শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

প্রেমের মৃত্যু নাকি বিয়েতে! এমন নেতি দিয়ে শুরু করাটা কি ঠিক হলো? কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করছেন যাঁরা, এ কথা তাঁদের চারপাশের মানুষজন হরহামেশাই যে বলে থাকেন। বিয়ের আসরে এটি জনপ্রিয়তম রসিকতাও বটে, যা অনুষ্ঠানের বাতাসে উড়তেই থাকে। আসলেই কি বিয়ের পর প্রেম উবে যায়? বিয়ের পর কি প্রেম হয় না? শেষের কবিতা শুরুতে প্রেম-বিয়ে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট বলেননি। শেষের কবিতায় প্রেমের মনস্তত্ত্ব বলেছেন অমিত রায়ের মুখে। প্রেমিকা লাবণ্যকে নয়, অমিত বিয়ে করছেন কেতকী ওরফে কেটিকে আর বলছেন ‘যে ভালোবাসা...আকাশে মুক্ত থাকে অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ; যে ভালোবাসা...প্রতিদিনের সবকিছুতে যুক্ত হয়ে থাকে সংসারে সে দেয় আসঙ্গ। দুটোই আমি চাই।’ যখন অমিত বলেন, ‘কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই; কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল...প্রতিদিন ব্যবহার করব আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার ভালোবাসা সে রইল দিঘি। সে ঘরে আনবার নয়...’ তখন শেষের কবিতার যতির মতো আমরাও কুণ্ঠিত হয়ে বলি, ‘কিন্তু অমিতদা দুটোর মধ্যে একটাকেই বেছে নিতে হয় না?’ রবীন্দ্রনাথের উত্তর অমিতের মুখে ‘যার হয় তারই হয়, আমার হয় না।’ কিন্তু আমরা যাঁরা জনসাধারণ, তুর্কি-তরুণ, ভালোবাসছি-বেসেছি-বাসব; প্রেম করে বিয়ে করছি, বিয়ে করেও প্রেম করব, তাঁদের বেলায়? প্রথম প্রেমের গান সদ্য বিয়ে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে চাকরিতে ঢোকা এক তরুণী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বললেন, বিয়ের আগে ভালোবাসা হয়নি। দূর থেকে চেনাচেনা (ফেসবুকের কল্যাণে) মানুষটিকে বিয়ে করেছেন পারিবারিকভাবে। বিয়ের পর কাছাকাছি হয়ে মাস ছয়েকেই গভীর প্রেমে পড়েছেন দুজনেই, তো বিয়ের পরও ‘প্রথম’ প্রেম হয়! ছবি: কবির হোসেনএকালের বয়ান বিয়ে-প্রেম নিয়ে সরল প্রশ্ন। বিয়ের পরে প্রেম হয় না? তরুণ কবি, চলচ্চিত্রনির্মাতা কামরুজ্জামান কামু জানান, ‘বরং গাঢ় হয়। অবশ্য দূরে থাকায় যে আকর্ষণ কাজ করে; কাছাকাছি থাকায় সে সম্পর্ক হয়ে যায় নিজের হাতের মতো, শরীরের মতো।’ লীন হওয়া? কামু সম্মতি দেন। বিয়ে করেছেন প্রেম করে। বিয়ের ব্যাপারে বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করাই ভালো। এ ক্ষেত্রে পরস্পরকে জানা, বোঝা যায়।’ কিন্তু যাঁরা প্রেম ছাড়াই বিয়ে করছেন? কামু আশ্বস্ত করেন, বিয়ের পরই তো প্রেমের শুরু। এ ক্ষেত্রে নিজের মস্তিষ্ককে ‘আদেশ’ দেওয়া; ভালোবাসা জাগিয়ে রাখতে হবে। সংসারের জন্য দুজন মানুষ কী খাটুনিটাই না খাটেন। তার পরও জীবনে থাকে অসংখ্য নরম ভোর, সোনারং বিকেল, সন্ধ্যা, রাত। এ মুহূর্তগুলোকে প্রেমে ভরিয়ে তোলাই তো ভালোবাসায় বাঁচা। নইলে কেনইবা আমরা বাঁচি! শুধু গ্রাসাচ্ছাদনই কি জীবন? চল্লিশের মোহনা পেরিয়ে পেশায় প্রকৌশলী। পারিবারিক বিয়ে। চল্লিশ পেরিয়ে আজও স্ত্রীর প্রতিটি খুঁটিনাটি, পছন্দ-অপছন্দ, ছোটখাটো শখ-চাওয়া-না বলা ইচ্ছে সব পূরণ করেন, মনে রাখেন আর মুগ্ধ করেন অর্ধাঙ্গিনীকে। কীভাবে? প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব ভালোবাসা অনেকটা নাজুক লতার মতো, তাকে সারাক্ষণ আদর-যত্নে রাখতে হয়। আলাদা করে তাঁর অর্ধাঙ্গিনীকেও প্রশ্ন করলে সেই একই উত্তর। আসলে মেলবন্ধনে দুজনেরই প্রেম জরুরি নইলে হয় না। বেঁচে থাক সর্দিকাশি সাহিত্যে প্রেমের বৈচিত্র্যময় সব ছবি এঁকেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। শিরোনামটি তাঁরই এক গল্পের। সেখানে জার্মানির শীতে সর্দিকাশিতে পেরেশান তিতিবিরক্ত লেখককে তাঁর প্রেমের গল্প বলছেন এক ডাক্তার। বলছেন সর্দিকাশির ভালো দিকও আছে। কেননা, এই সর্দিকাশিই তো মিলিয়ে দিয়েছিল তাঁর প্রেমকে। পূর্ণতা পেয়ে প্রেম যে মোহনায় মেশে তাঁর নামই তো সংসার; সেখানে বিশ্বাস, সমানুভূতি আর দায়িত্বশীলতার পায়ে ভর করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয় ভালোবাসা। পাদটীকা: আনা কারেনিনা অবশ্য বিয়ের পরের প্রেম মানেই যে ধোয়া তুলসীপাতা, তা নয়। পরকীয়া, জানালার ওপাশে উঁকি দেওয়া মদির, নিষিদ্ধ রাতের মতো। তলস্তয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস আনা কারেনিনার শুরু করেছিলেন যে বাক্যে, উদ্ধৃতি হিসেবেও তা বিখ্যাত। ‘পৃথিবীর প্রতিটি সুখী পরিবার একই রকমভাবে সুখী, প্রতিটি অসুখী পরিবার নিজের নিজের ধরনে অসুখী।’ কিন্তু আমরা কি অসুখী হওয়ার জন্যই বিয়ে করি? সুখ সবারই চাই। আনাও চেয়েছিল। তবে সাধু সাবধান। তলস্তয়ের দিব্যদৃষ্টি ছিল। এর পরিণতি ভয়ংকর। তার চেয়ে ‘একইরকম’ভাবে সুখী হওয়াই শ্রেয় নয়কি! লেখক: কবি

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ