বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে বিশ্বায়ন একটি বহু ব্যবহৃত ধারণা| বিশ্বায়ন ধারণাটির প্রবর্তক অধ্যাপক রোলান্ড রবার্টসন প্রথম একে আনুষ্ঠানিক রূপ দেন ও সংজ্ঞায়িত করেন|
সাধারণভাবে বলা যায়, বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াই হলো বিশ্বায়ন|
এককথায় সমগ্র পৃথিবীকে পারস্পরিক সম্পর্কের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই বিশ্বায়ন| এই বিশ্বায়নের প্রভাবে দেশের সীমান্ত, রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য, চিরাচরিত ঐতিহ্য প্রভৃতি সবই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে|
অধ্যাপক রোলান্ড রবার্টসনের মতে, একটি ধারণা হিসাবে বিশ্বায়ন একদিকে যেমন বিশ্বের সংকুচিকরণ বোঝায়, অপরদিকে তেমনি বিশ্বের একত্রীকরণের ধারণাও সৃজন করে| অর্থাৎ বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্য, সামরিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা প্রতি আলোকপাত করে| তবে বিশ্বায়ন ধারণাটির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো "এক বিশ্ব"- এই ধারণার সৃজন|
অ্যান্থনি জিদদেন্স(Anthony Giddens) বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, বিশ্বায়ন হল সারা বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পর্কগুলির এতটাই নিগড়ীকরণ, যার ফলে কিনা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির স্থানীয় জীবনযাত্রার শত শত মাইল দূরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে|
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অমিয়কুমার বাগচী বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- বিশ্বায়ন হলো একটি জগৎ ব্যাপি প্রক্রিয়া| বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থা বা এজেন্সি বিশ্বজুড়ে নিজেদের মধ্যে নানা প্রকার সম্পর্ক গড়ে তুলে| বিশ্বায়নের সংজ্ঞা অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিল্প, যোগাযোগ, পরিবহন, আমদানি-রপ্তানি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক সকল বিষয় জড়িত| তবে বিশ্বায়ন প্রধানত "অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশ্বায়ন"| যেখানে পুঁজি, পণ্য ও বাজার একই সূত্রে গ্রথিত|
অমিয়কুমার বাগচীর মতে, বিশ্বায়ন কতগুলি আর্থিক নীতির সমাহার| এই বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াটি হলো আসলে বিশ্ব পুঁজিবাদকে আরো সম্প্রসারিত করার একটি প্রক্রিয়া| অনেকে মনে করেন, বিশ্বায়ন হলো "নয়া উপনিবেশবাদ"| তৃতীয় বিশ্বের কাছে নয়া উপনিবেশবাদের একটি কৌশল হিসেবে কাজ করেছে|