েকটা কাগজের মতো পাতলা করে স্লাইড বানিয়েছিলেন, মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। দীর্ঘ ৪৩ বছর আকড়ে ছিলেন আইনস্টাইনের মগজটাকে। তারপর হার মানেন বার্ধক্যের কাছে। ১৯৯৮ সালে মগজাটাকে ফিরিয়ে দেন সেটার পুরনো জায়গায়। প্রিন্সটন হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট ড. এলিয়ট ক্লাউসের কাছে হস্তান্তর করেন।

এরপর আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে অনেক গবেষণা হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশ একটি গবেষণাপত্র। এক্সিপেরিমেনট নিউরোলজি পত্রিকায়। প্রধান গবেষক ড. মেরিয়ান সি ডায়মন্ড। সাথে আরনল্ড বি স্কিবেল ও গ্রিয়ার এম মারফি। মানুষের মস্তিষ্কে দুধরনের কোষ আছে। একটা হলো নিউরন বা স্নায়ুকোষ। আরেকটা হলো গ্লিয়া কোষ। গ্লিয়াকোষ রোগ-জীবাণুর হাত থেকে নিউরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। নিউরণের মধ্যে তথ্য-আদানপ্রদানেও বড় ভূমিকা রাখে এই কোষ। তাছাড়া এরা নিজেদের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদান করতে পারে।

ডায়মন্ড, স্কিবেল ও মারফির গবেষণায় উঠে এসেছে, আইনস্টাইনের মগজে একটি অংশে গ্লিয়াকোষের পরিমাণ বেশি। সেটা হলো সেরিব্রাল কর্টেক্স। গোটা মস্তিষ্কে নিউরনের তুলনায় নয়গুণ গ্লিয়াকোষ থাকে। কিন্তু সেরিব্রাল কর্টেক্সে গ্লিয়াকোষ নিউরনের মাত্র দ্বিগুন। মস্তিস্কে নিউরণ আর গ্লিয়াকোষের অনুপাতকে বলে গ্লিয়া ইনডেক্স। অর্থাৎ সেরিব্রাল কর্টেক্সে গ্লিয়া ইনডেক্সের মান সবচেয়ে কম। মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর তুলনা করলে দেখা যায়, সেরিব্রাল কর্টেক্সে মানুষের গ্লিয়া ইনডেক্সের মান সবচেয়ে বেশি। ডয়মান্ড আর তাঁর সহকর্মীর মনে করেন, একরণেই মানুষ বুদ্ধিতে অন্যপ্রাণীর চেয়ে মানুষ যোজন যোজন এগিয়ে।

ওই তিন গবেষক এগরোজন মৃত ব্যক্তির মগজ পর্যবেক্ষণ করে দেখেন। সেগুলোর সাথে তুলনা করেন আইনস্টাইনের মগজের। দেখা যায় সবার চেয়ে আইনস্টাইনের সেরিব্রাল কর্টেক্সে গ্লিয়া ইনডেক্সের মান সবচেয়ে বেশি। এ কারণেই আইনস্টাইনের বুদ্ধি, চিন্তা করার ক্ষমতা আর দশজেন চেয়ে বেশি ছিল। এই সিদ্ধান্তই ছিল ডায়মন্ড, স্কিবেল ও মারফির গবেষণাপত্রের মূল থিম।

১৯৯৬ সালে ‘নিউরোসায়েন্স লেটারস’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশ হয় আরেকটি গবেষণাপত্র। লেখক আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. ব্রিট অ্যান্ডারসন। তিনি দেখালেন, অন্যদের মস্তিষ্কের তুলনায় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স এরিয়া বেশ সরু। কিন্তু নিউরন সংখ্যা অন্যদের সমান। তারমানে, আইনস্টাইনের সেরিব্রাল কর্টেক্সে নিউরনের ঘনত্ব বেশি। ঠিক একারণেই আইনস্টাইন প্রতিভায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে মনে করেন অ্যান্ডারসন।

সবচেয়ে সাড়া জাগনো প্রবন্ধটি প্রকাশ হয় ১৯৯৯ সালে। চিকিৎসা বিষয়ক ব্রিটিশ জার্নাল ল্যানসেট-এ। লেখক দুই কানাডিয়ান গবেষক ড. সান্ড্রা উইটেলসন ও ডেব্রা কিগার। তারা ৩৫ জন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্ক চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। সেগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখেন আইনস্টাইনের মগজ। ওই মগজগুলার তুলনায় আইনস্টাইনের মগজের ওজন অনেক কম। কিন্তু এগিয়ে অন্য জায়গায়। ৩৫ জনের মগজেই দুটো আলাদা অংশের দেখা পেয়েছেন গবেষকদ্বয়। পেরিটেয়াল ওপারকুলাম ও ইনফিরিয়র পেরিয়েটাল লোব। আইনস্টাইনের মস্তিষ্কে পেরিটেয়াল ওপারকুলাম নেই! সুতরাং বাড়তি ১৫% জায়গা পেয়ে গেছে ইনফিরিয়র পেরিয়েটাল লোব। এই লোবের মধ্যে একটা ছোট্ট খাঁজ থাকে সবার মস্তিষ্কে। অন্যদের তুলনায় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের সেই খাঁজটা ছোট। ফলে খাঁজের ভেতরের স্নায়ুকোষগুলি ঘণ ও সন্নিবেশিত। তাই নাকি তাদের ভেতর পারস্পরিক যোগাযোগটাও অনেক সহজ। ঠিক এই কারণেই অন্যদের তুলনায় আইনস্টাইনের চিন্তাশক্তি অনেক প্রখর ছিলমনে করেন ওই গবেষকদ্বয়।

বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছুই নেই। এসব গবেষণাও তাই শেষ কথা নয়। অনেকে মাত্র ১১ টা কিংবা ৩৫টা সাধারণ মস্তিষ্কের সাথে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের তুলনা করাটা ঠিক মানতে পারেন না। বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডেরিক গাউসও কি কম প্রতিভাধর ছিলেন? মস্তিষ্কের আকারই যদি আইনস্টাইনকে মহাবিজ্ঞানী বানায় তাহলে গাউস নিতান্তই নির্বোধ হতেন। তাঁর মস্তিষ্কের ওজন ছিল ১৪৯২ গ্রাম! তাছাড়া একটা-দুটো অংশ বিশ্লেষণ করে গোটা মস্তিষ্ক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়টা ঠিক যুক্তিযক্ত নয়। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সাভির্সের লেখক ডেভিড শেঙ্কের একটি বই সাড়া জাগায় গোটা বিশ্বে। দ্য জিনিয়াস অব অল আস নামে ওই বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিভা জন্মগত নয়। বরং মানুষ তাঁর আগ্রহ, চেষ্টা, ধৈর্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেকে অনন্য করে তোলে।

২০১৪ সালে ২৪ মে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে আরেকটি গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্রের পেস বিশ্ববিদ্যলয়ের গবেষক ড. হিনস । তিনি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে ২৮ টি পরীক্ষা চালান। সেই পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসেন আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক অন্যদের থেকে আলাদা ছিল না। সর্ববেশষ এই প্রবন্ধটা প্রকাশ হয় ডিসকভার ম্যাগজিনের নিউরসেপটিক বিভাগে।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষকরা দ্বিধাবিভক্ত। কত হইচই, কত গবেষণা এসবের মূল কৃতিত্ব কিন্তু থমাস হার্ভের। সেদিন যদি আইনস্টাইনের মস্তিষ্কটা বিনা অনুমতিতে সরিয়ে রাখার দুঃসাহস না দেখাতেন, তাহলে আজ কোথায় থাকত এত গবেষণা, এত আলোচনা? আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে দীর্ঘযাত্রার সঙ্গী হওয়া সেই প্যাথোলজিস্ট ২০০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আর আইনস্টাইনের সেই মস্তিষ্ক? তার ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব হেলথ অ্যান্ড মেডিসিনে। হার্ভে ছুরি চালানোর আগে অক্ষত অবস্থায় মস্তিষ্কের যে ছবিগুলো তুলেছিলেন, তা লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজের কাছে। তাঁর মৃত্যর পর সেগুলোও এখন ওই মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে।

মস্তিষ্কের খুব সামান্য কিছু অংশ আছে ফিলোডেলফিয়ার মাটার মিউজিয়ামে। চিলড্রেন হসিপিটাল অব ফিলোডেলফিয়ার নিউরো প্যাথলজিস্ট লুসি বোরকি কীভাবে জানি হার্ভের তখনকার স্ত্রীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ৪৬টি স্লাইড। সেগুলো থেকে কয়েকটা নমুনা তিনি মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে দান করেন।

আইনস্টাই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন ৭১ বছর আগে। কিন্তুরয়ে গেছে তাঁর অক্ষয়কীর্তি। হার্ভের কারণে রয়ে গেছে তাঁর মস্তিষ্কও। পৃথিবীর বিজ্ঞান যে অবিশ্বাস্য গতিতে এগোচ্ছে, হয়তো মানব সভ্যতা ইতি টানার আগ পর্যন্ত টিকে থাকবে। ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে থাকা কোনো গবেষক একদিন হয়তো খুব জোরালোভাবেই ভেদ করবেন আইনস্টাইনের মগজের রহস্য। আর সেজন্য মস্তিষ্ক নিয়ে যতই টালবাহানা করুন না কেন, হার্ভেকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ