শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

যে সময়গুলোতে মানুষের দোয়া কবুল হয়

x


আল্লাহতায়ালা পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। মানুষের ওপর তার দয়ার কোনো শেষ নেই। আল্লাহতায়ালার অসংখ্য নিয়ামত ও দয়ার অন্যতম একটি দয়া হলো- মানুষের পাপমুক্তির জন্য দোয়া কবুল করা। আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করার জন্য নানা উসিলা খুঁজেন। তাই তিনি দোয়া কবুলের জন্য দিনরাতের মাঝে এমন অনেক সময় ও মুহূর্ত রেখেছেন, যে সময় দোয়া করলে তা কবুল হয় বলে হাদিসে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে। দোয়া কবুলের সেই মুহূর্তগুলো হলো-

রাতের শেষ তৃতীয়াংশের দোয়া
প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই দোয়া কবুল করা হয়। শুধু শবেবরাত ও শবেকদরে নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।– সহিহ মুসলিম : ১২৬৩

শেষ রাতের যে কোনো সময়ের দোয়া
সাহাবি হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রাতে এমন একটি সময় আছে, যে সময়টাতে কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে এ পৃথিবী কিংবা পরকালের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল, আর তাকে তা দেওয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে।’ -মুসলিম : ১২৫৯

আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ -তিরমিজি : ১৯৬

জুমার দিনের দোয়া
জুমার দিন এমন অসাধারণ একটি নেয়ামতের সময় আছে, যে সময়টাতে দোয়া কবুল হওয়ার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, 'জুমার দিনে একটি সময় আছে, যে সময়টা কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন এবং তিনি (রাসূল সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।' –সহিহ বোখারি : ৫৯২১

জমজমের পানি পান করার সময়ের দোয়া
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'জমজম পানি যে নিয়তে পান করা হবে, তা কবুল হবে।' -ইবনে মাজা : ৩০৫৩

সেজদার সময়ের দোয়া
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও।' –সহিহ মুসলিম : ৭৪৪

রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগার পরের দোয়া
সাহাবি হজরত উবাদা বিন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে, 'আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) অথবা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল করা হবে এবং সে যদি অজু করে নামাজ আদায় করে, তাহলে তার নামাজ কবুল করা হবে।’ –সহিহ বোখারি : ১০৮৬

ফরজ নামাজের পরের দোয়া
সাহাবি হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বললেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে।' –তিরমিজি : ৩৪২১

বৃষ্টি ও আজানের সময়কার দোয়া
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া।' -আবু দাউদ : ২১৭৮
এছাড়াও কদরের রাতের দোয়া, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া, সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, বিশেষ করে ইফতারের সময়কার দোয়া, অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসারিত দোয়া, জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি দোয়া, আরাফার (হজের দিন) দিনের দোয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে বলে বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে- বস্তুত আমি রয়েছি সনি্নকটে। যারা প্রার্থনা করে। তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিই। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। (সূরা বাকারা: ১৮৬) তাফসিরে ইবনে কাসিরে আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের শানে-নজুল প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, কোনো গ্রামের কিছু লোক হজরত রসুলে আরাবি (সা.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, যদি আমাদের রব আমাদের নিকটেই থেকে থাকেন, তবে আমরা আস্তে আস্তে দোয়া করব। আর যদি দূরে থেকে থাকেন তবে আমরা উচ্চস্বরে ডাকব। তখন তাদের সেই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল করা হয়। জবানের হেফাজত করা উচিত। জবান আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। জবানের দ্বারা মানুষ কোরআন তিলাওয়াত করে, জিকির আজকার করে, আবার এ জবান দ্বারা মানুষ গীবত শেকায়েত করে, গালি গালাজ করে, অর্থাৎ জবানের দ্বারা যেমন সওয়াব কামানো যায়। তদ্রূপ গোনাহও কামানো যায়। জবান দ্বারা জান্নাত অর্জন করা যায়, জাহান্নামও অর্জন করা যায়। জবান দ্বারা ইমানের কালিমা উচ্চারিত হয়, আবার জবান দ্বারা কুফরির কালিমাও উচ্চারিত হয়। তাই জবান অনেক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের হেফাজত করা উচিত। যে জিনিস যতবেশি দামি ওই জিনিস ততবেশি হেফাজত করতে হয়। টাকা-পয়সা মানুষের কাছে অনেক দামি, তাই মানুষ টাকা-পয়সাকে বাইরে রাখে না। বরং ঘরের মধ্যে রাখে। ঘরের আলমারিতে রাখে। আবার আলমারির ছোট্ট বাক্সে রাখে। ওই ছোট্ট বাক্সে তালা দেয়। আলমারিতে তালা দেয়। ঘরের দরজায় তালা দেয়। তাহলে দেখা গেল, মানুষের মূল্যবান সম্পদ টাকা-পয়সা সোনা-রুপা, তিনটি জিনিসের মধ্যে তিনটি তালা দ্বারা আবদ্ধ করে রাখা হয়। তদ্রূপ জিহ্বাকেও তিনটি জিনিস দ্বারা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এক. নাক, কান ইত্যাদি অঙ্গের মতো জিহ্বাকে শরীরের বাইরে রাখা হয়নি। বরং শরীরের ভিতরে রাখা হয়েছে, মুখের ভিতরে রাখা হয়েছে। দুই. জিহ্বাকে হেফাজত করা হয়েছে ৩২টি দাঁত দ্বারা। তিন. জিহ্বাকে হেফাজত করা হয়েছে ঠোঁট দ্বারা। আল্লাহতায়ালা জিহ্বাকে তিনটি জিনিস দ্বারা হেফাজত করেছেন। জিহ্বা দামি হওয়ার কারণেই তাকে এভাবে হেফাজত করা হয়েছে। এজন্য কথা বলার সময় চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলতে হবে। আর যেই ব্যক্তি চিন্তা ফিকির করে কথা না বলে, অধিকাংশ সময় তার কথা ভুল হয়। জবানকে নাড়ানোর আগে চিন্তা- ভাবনা করে নাড়ানো চাই। আমি ভালো কথা বলছি নাকি খারাপ কথা বলছি। ভালো কথা হলে বলব, খারাপ কথা হলে বলব না। মন্দ কথা আসলে দাঁতের দ্বারা চাপ দিয়ে জিহ্বাকে বন্ধ করে দিব। দাঁত দ্বারা সম্ভব না হলে ঠোঁট দ্বারা বন্ধ করব। ঠোঁটের বাইরে কথা আসতে দিব না। এভাবে যদি আমরা জবানকে হেফাজত করতে পারি, তাহলে আমরা সবাই খারাপি থেকে বাঁচতে পারব। আল্লাহতায়ালা আমাদের জবানকে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সব নাপাকি থেকে হেফাজত করেছেন। সন্তান যখন মায়ের পেটে আসে। আল্লাহতায়ালা কুদরতিভাবে মায়ের পেটের সঙ্গে সন্তানের নাভির যোগাযোগ স্থাপন করে দেন। ফলে মা যা ভক্ষণ করেন, তা রক্ত হয়ে নাভি দিয়ে সন্তানের পেটে চলে যায়। ওই রক্তটাই সন্তানের জন্য খাবার হয়ে যায়। এ রক্ত যেহেতু নাপাক, তাই আল্লাহ পাক এই নাপাক রক্ত থেকে জবানকে হেফাজত করেছেন। কারণ এ জবান দিয়ে মানুষ আল্লাহর জিকির করবে, কোরআন তিলাওয়াত করবে। এ জবানকে হেফাজত করতে পারলে আমরা জিহ্বাকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারব। এ জবান দ্বারা আমরা জিকির করি। কোরআন তিলাওয়াত করি। আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করি। কিন্তু আমাদের দোয়া কবুল হয় না। অথচ সাহাবায়ে কেরামও এ জবান দিয়ে জিকির করতেন। কোরআন তিলাওয়াত করতেন। দোয়া করতেন, তাদের দোয়া কবুল হতো। আমাদের দোয়া কবুল হয় না। কারণ সাহাবায়ে কেরাম জবানের হেফাজত করেছেন। তাদের জবান পাক ছিল। তারা পাক জবান দ্বারা যখন জিকির করেছেন, কোরআন তিলাওয়াত করেছেন, দোয়া করেছেন, তাদের জিকির কবুল হয়েছে। তাদের তিলাওয়াত কবুল হয়েছে। তাদের দোয়া কবুল হয়েছে। আর আমরা আমাদের জবানকে হেফাজত করি না। আমাদের জবান নাপাক। আমরা নাপাক জবান দ্বারা জিকির করি, কবুল হয় না। তিলাওয়াত করি, কবুল হয় না। দোয়া করি, কবুল হয় না। হজরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহ.) বলতেন, পাত্র থেকে তরকারি উঠানোর জন্য চামুচ ব্যবহার করা হয়। চামুচ যদি নাপাক থাকে তাহলে ওই চামুচকে পাক করে তারপর পাত্রে দিতে হয়। ২১ অক্টোবর, ২০১৫/ এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ