আমি অনেক গুলো বই ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে জানতে চেষ্টা করেছিলাম সাদাকাতুল ফিতরা আমি কি দিয়ে পরিশোধ করব ? বাট আমি সঠিক কোন উত্তর পাইনি । এক এক জায়গায় এক এক রকম কেউ বলছে খাদ্য দ্রব্য দিয়েও হবে কেউ কেউ বলছে সম পরিমান টাকা দিয়েও হবে আবার কেউ কেউ বলছে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় হবে না । কোথায়ও ১ সায়ের কথা আছে কোথায়ও অর্ধ সা । তাই আমি খুব বিপাকে আছি আসলে সঠিক মাছালা কোনটা হবে ?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ভাই, আপনি শরীয়তের বিভিন্ন মাসয়ালায় সঠিকতায় পৌছতে এতটা রিসার্চ করছেন শুনে অনেক ভাল লাগলো। আল্লাহ আপনার এই ইচ্ছা শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিন। চলুন এবার এই বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। ভাই দেখুন, খাদ্যশস্য ব্যতীত অর্থ কিংবা দীনার-দিরহাম দিয়ে ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে- তাবেঈদের কোন আমল পাওয়া যায় না। খাদ্যশস্যের স্বপক্ষেই হাদীছে এসেছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা খাদ্যশস্য ‏(ﻃﻌﺎﻡ ‏) যব, খেজুর, পনীর, কিশমিশ দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৬।] ﻃﻌﺎﻡশব্দটির অর্থ হ’ল খাদ্য। পরিভাষায় যা দিয় ক্ষুধা নিবারণ করা যায়, তাই ﻃﻌﺎﻡ। ﻃﻌﺎﻡদ্বারা টাকা-পয়সা বুঝায় না। তাছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পূর্ব যুগ হ’তেই মক্কা-মদীনায় দিরহাম- দীনার প্রভৃতি মুদ্রার প্রচলন ছিল। কিন্তু তিনি এক ছা‘ খাদ্যশস্যের মূল্য হিসাবে দিরহাম প্রদানের নির্দেশ দেননি। বরং খাদ্যশস্য দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় ওয়াজিব করেছেন। খাদ্যশস্য ব্যতীত মূল্য দিয়ে ফিৎরা প্রদানে অনেক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। যেমন- নং ব্যক্তির নাম চাউলের নাম প্রতি কেজি ২১/২ কেজির মূল্য মূল্য পার্থক্য ১ আব্দুল করীম মিনিকেট ৭০/= ১৭৫/= ১০০/= ২ আব্দুর রহীম দাউদকানী ৬০/= ১৫০/= ৭৫/= ৩ আব্দুস সালাম জিরাশাল ৫০/= ১২৫/= ৫০/= ৪ আব্দুল জববার ব্রি ২৮ ৪০/= ১০০/= ২৫/= ৫ আব্দুস সাত্তার গুটি স্বর্ণা ৩০/= ৭৫/= ০০/= এখানে আব্দুল করীম সবচেয়ে দামী ও আব্দুস সাত্তার কম দামী চাউলের ভাত খায়। এদের দু’জনে ছাদাক্বাতুল ফিতর হিসাবে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে যদি মূল্য প্রদান করা হয়, তাহ’লে আড়াই কেজি চাউলের মূল্যের পার্থক্য হবে ১০০/= টাকা। কিন্তু তারা উভয়েই যদি খাদ্যশস্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করে, তবে তাদের পরিমাণ আড়াই কেজি বা একই সমান হবে। তাছাড়া বণ্টনের সময় হতদরিদ্র ব্যক্তি সবচেয়ে দামী চাউলের ছাদাক্বা পেয়েও খুশী হবে। খাদ্যশস্যের মূল্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করা, ছাদাক্বা ক্রয় করার নামান্তর। যা ইসলামে নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) তাঁর একটি ঘোড়া এক ব্যক্তিকে সওয়ার হওয়ার জন্য আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বা করে দিলেন, যে ঘোড়াটি রাসূল (ছাঃ) তাকে দান করেছিলেন। তারপর তিনি (ওমর) খবর পেলেন, লোকটি ঘোড়াটি বাজারে বিক্রি করছে। এ খবর শুনে ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি ঘোড়াটি ক্রয় করতে পারি? রাসূল (ছাঃ) জবাবে বললেন, তা ক্রয় কর না এবং তোমার ছাদাক্বা ফেরৎ নিও না।[ বুখারী হা/৩/২৫৭১ (কিতাবুল ওয়াসা) ও হা/৩/২৭৪৯-৫০ ‘কিতাবুল জিহাদ’ অধ্যায়।] আলোচ্য হাদীছ হ’তে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন প্রকারের ছাদাক্বা ক্রয় করা হারাম। যদি ক্রয় করা হালাল হ’ত তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে ক্রয় করার অনুমতি দিতেন এবং ফিৎরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে দিরহাম-দীনার প্রদানের অনুমতিও দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। চার খলীফা, ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ কেউই অনুরূপভাবে ছাদাক্বা ক্রয় করার পক্ষে ছিলেন না। যারা ফিৎরা দ্রব্যমূল্যে (টাকায়) প্রদানের স্বপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য কি তা আদৌ বোধগম্য নয়। কেননা ফিৎরা হ’ল ফরয এবং কুরবানী হ’ল সুন্নাত। ফরযকে যদি পরিবর্তন অথবা পরিমার্জন করা জায়েয হয়, তাহ’লে কুরবানীর পরিবর্তে তার মূল্য প্রদানে বাধা কোথায়? নিয়ত তো বেশ ছহীহ। যেহেতু কুরবানীর সমমূল্য জায়েয নয়। সুতরাং ফিতরার মূল্য প্রদানও জায়েয নয়। এ সম্পর্কে ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন’। [ মাজমূ‘আ ফাতওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৬/৩০৪; মুগনী ১১/৯৪-৯৫ পৃঃ।] অতএব পরকালে পরিত্রাণের নিমিত্তে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা আমাদের সকলের জন্য অপরিহার্য। অন্যথা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদেরক হেফাযত করুন-আমীন!!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ