ঈমান আরবী শব্দ। এর সহজ অর্থ হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস বলতে কী বুঝায়? এটা অত্যন্ত গুরত্বপুর্ণ বিষয়।

 

একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন এক পরিচিতি লোক এসে আমাকে বললেন, ভাই, আমাকে এক হাজার টাকা ধার দিন। আমি এক মাস পরই ফেরত দিয়ে যাব।

 

এক মাস পর টকাটা ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে আমার সরাসরি জানা নেই। আমি তাকে কী বলবো? তাকে তো আর একথা বলা যায় না যে, এক মাস পর ফেরত দেন কি না আগে দেখে নিই। তাহলে তাকে কী বলব? আমার কাছে লোকটি ধার চেয়েছে, হয় তাকে ধার দেব, আর না হয় ধার দিতে অস্বীকার করব। ধার দেব কি দেব না এ বিষয়ে কিভাবে আমি সিদ্ধান্ত নেব? টাকা সত্যি ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে ডাইরেক্ট নলেজ বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান তো নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি তাকে যতটুকু জানি তাতে আামার মনে এ বিশ্বাস হয় কি না যে, লোকটি ওয়াদা পালন করবে। যদি তার উপর আমার বিশ্বাস হয় যে, এ লোক টাকা ফেরত দেবে তাহলে আমি তাকে ধার দেব। মোট কথা, ধার দেওয়ার এই সিদ্ধান্তটার ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। যদি তার অতীত আচরণ থেকে তার উপর আমার এ বিশ্বাস না হয় যে, টাকাটা ফেরত দেবে, তাহলে আমি ধার দেব না। আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, তাও পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে। তাকে ধার দিতে অস্বীকার করলে সে নিশ্চয়ই বলবে, আমাকে বিশ্বাস করেন না? আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, এটাও কিন্তু বিশ্বাস। অর্থাৎ আমার বিশ্বাস যে, সে টাকা ফেরত দেবে না। তাকে আমি টাকা দিলামই না। কী করে জানলাম যে, সে টাকা ফেরত দেবে না? পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমেই আমি এ বিশ্বাসে পৌছেছি।

 

তাহলে বিশ্বাসের সংজ্ঞা কী দাঁড়াল? যে বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই, অথচ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচেছ ; তখন পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় নেই; এভাবে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তারই নাম বিশ্বাস।

 

একটি বড় উদাহরণ

 

মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে কি না এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই। কিন্তু এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকারও উপায় নেই। যদি মৃত্যুর পর আরও একটি জীবন থাকে তাহলে আমাকে সে হিসাব মনে রেখেই দুনিয়ায় চলতে হবে। যদি না থাকে তাহলে বেপরোয়া চলা সহজ মনে হতে পারে। তাই এ বিষয়ে চুপ থাকার উপায় নেই। হয় আছে মনে করতে হবে আর না হয় নেই বলে ধারণা করতে হবে এবং স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।

 

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কিভাবে নেব? কেউ ঐপারে থেকে ফিরে আসে না। এপার থেকে উঁকি মেরে দেখাও সম্ভব নয়। পরকাল একেবারেই অদৃশ্য। পবিত্র কুরআনে অনেক সূরায় শুধু আখিরাতকে বিশ্বাস করার জন্য যুক্তি পেশ করা হয়েছে। এসব জ্ঞানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জানা যায় যে,  পরকাল অবশ্যই আছে।

 

পরকাল সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান নেই, অথচ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পৌঁছাতেই  হবে। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই ঐ সিদ্ধন্ত পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমেই সম্ভব। এভাবেই অদৃশ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ সিদ্ধন্তটাই বিশ্বাস।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে