উপযুক্ত জমি ও মাটি
আমাদের দেশে প্রা্য় সব ধরণের মাটিতে মাস কলাই চাষ করা যেতে পারে। তবে বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ চাষের জন্য উপযোগী।
জাত পরিচিতি
বিভিন্ন জাতের মাস কলাই রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নত জাত গুলো হচ্ছে-
বারি মাস-১ (পান্থ)
১. গাছের উচ্চতা ৩২-৩৬ সে.মি।
২. বীজের রঙ কালচে বাদামী ও পাকা ফলের রঙ বাদামী।
৩. এ জাতটি দিন নিরপেক্ষ, তাই খরিপ-১, খরিপ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমে চাষ করা সম্ভব।
৪. জীবনকাল ৭০-৭৫ দিন।
৫. প্রতিবিঘা জমিতে গড় ফলন প্রায় ২০০ কেজি।
৬. বংশগতভাবে জাতটি হলুদ ভাইরাস ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।
বারি মাস-২ (শরৎ)
১. গাছের উচ্চতা ৩৩-৩৫ সে.মি. ও স্থানীয় জাতের মতো লতানো হয় না।
২. পত্র ফলকগুলি মাঝারি সরু।
৩. পাকা ফলের রঙ কালচে, ফল খাড়া ও ফলের গায়ে শয়া বা শুং আছে।
৪. আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%।
৫. জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন।
৬. প্রতিবিঘা জমিতে গড় ফলন প্রায় ২২০ কেজি।
৭. এজাতটি খরিপ-১, খরিপ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমে চাষ করা যায়।
৮. বংশগতভাবে জাতটি হলুদ ভাইরাস ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।
বারি মাস-৩ (হেমন্ত)
১. গাছের উচ্চতা ৩৫-৩৮ সে.মি. ও স্থানীয় জাতের মতো লতানো হয় না।
২. ফল পাকলে কালো হয় এবং ফলের গায়ে ঘন শয়া বা শুং আছে।
৪. বীজের রঙ কালচে এবং আকার স্থানীয় জাতের চেয়ে বড়।
৫. জীবনকাল ৭০-৭৫ দিন।
৬. এক বিঘা জমিতে গড় ফলন প্রায় ২৪০ কেজি।
৭. এজাতটি খরিপ-১, খরিপ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমে চাষ করা হয়।
৮. এ জাত হলদে মোজাইক রোগ ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।
বীজ বপন ও সময়
বীজ ছিটিয়ে এবং সারি করে বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে ছিটিয়ে বোনা যায়। প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি হতে পারে।
এলাকা ভেদে বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য-ফাল্গুন থেকে ৩০শে ফাল্গুন (ফেব্রয়ারির শেষ হতে মধ্য-মার্চ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১লা ভাদ্র থেকে ১৫ই ভাদ্র (আগস্টের ১৫-৩১)। তবে মধ্য-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
হেক্টরপ্রতি সার দিতে হবে। যেমন-
সারের নাম সারের পরিমাণ(কেজি)
ইউরিয়া ৪০-৪৫
টিএসপি ৮০-৮৫
এমওপি ৩০-৩৫
অণুজীব সার ৩-৫
অনেক সময় মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে সার কম-বেশি লাগতে পারে।
সেচ ও নিষ্কাশন
বীজ বপনের সময় মাটিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে অংকুরোদগম নিশ্চিত করার জন্য বীজ বপনের আগে একটা হালকা সেচ দিতে হবে। অতি বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অতিরিক্ত খরা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই মাস কলাইয়ের জন্য ক্ষতিকর।
পরিচর্যা
বীজ বপনের ২০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করতে হবে। এবংফসল বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় আগাছা দমন করতে হবে।
রোগ-বালাই ও প্রতিকার
মাসকলাইয়ের পাতার দাগ রোগ
এরোগে পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
বাভিস্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মাস-১, ২, ৩) বপণ করতে হবে।
মাসকলাইয়ের পাউডারি মিলডিউ
এ রোগে পাতায় পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত: শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
টিল্ট-২৫০ বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
মাসকলাইয়ের হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ
মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত: কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
প্রতিকার
রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। সাদা মাছি দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আক্রন্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে বা পুতে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য বৈশাখ (মে মাসের শেষ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর মাসের শেষ) মাসে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
=========ইন্টারনেট অবলম্বনে