ভেরিকোস ভেইন কি?
ভ্যারিকোস ভেইন হল রক্তনালীর একটি সাধারণ রোগ। ত্বকের নীচে জন্মানো ফোলা ও প্যাঁচানো শিরাকে ভ্যারিকোস ভেইন বলে। এই রোগ শরীরের যেকোনও অংশেই দেখা দিতে পারে। তবে, সাধারণত পায়ে ভ্যারিকোস ভেইন দেখা দেয়।

মানব দেহের পায়ের শিরাগুলি দুই সারিতে বিভক্ত থাকে। এই দুই সারির মাঝে থাকে সংযোগকারী আন্তঃশিরা। এই শিরাগুলির একমুখী ভালভ্ রয়েছে, যার অর্থ রক্ত কেবল এক দিকে ভ্রমণ করতে পারে। রক্ত প্রবাহকালে কোনও কারণে যদি শিরার রক্ত নিয়ন্ত্রণকারী ভাল্ব ঠিকমতো কাজ না করে কিংবা গাত্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন রক্ত পিছনের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রক্ত হৃদপিণ্ডে ভ্রমণের পরিবর্তে শিরাগুলিতে সঞ্চারিত হতে থাকে। ফলস্বরূপ, রক্তনালিগুলি ফুলে ওঠে এবং প্রসারিত হয়। একেই 'ভ্যারিকোস ভেইন' বলে।

ভেরিকোস ভেইন এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
বেশীরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ভেরিকোস ভেইন দীর্ঘ সময়ের জন্য উপসর্গহীন থাকে। এই অবস্থার সাধারণ উপসর্গ হলো:

  • শিরাগুলির আকার বড় হয় এবং ফুলে যায়।
  • গাঢ় বেগুনি বা নীল রঙের শিরার জন্ম নেয়।
  • পায়ে ব্যথা।
  • পায়ের পাতা ও পা ফুলে ওঠা এবং যন্ত্রনা।
  • পায়ে বা পায়ের নিচের অংশের পেশীতে খিঁচুনি।
  • থাই ও কাভসে মাকড়সার মতোন সবুজ শিরার উপস্থিতি।
  • ভেরিকোস ভেইন এর জায়গায় চুলকানি।
  • শুকনো, আঁশের মত, অস্বস্তিকর ত্বক।
  • ত্বকে ক্ষত যেটা তাড়াতাড়ি ঠিক হয় না।
  • শিরার আশেপাশের অংশে চুলকানি।
  • আক্রান্ত অংশের চারপাশের ত্বকের রঙ পরিবর্তন।


ভেরিকোস ভেইন এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
শিরার দেয়ালের ও ভালভের দূর্বলতার জন্য, শিরা থেকে রক্ত টানলে এগুলো ফুলে যায়, পেঁচিয়ে যায় এবং গুটিয়ে থাকে, যেমন ভেরিকোসড। সাধারণত, ভাল্ভ মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে রক্তকে উপরে ঠেলে দেয় কিন্তু যখন এগুলো দূর্বল হয়, তখন শিরার মধ্যে রক্ত একজায়গায় জমা হয় এবং ভেরিকোস ভেইনসের সৃষ্টি করে।

যে সমস্ত কারণে এটা হয়:

  • অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উদাহারনস্বরূপ, পেন্টার্স, বাস বা ট্রেনের সহায়ক, শিক্ষক, ইত্যাদি।
  • স্ত্রী লিঙ্গ।
  • গর্ভাবস্থা।
  • স্থূলতা বা ওবেসিটি।
  • বৃদ্ধ বয়স।
  • পরিবারে কারোর ভেরিকোস ভেইনের পূর্ব ইতিহাস থাকা।
  • খতিগ্রস্ত ভালভ বা কপাটিকা।
  • পায়ে এবং পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়া।
  • বিরল কোনো দশা যেমন, পেলভিসে টিউমার, শিরাতে রক্ত জমাট বেঁধে থাকা।


ভেরিকোস ভেইন কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
রোগ নির্ণয় এই রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে রোগের লক্ষণগুলির উপর বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও, চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে এবং পা পরীক্ষা করে থাকে। চিকিৎসক এরপর কয়েকটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার সুপারিশ করেন যার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি পরীক্ষাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে-

  • ডপলার পরীক্ষা– রক্ত আপনার শিরাতে কীভাবে প্রবাহিত হচ্ছে তা পরীক্ষা করার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয় এবং এটি শিরাতে রক্ত জমাট বাঁধার জন্যও পরীক্ষা করা হয়।
  • কালার ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান– শিরাগুলির কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়ার জন্য এই পরীক্ষাটি শিরাগুলির কাঠামোর রঙিন চিত্র দেখায়।


ভেরিকোস ভেইন এর চিকিৎসাঃ
প্রাথমিক ভাবে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাঁটুর নিচে গ্রাজুয়েটেড ইলাস্টিক কম্প্রেশন দেওয়া হয়। এরপর রোগের অবস্থা বুঝে দু’রকম চিকিৎসা করা হয়-

  • ফোম স্কেলেরোথেরাপি– রোগের পরিসর সীমিত হলে ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরাতে স্ক্লেরোসিং সলিউশন দেওয়া হয়। এর ফলে একটু চুলকানি থাকতে পারে যা দু’তিন দিন থেকে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চলেও যায়।
  • লেসার বা রেডিওফ্রেকুয়েন্সি ট্রিটমেন্ট– এই পদ্ধতিতে শিরায় ছিদ্র করে আলট্রাসাউন্ডের সাহায্যে শিরাগুলিকে রেডিওফ্রিকুয়েন্সি বা লেসারের মাধ্যমে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।


লোকাল অ্যানাস্থিসিয়া দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। রোগী সেই দিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন আর ২৪ ঘন্টার পর নিজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা শুরু করতে পারেন। রোগী ইঞ্জেকশন ফোটানো ছাড়া আর কোনওরকম ব্যথা অনুভব করেন না। একটু লাল দাগ থাকতে পারে যা ৬-৮ দিনের মধ্যে চলে যায়। চিকিৎসার পর ওই জায়গা কোনওভাবেই রগড়াবেন না, টিপবেন না। ২-৪ সপ্তাহ স্টকিং পড়তে হবে। ৩-৫ দিন পেন কিলার খেতে হবে।সঠিক সময় রোগ নির্ণয় হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা হলে, এই রোগ পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

ভেরিকোস ভেইন এর রিস্ক ফ্যাক্টরঃ

  • স্থূলতা
  • ধূমপান
  • নিষ্ক্রিয়তা বা আলস্য
  • পায়ে চোট
  • গর্ভাবস্থা


সুস্থ থাকতে কী করতে হবে?

  • রক্ত সরবরাহের উন্নতির জন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। এই অবস্থায় হাঁটা বা সাঁতার কাটা খুবই ভাল।
  • সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য খান।
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
  • শরীরের নিম্নভাগে চাপ কমাতে সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
  • ধূমপান করবেন না।
  • হাই হিলের জুতো পড়বেন না।
  • দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার ১৫ মিনিট পা উপরে করে রাখবেন।
  • কোনো খোলা ঘা বা ক্ষতের যত্ন নিন।
  • পায়ে আর্দ্রতা বজায় রাখুন এবং ত্বককে শুকনো হয়ে যেতে বা ফেটে যেতে দেবেন না।



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে