শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
সময়

Call

বিশ্ব ভ্রমণকালে যুলকারনাইন তুর্কী ভূমিতে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সন্নিকটে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছেছিলেন। এখানে দুটি পাহাড় বলতে ইয়াজূজ-মাজূজের উৎপত্তিস্থল উদ্দেশ্য, যেখান দিয়ে এসে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত, ফসলাদি বিনষ্ট করত। এখানেই পরে তিনি লোক জনের সহায়তা নিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ইয়াজুজ মাজুজ কে যে প্রাচীর দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছিল সেই প্রাচীর অবস্থান কোরআন শরীফে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা কাহাফের ৮৩ থেকে ৯৯ নং আয়াতে জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের রহস্যময় ঘটনাটির উল্লেখ রয়েছে। জুলকারনাইন ছিলেন একজন পরাক্রমশালী খোদাভীরু বাদশাহ যিনি আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন অভিযাত্রী যিনি পৃথিবীর দুই প্রান্তে অভিযান চালান। জুলকারনাইন প্রথমে গেলেন পশ্চিমে এবং এমন একটি জলাশয়ের সামনে এসে পৌঁছালেন যার পানি ছিল কৃষ্ণ বর্ণের। তিনি যে সাম্রাজ্যের বাদশাহ ছিলেন তার পশ্চিমে দুইটি বৃহৎ জলাশয় ছিল – একটি ভূমধ্যসাগর ও অন্নটি কৃষ্ণ সাগর। আমাদের মুফাসসিররা বহু আগেই নির্ণয় করেছেন যে এই কালো বর্ণের জলাশয়টি হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর বা Black Sea. . অতঃপর তিনি পূর্বে অভিযান চালান, কিন্তু এক পর্যায়ে আর বেশিদূর যেতে পারলেন না। এর কারণ হল ব্ল্যাক সি এর পূর্বে তিনি অন্য একটি বিশাল জলাশয়ের মুখোমুখি হন। এর নাম হল কাস্পিয়ান সাগর (Caspian Sea)। তিনি তৃতীয় একটি ডাইরেকশনে যাত্রা করেন এবং ইয়াজুজ মাজুজ নামের উশৃঙ্খল জাতির সম্মুখীন হন। হাদিস থেকে আমরা জানি যে ইয়াজুজ মাজুজ তাবারিয়া হ্রদের পানি নিঃশেষ করে জেরুজালেমে পৌঁছাবে। কেউ যদি তাবারিয়া হ্রদ পার হয়ে জেরুজালেমে পৌঁছাতে চায় তবে তাকে উত্তর থেকে আসতে হবে। অর্থাৎ, তিনি যে তৃতীয় ডাইরেকশনে যাত্রা করেন সেটা ছিল উত্তর দিক। উত্তরে যাত্রা করার পর যেখানে তিনি ইয়াজুজ মাজুজকে পান, সেটি ছিল দুইটি পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থান। জায়গাটা এমন ছিল যে পর্বতশ্রেণীর মধ্যবর্তী গিরিখাতটি দিয়েই শুধুমাত্র বহির্বিশ্বের সংস্পর্শে আসা সম্ভব। . এই সমস্ত ভূপ্রাকৃতিক স্থান ও তাদের ভৌগলিক অবস্থানগুলোকে একত্রিত করলে খুব সহজেই ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থানকে চিহ্নিত করা যায়। কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী পর্বত প্রাচীর দুটি যে পর্বতমালায় অবস্থিত তা হল সুবিখ্যাত ককেশাস পর্বতমালা। পর্বত প্রাচীর দুটির মাঝে অবস্থিত একমাত্র বহির্পথটি ডারিয়াল গোর্জ (Darial Gorge) যেখানে জুলকারনাইন দেয়ালটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। জায়গাটার অবস্থান হল রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন দেশ জর্জিয়াতে। কোরআন আরও বলছে ঐ পর্বতশ্রেণীতে বসবাসরত সম্প্রদায় তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। ব্যাপারটা জর্জিয়ান ভাষার সাথে পুরোপুরি খাপ খায়। ঐ অঞ্চলের যতগুলো ভাষা আছে যেমন – আরবি, ফার্সি ইত্যাদি সবগুলোই কোন না কোনভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আজও পর্যন্ত এটা সুস্পষ্টভাবে লক্ষণীয় যে জর্জিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ঐ এলাকার সমস্ত রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলিগুলো থেকে একদম আলাদা। . ইতিহাসেও উল্লেখ রয়েছে যে পারস্যের রাজা বাদশাহরা ঐ অঞ্চলটিতে ৫০ মাইল লম্বা, ২৯ ফিট উঁচু ও ১০ ফিট চওড়া একটি প্রাচীর তুলে দিয়েছিলেন, উত্তরের বর্বর অসভ্য জাতিকে দক্ষিণে আক্রমণ চালানো থেকে প্রতিহত করার জন্য যারা ছিল ককেশাস পর্বতমালার অধিবাসী। ধারণা করা হয় এটা ছিল “দ্য গ্রেট ওয়াল অব জোর্জান” অথবা “দ্য কাস্পিয়ান গেটস”। অনেকে আবার বলেন “দ্য গেটস অফ অ্যালেক্সান্ডার”ই হল সেই প্রাচীর। নাম যাই হোক না কেন, ঐতিহাসিকভাবেও প্রমাণিত যে এখানে একটা বিরাট প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, যেটা কোন নদীর বাঁধ ছিল না, বরং এটি ছিল একটি প্রতিরক্ষা প্রাচীর। এখানে খুব ভাসা ভাসা লেভেলে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, পুরো বিষয়টা ভালভাবে বুঝার জন্য সূরা কাহফের এই ১৬টি আয়াত আরবি সহ একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। জায়গাটাকে ভৌগলিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য গুগল আর্থের সাহায্য নিতে পারেন। . উল্লেখ্য যে, ডারিয়াল গোর্জে এখন কোন দেয়ালের অস্তিত্ব নেই। সেখানে এখন একটা রাশিয়ান মিলিটারি হাইওয়ে অবস্থিত।রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবদ্দশায়ই ইয়াজুজ মাজুজ মুক্তি পেয়ে যায়। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ”একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।” তথ্যসুত্রঃ akhrizamana.wordpress.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ