যৌনাঙ্গের আঁচিল কি?

যৌনাঙ্গের আঁচিল বা জরুল বা জেনিটাল ওয়ার্টস (Genital Warts) খুবই সাধারণ একটি যৌন সংসর্গিত সংক্রমণ, যা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) কারণে হয়। অন্যান্য উপর্গের মধ্যে ব্যথা, অস্বস্তি এবং চুলকানি হল এর অন্যতম বৈশিষ্ট। পুরুষ ও মহিলাদের যৌনাঙ্গ অঞ্চলের কাছাকাছি একটি বা একগুচ্ছ আঁচিল দেখা দিতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই সংক্রমণের কবলে পড়ার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে এইআইভি (HIV)-এর পর যৌনসংক্রমণে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ ফেলছে এইচপিভি (HPV)। সমীক্ষা বলছে, গোটা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩,৬০,০০০ মানুষ জেনিটাল ওয়ার্টসের শিকার হয়। সংক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁচিল দেখা যায় না। সপ্তাহখানেক পর গজিয়ে ওঠে। ত্বকের সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে বা এত ছোটো হয়, যে অনেকসময় খালি চোখে দেখাও যায় না। ফলে সংক্রমণ যে হয়েছে, বোঝায় উপায় থাকে না। কিন্তু যেসব আঁচিল দেখা যায়, সেগুলির মাথা অনেকটা বাঁধাকপির মতো দেখতে। সংক্রমণকারীর যৌনাঙ্গে একটি আঁচিল দেখা দিতে পারে, বা একসঙ্গে অনেকগুলি আঁচিলও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, ওরাল সেক্স করলে অনেকসময় ঠোঁটে, মুখে, জিভে ও গলাতেও আঁচিল গজিয়ে উঠতে পারে। এ ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে।

যৌনাঙ্গের আঁচিল এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?

যৌনাঙ্গের আঁচিল বিভিন্ন রূপে দেখা দিতে পারে। যৌনাঙ্গে আঁচিলের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  • ছোটো, বিক্ষিপ্ত ফোলা (চামড়ার রঙে অথবা গাঢ় বর্ণ)।
  • যৌনাঙ্গে একগুচ্ছ ফোলা অংশ।
  • কুঁচকির জায়গায় চুলকানি অথবা অস্বস্তি।
  • যৌন মিলনের সময় রক্তপাত ও তার পর ব্যথা।


যৌনাঙ্গের আঁচিল যেসব জায়গায় দেখা দেয়:

মহিলাদের ক্ষেত্রে:

  • যোনির ভিতরে।
  • যোনিদ্বার, জরায়ু গ্রীবা, অথবা কুঁচকিতে।


পুরুষদের ক্ষেত্রে:

  • লিঙ্গে।
  • অন্ডথলি, উরু অথবা কুঁচকিতে।


উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই:

  • মলদ্বারের চারপাশে।
  • ঠোঁট, মুখ, জিভ, অথবা গলায়।


যৌনাঙ্গের আঁচিলের প্রধান কারণগুলি কি কি?

যৌনাঙ্গের আঁচিলের মূল কারণ এইচপিভি সংক্রমণ। এই সংক্রমণ এইচপিভি সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে যেসকল উপায়ে:

  • যৌনসঙ্গম (যোনি, মুখ অথবা পায়ু দ্বারা)- এইচপিভি দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় খুব অল্প বয়সে যৌন ক্রিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠলে অথবা একাধিক সঙ্গী বা সঙ্গীনীর সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গ বা এমন কারওর সাথে যৌন মিলন লিপ্ত হওয়া, যার যৌনসঙ্গম সংক্রান্ত ইতিহাস জানা নেই।
  • প্রসব (সংক্রামিত মায়ের থেকে শিশুর দেহে সংক্রামিত হয়)।


যৌনাঙ্গের আঁচিল কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আংশিকভাবে এই রোগ নির্ণয় করেন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে, যার নির্ধারণে পুরো আঁচিলটি বা তার কিছুটা অংশ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পরীক্ষার জন্য।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির পরামর্শ দিতে পারেন:

  • পোডোফাইলোটক্সিন (আঁচিলের কোষের বৃদ্ধির রোধ করতে)।
  • ইমিকুইমড (এইচপিভি-র বিরুদ্ধে লড়াইর জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে)


কখনও সখনও কিছু পদ্ধতির অবলম্বন করা হয়, এগুলি হল:

  • ক্রায়োসার্জারি (তরল নাইট্রোজেন) যার দ্বারা আঁচিলকে জমিয়ে দেওয়া হয়।
  • কেটে ফেলা অথবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দেওয়া।
  • ইলেক্ট্রোকটারি (বিদ্যুৎ প্রবাহ) আঁচিল বিনষ্ট করে দেয়।
  • লেজার ট্রিটমেন্ট (লেজার লাইট) আঁচিল নষ্ট করে দেয়।


বহু ভুল ধারণা চালু আছে এইচপিভি নিয়ে
এইচপিভি ভাইরাস নিয়ে যেসব ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, তার একটি হলো - অনেকেই মনে করে একমাত্র সেক্স বা যৌনতার মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়ায়।

বাস্তবে এইচপিভি সাধারণত যৌনতা-বাহিত, কিন্তু প্রকৃত অর্থে যৌন-সঙ্গম না ঘটলেও - শুধু 'জেনিটাল' বা যৌনাঙ্গ ও 'ওরাল' বা মৌখিক যে কোনো সংস্পর্শের মাধ্যমেই - এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

দ্বিতীয় ভুল ধারণাটি হলো: কারো এইচপিভি হলে ধরে নিতে হবে যে সে বহু নারী বা পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে।

কিন্তু আসলে তা নয়। ব্রিটেনের লোকদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোন না কোন পর্বে এইচপিভি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে। এমনকি জীবনের প্রথম যৌন সংসর্গেও এ সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে।

তৃতীয় ভুল ধারণা: কারো এইচপিভি হবার মানেই হলো তার ক্যান্সার হয়েছে। আসল ব্যাপার হলো: এইচপিভি আছে প্রায় ২০০ রকমের। এর মধ্যে ৪০ রকম এইচপিভি আপনার যৌনাঙ্গ বা তার আশপাশে হবে এবং সেখানেই এ ভাইরাস বাসা গাড়বে। তবে ১৩ শতাংশ এইচপিভি ভাইরাস এমন ধরণের যা জরায়ু , গলা বা মুখের ক্যান্সার তৈরি করতে পারে - তবে তা খুবই বিরল।

চতুর্থ ভুল ধারণা: এইচপিভি হলে আপনি টের পাবেন। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইচপিভির কোন লক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সময় শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই এ ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। তবে জরায়ুমুখের স্ক্রিনিং থেকে এটা ধরা যেতে পারে।

যৌনাঙ্গের আঁচিলের চিকিৎসা সঠিক সময় না করালে অনেকসময় ভয়াবহরূপ ধারণ করতে পারে। যার থেকে হতে পারে সার্ভিকাল এবং যোনির ক্যান্সার। এইচপিভি প্রতিকারে টীকাকরণ আঁচিলের পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে