না, গুনাহ্ হবে না ।আসুন আমরা দেখি জাতি বলতে কী বুঝায়। বঙ্কিম চঁন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার প্রবন্ধে লিখেছেন, জাতি
বলতে কোন একক অংশকে বুঝায় না। জাতির বহুরূপতা আছে । যেমন – দেশ জাতি, ভাষা জাতি,
ধর্ম জাতি, বর্ণ জাতি, গোত্র জাতি, প্রভৃতি।’
কিন্তু আমরা ধর্ম জাতি ও দেশ জাতিকে বিভেদ না করে ,এক করে ফেলছি। এটা ঠিক নয় । আমরা
এক এক জন মানুষ একই সাথে বহুজাতির মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। বঙ্কিম এর কথাতে যদি আমি আমাকে
টানি তবে দেখব, আমি দেশ জাতি হিসেবে একজন বাংলাদেশি, ভাষা জাতি হিসেবে একজন বাঙ্গালি,
ধর্ম জাতি হিসেবে একজন মুসলিম/হিন্দু, বর্ণ জাতি হিসেবে একজন শ্বেতাঙ্গ/কৃষ্ণাঙ্গ,ইত্যাদি। এত গুলো বিভাজিত জাতির মধ্যে যে যে অংশে যে নেতার অবদান সে সে অংশে বা গন্ডিতে তিনিই
জাতির পিতা। সে ক্ষেত্রে কেউ কারও স্ব স্ব অবস্থান ছেড়ে অন্যের অবস্থান কেরে নিতে যাবেন না।
যে জাতিতে আমি মুসলিম সে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ এবং যে জাতিতে আমি একজন
বাঙ্গালি সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমান, এই কথাটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
আসুন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যাক, বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি জাতির জনক বললে ক্ষতি আছে
কি’ না?
আল্লাহ তা’লা হযরত ইব্রাহিমকে কোরআনে যে অংশে জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন
সেখানে বলেছেন-
”মিল্লাতা আবিকুম ইবরাহিম.হুয়া সাম্মাকুমু-লমুসলিমিন”।
(সূরা- হাজ ঃ ৭৮)
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। তিনিই তোমাদের কে মুসলিম
নাম প্রদান করেছেন পূর্বেও আর পরেও।
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীন দ্বারা ধর্মকে বুঝায়। তাই এখানে ইব্রাহীম(আঃ) এর সাথে পিতা, ধর্ম, এবং
মুসলিম । এই তিনটি শব্দ স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যার অর্থ দ্বারায় মুসলিম ধর্মের জাতির পিতা। আল্লাহ তা’লা হলেন মহাজ্ঞানী তিনি ভাল ভাবেই জানেন জাতি কোন একক বিষয় নয় তাই তিনি ভালভাবেই
’মুসলিমীন’ কথা উল্লেখ করে জাতিগত বিভেদ দূর করেছেন । তাই এই নিয়ে বিতর্কের কোন স্থান নেই।
আমাদের মধ্যে যদি কেউ বঙ্গবন্ধূকে এই বলে জাতির পিতা বলতে অস্বীকার করে যে ’ইব্রাহীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নয়।’ সে মূলত না বুঝেই এ কথা বলল। এবং কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝল না।
কোরানে কেন আল্লাহ ইব্রাহিমকে মুসলিম জাতির পিতা বলেছেন? তা আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখব,
ইসলাম আমাদের ধর্মের নাম কিন্তু ধর্মীয় জাতিতে আমরা মুসলিম। ইসলাম ধর্ম এসেছে আজ থেকে দেড়
হাজার বছর আগে, কিন্তু মুসলিম জাতিসত্তা এসেছে কয়েক হাজার বছর আগে। সেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছ থেকে। যুগে যুগে সকল নবীর অনুসারীগণ ধর্ম ভিন্ন হলেও, তারা জাতিতে মুসলিম ছিল।
ইহুদি, ঈসাহী, সাবেইন, প্রভৃতি ধর্ম যুগে যুগে এসেছে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে এবং তাদের সবার অনুসারীগণ জাতিতে মুসলিম ছিল। কারণ মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পণকারী । যারাই আল্লাহকে এক বলে মেনেছে তারাই আল্লাহ’র নিকট আত্মসমর্পণকারী বা মুসলিম। ইসলাম শেষ ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে এর ব্যতিক্রম নয়। আল্লাহর একত্তবাদ (তাওহীদ) এর প্রচার শুরু হয়েছে ইব্রাহীম থেকে। আর যেহেতু মুসলিমরা এতে
বিশ্বাসী। তাই এ জাতির প্রবক্তা ও অবদান সরূপ তাকেই আল্লাহ জাতির পিতা করেছেন। এখানে আল্লাহ
নিদর্শন দিয়েছেন যে, যেখানে যার অবদান সেখানে তাকে তার পিতা বলা যায়। বা যে জাতিতে যার অবদান সে জাতিতে তাকে পিতা বলা যায়। তাই আমরা পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশেই জাতির পিতা
দেখতে পাই। এবং যেসব ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির অবদান সেসব ক্ষেত্রে তাকেই তার জনক বলি। যেমনঃÑ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ, পেনিসিলিয়ামের জনক লুইপাস্তুর, আধুনিক জীবন বিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল, কম্পিউপারের জনক আইকেন ইত্যাদি।
সুত্রঃ জাতির পিতা