শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পরিস্থিতি ও বাস্তবতার বিবেচনায় ইসলামে সাময়ীক জন্মবিরতির পদ্বতি গ্রহনে কোন সমস্যা নেই তবে স্থায়ীভাবে কোন পদ্বতি নিষিদ্ধ।

নবীজির সময়ে যে জন্মবিরতিকরন পদ্ধতিটি প্রচলিত ছিল এটাকে “আযল” (সঙ্গম কালের চরম পূলক মূহূর্তে বীর্য বাইরে ফেলে দেওয়া।) বলা হত। অর্থাৎ এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় দ্বারা প্রজনন উপাদান (বীর্য) জরায়ূতে পৌঁছাতে না পারে সে পদ্ধতি পুরুষ অবলম্বন করুক অথবা নারী। এই উভয় পদ্ধতি প্রচীন কাল থেকেই বিরাজমান। কোন কোন সাহাবা কর্তৃক বিশেষ প্রয়োজন মুহুর্তে এমনটা করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এ ব্যাপারে যে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন তা ছিল এমন যে, এটা যে সম্পূর্ণ নিষেধ তাও বুঝা যায়না। আবার সম্পূর্ণ জায়েয হওয়ারও উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে এতটুকু বুঝা যায় যে, রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এই কাজটি অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। এই জন্য পূর্ববতী ইমামগণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতনৈক্য দেখা যায়। কেউ এটাকে নাজায়েজ মনে করতেন, আবার কেউ বলেন যে এ কাজটা আসলে নাজায়েয তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তা জায়েজ আছে। যদি কোন অসৎ উদ্দেশ্যে তা করা হয় তাহলে তা অবশ্যই না জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য এই
(১) হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) রলেন যে আমরা আমাদের বাদীর সাথে “আযল” করতে চাইলাম অর্থাৎ সময়িক জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করে সঙ্গম করতে চাইলাম। (যাতে ঘরের কাজ করতে তার কোন ঝামেলা না হয়) কিন্তু প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম কে না জানিয়ে এমনটা করতে মন চাচ্ছিলনা তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম কে জিজ্ঞসা করলে তিনি উত্তরে বলেন
ما عليكم أن لا تفعلوا ما من نسمة كائنة إلى يوم القيامة إلا وهي كائنة
অর্থ্যাৎ তুমি যদি “আযল” না কর তাহলে এতে কোন ক্ষতি নাই কেননা কিয়ামত পর্যন্তু যত মানব সন্তান যেভাবে যেভাবে আসার সিদ্ধন্ত হয়ে আছে তা তো বাস্তবায়ন হয়েই থাকবে।
(বুখারী মুসলিম ২৪০৪)
২) আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) এরই আরেকটি বর্ণনা যে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর নিকট আযল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন :
مَا مِنْ كُلِّ الْمَاءِ يَكُونُ الْوَلَدُ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ خَلْقَ شَىْءٍ لَمْ يَمْنَعْهُ شَىْءٌ
অর্থাৎ সব বীর্য থেকে তো আর সন্তান জন্ম নেয় না। আল্লাহ তায়ালা যখন কাউকে সৃষ্টি করতে চান তখন কোন শক্তি তাকে বাধা দিতে পারেনা। (মিশকাত / মুসলিম ৩৬২৭)
মোট কথা যে বীর্য থেকে কোন মানব সন্তানকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করার সিদ্ধন্ত গ্রহণ করে রেখেছেন সেটা অবশ্যই তার যথাস্থানে পৌঁছে সন্তান জন্ম নিবে। তোমরা যতই প্রচেষ্টা চালাও না কেন!
৩। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন যে এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলল :
اعْزِلْ عَنْهَا إِنْ شِئْتَ فَإِنَّهُ سَيَأْتِيهَا مَا قُدِّرَ لَهَا
আমার একটা বাদী আছে সে ঘরের সব কাজ করে। আমি আমার জৈবিক চাহিদাটাও তার থেকে পূরণ করি, আর এটাও চাই যে তার (গর্ভে) পেটে কোন সন্তান যেন না আসে। (যাতে সে ঘরের কাজ ঝামেলা মুক্ত হয়ে করতে পারে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বললেন ঠিক আছে তুমি তার সাথে আযল করতে চাইলে করতে পার, তবে মনে রেখ তার পেট থেকে যে সন্তান হওয়া আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা অবশ্যই জন্ম নিবে। কিছু দিন পর ঐ ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর দরবারে এসে বলতে লাগল  ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ বাদী আযল করা সত্বেও গর্ভবতি হয়ে গেছে’। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বললেন যে আমি তো আগেই বরে ছিলাম যে বাচ্ছা নেওয়ার বিষয়টি ভাগ্য লেখা আছে সেটা অবশ্যই হবে। (মুসলিম শরীফ ৩৬২৯)
৪) হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর নিকটে এসে বলল যে আমি আমার স্ত্রীর সাথে আযল করি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন কেন? তুমি এমনটা করতে যাও কেন?
লোকটা বললঃ আমার একটা বাচ্চা আছে যাকে সে দুধ পান করায়, এখন যদি আবার গর্ভবতি হয়ে যায় তাহলে তো এই বাচ্চাটার কষ্ট হবে, দুধ পাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তাকে বললেন যে, পারস্য ও রোম দেশের লোকেরা তো এমন করে থাকে, তাদের বাচ্চাদেরতো কোন সমস্য হয় না!(মুসলিম)

এই চারটি হাদীস দ্বারা জানা গেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এই কাজ পছন্দ করেননি তবে স্পষ্টভাবে নিষেধও করননি। আর সেই হিসাবে বর্তমান যুগে অস্থায়ী জন্মবিরতীকরনের জন্য বিজ্ঞানের আবিষ্কার নিরাপদ পিল, কন্ডম, ইনজেকশন ইত্যাদি গ্রহন করা যাবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

কন্ডম বা অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের বৈধতা অবৈধতা নির্ভর করে ব্যক্তির নিয়ত, ইচ্ছা, বিশ্বাস ও মানসিকতার উপর। যেসব মানসিকতা ও বিশ্বাসের কারণে অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ইসলামী শরীয়া মতে অনুমোদিত নয় তা নিম্নরূপ : ১। নিজেদের সৌন্দর্যকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ২। কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার আশঙ্কায় জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ৩। গর্ভধারণ কষ্ট, প্রসব বেদনা, দুগ্ধদান এবং শিশুর সেবা যত্নের কষ্ট-ঝামেলা পরিত্রাণ লাভের লক্ষে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ৪। অধিক সন্তান গ্রহণকে লজ্জাকর মনে কের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ৫। আর্থিক অভাব অনটনের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার কারণে সমাজে পশ্চাদপদতা, কুশিক্ষা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও দারিদ্য সৃষ্টি হয়- এ জাতীয় বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনা থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং হারাম।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ