ইসলামে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো যাবে বা
জায়েজ কিনা তা জানতে হলে খুঁজতে হবে এ নিয়ে কোনো দলিল আছে কিনা। ইসলামী আইনের মূলনীতি হলো, সাধারণভাবে সবকিছু জায়েজ, যতক্ষণ না সেটি হারাম
হওয়ার পক্ষে কোনো দলিল পাওয়া যায়।
এই মূলনীতি অনুয়ায়ী আমরা যদি এ মাসআলাটি
বিশ্লেষণ করি, তাহলে বুঝা যায়, পশ্চিম দিকে পা
দিয়ে ঘুমানোর ব্যাপারে কোনো আদেশ বা
নিষেধ নেই।
ইসলামে ‘পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো নিষেধ’ মর্মে কোনো বক্তব্য কোরআন, হাদিস বা ইমামদের বক্তব্য নেই। তাই এটি নিষেধ করার কোনো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য কারণ নেই বলে দাবি করা যায়।
অনেকে পশ্চিম দিকে (কিবলার দিকে) মুখ ফিরিয়ে
বা পিঠ ফিরিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করার নিষেধাজ্ঞায়
বর্ণিত হাদিসের ওপর কিয়াস করে পশ্চিম দিকে পা
দিয়ে ঘুমানো বা বসাকে নাজায়েজ বলে থাকেন।
অথচ এমন ধারণার কোনো সুযোগ ইসলামে
নেই। খোলা স্থানে কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বা
পিঠ ফিরিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করা নিষেধ- এ সংক্রান্ত
স্পষ্ট হাদিস রয়েছে (সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস নাম্বারঃ ২১, জামি আত-তিরমিযী, হাদীস নাম্বারঃ ০৮)।
কিন্তু কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানো বা বসা নিষেধ- মর্মে কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি। তাই কিবলার দিকে তথা পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো বা বসা।নাজায়েজ- এ কথাটিও অপ্রমাণিত এবং ভুল।
এক প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের সাবেক
গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ (রঃ) বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। কোনো ব্যক্তি যদি তার দুই পা কিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখে তাতে কোনো সমস্যা নেই। এমনকি কেউ যদি মসজিদে
হারামে বসেও কাবার দিকে পা ফিরিয়ে রাখে তাতেও
কোনো সমস্যা নেই।
আর শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীনও (রঃ)
বলেন, ‘কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমাতে বা বসতে
কোনো দোষ নেই।’
তবে কিবলা ও কাবা অত্যন্ত মর্যাদাবান দু’টি বিষয়।
এগুলো ইসলামের শিআর বা নিদর্শনের
অন্তর্ভুক্ত। এগুলোকে কোনোভাবে অসম্মান
করা, অবজ্ঞা করা বা এগুলোর প্রতি কোনো
অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা মহা অন্যায়।
তাই কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে
রাখে তাহলে তা মহা অন্যায় ও কবীরা গুনাহ
হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে তা হবে কী হবে
না-তা নির্ভর করে যে পা রাখছে তার ইনটেনশন বা
নিয়তের উপর।
এক প্রশ্ন আসতে পারে যে, পশ্চিম দিকে পা রাখা
যদি হারাম হয় তাহলে বিছানায় বা সমান কোনো
স্থানে বসা কোনো মাজুর ব্যক্তি (অসুস্থতা বা
কোনো সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি) কীভাবে বা
কোন দিকে পা রেখে সালাত আদায় করবে?
উত্তর হবে অবশ্যই পশ্চিম দিকে অর্থাৎ কিবলার
দিকে পা রেখেই তিনি সলাত আদায় করবেন।
ফিকহবিশারদরা বলেন, ‘যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি
দাঁড়িয়ে বা বসে নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে
কিবলার দিকে মুখ করে এক পাশে শুয়ে নামাজ
আদায় করবেন। যদি সেটাও না পারেন তাহলে চিত
হয়ে শুয়ে কিবলার দিকে পা দিয়ে নামাজ পড়বেন।
এ দিক দিয়ে বলা যায়, যদি পশ্চিম দিকে পা রাখা হারাম বা
নাজায়েজ হতো তাহলে সালাত আদায় কালেও তা
হারাম হতো। এছাড়া তা ফিকহের কিতাবেও ফতোয়ায়
উল্লেখ থাকতো।
তবে, হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব
ফাতওয়ায়ে আলমগিরীতে আছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা
অন্য কোন অবস্থায় কাবা
শরীফের দিকে পা দেয়া মাকরূহ।
(ফাতওয়ায়ে আলমগিরীঃ ৫/৩১৯,
ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ ২৯/১৭৪)।
কাবার দিকে ইচ্ছাকৃত পা লম্বা করা মাকরূহ।
ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়। (ফাতাওয়া
হিন্দিয়াঃ ৫/৩১৯, আল মুহিতুল বুরহানীঃ ৮/১০,
ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ ২৯/১৭৪)।
অনিচ্ছায় হলে সমস্যা নেই।
কারণ, এতে করে কাবার অসম্মান করা হয়। আর
পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে
সম্মান করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছেঃ
এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত
বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে
তাতো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত। (সূরা হাজ্জ্ব ৩২) ©