শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করার সময়ে ঋতুবর্তী নারীর পক্ষে কুরআন স্পর্শ করা; বিশেষ করে যখন শিক্ষিকা আমাদেরকে এই কথা বলে বাধ্য করে যে, এটা হারাম নয়, কেননা আমরা তো শিখছি— এই ক্ষেত্রে বিধান কী হবে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

এই মাসআলাটি দু’টি মাসআলাকে শামিল করে: প্রথম মাসআলা: অযুবিহীন অবস্থায় মুসহাফ স্পর্শ করা।বিজ্ঞ আলেমগণ এই ব্যাপারে মতভেদ করেছেন, তাদের কেউ কেউ বলেন: অযুবিহীন অবস্থায় তা স্পর্শ করা বৈধ, কারণ, কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতার আবশ্যকতার উপর বিশুদ্ধ দলিল নেই।আর এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, ঋতুবর্তী নারীর জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ, কারণ, কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতা শর্ত নয়। আর অপর আলেমগণ বলেন: যে ব্যক্তি পবিত্র নয়, তার জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « لا يمس القرآن إلا طاهر ». “পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেউ আল-কুরআন স্পর্শ করবে না।” আরطاهر শব্দের অর্থঃ অযুভঙ্গের মতো অপবিত্রতা থেকে পবিত্র এবং নাপাকির অপবিত্রতা থেকে পবিত্র, সুতরাং অপবিত্র ব্যক্তির অঙ্গ দ্বারা তা স্পর্শ করবে না। আর প্রথম পক্ষের আলেমগণ এই দলিল পেশের জবাবে বলেন যে, তার দ্বারা অযু ভঙ্গের মত অপবিত্রতা এবং নাপাকি বা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা বুঝানোর যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে তার দ্বারা শির্ক থেকে পবিত্রতা বুঝানোর সম্ভাবনাও রয়েছে, কেননা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « إن المؤمن لا ينجس ». “নিশ্চয় মুমিন অপবিত্র হয় না।” তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের প্রসঙ্গে বলেন: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ ﴾ [التوبة: ٢٨] “হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র।” - (সূরা আত-তাওবা: ২৮) আর এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, মুসলিম মাত্রই পবিত্র, সুতরাং তার জন্যকুরআন স্পর্শ করা বৈধ, আর অমুসলিম ব্যক্তি অপবিত্র, সুতরাং তার জন্যমুসহাফ স্পর্শ করা বৈধ নয়।আর যখন কোনো শব্দ দু’টি অর্থঃ ের সম্ভাবনা রাখবে, তখন প্রমাণ ব্যতীত সম্ভাব্য দু’টি অর্থঃ ের একটি বাদ দিয়ে অপরটি আবশ্যক করা যাবে না।আর এ শব্দটি ব্যাপক অর্থঃ বোধ শব্দ নয় যেএটা অপবিত্র ব্যক্তি ও কাফির উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করবে এটা বলা যাবে, বরং এটা যৌথ অর্থঃ বোধক শব্দ, যাতে দু’টি অর্থঃ ের সম্ভাবনা সমানভাবে থাকে। যাই হোক, উত্তম হল পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত কেউ মুসহাফ স্পর্শ করবে না। আর আলহামদুলিল্লাহ্, এই সমস্যার সমাধান সহজ। কেননা যে নারী ঋতুবর্তী অবস্থায় থাকবে, সে হাতমোজা পরিধান করে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টাতে পারবে ও তাকে ধরতে পারবে। দ্বিতীয় মাসআলা: ঋতুবর্তী নারীর জন্য আল-কুরআন পাঠ করা, আর এই বিষয়টি নিয়েও আলেমদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেন: তার জন্য আল-কুরআন পাঠ করা বৈধ, কারণ, সুন্নাহ’র মধ্যে এমন কোন স্পষ্ট সহীহ দলিল নেই, যা তাকে এমতাবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করে, আর এই মতটি বিশুদ্ধতার খুব কাছাকাছি, কিন্তু জরুরি প্রয়োজন না হলে এমতাবস্থায় কুরআন পাঠ না করাটাই উত্তম, আর জরুরি বিষয়টি যেমন: শিক্ষিকা হলে তার ছাত্রীদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে কুরআন পাঠ করা, অথবা সে ছাত্রী, শিক্ষার জন্য বা পরীক্ষার তা পাঠ করতে হয়, সুতরাং এতে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ। আর জবাবটি শেষ করার পূর্বে আমি সতর্ক করতে ইচ্ছুক যে, কিছু মানুষ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ [الواقعة: ٧٩] “যারা সম্পূর্ণ পবিত্র, তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না” - (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৭৯) –এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করে যে, অযুবিহীন ব্যক্তি আল-কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না।কিন্তু আয়াতটি তা প্রমাণ করে না এবং এর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ [الواقعة: ٧٧، ٧٩] “নিশ্চয় এটা মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, যাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে, তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না” - (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৭৭ - ৭৯) এর অর্থঃ , এই সুরক্ষিত কিতাব পবিত্রকৃত ব্যক্তিগণ ব্যতীত অন্য কেউ স্পর্শ করে না, আর তিনি কর্তৃবাচক বিশেষ্যের শব্দ ব্যবহার করে বলেন নি: "إِلَّا ٱلۡمُطَهِّرُونَ"(পবিত্রতা অর্জনকারীগণ ব্যতীত)।আর যদি অযুবিহীন অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীগণ উদ্দেশ্য হত, তবে তিনি বলতেন: "لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهِّرُونَ "(পবিত্রতা অর্জনকারীগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না)। আর যেহেতু তিনি বলেছেন: ﴿ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾“যাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে”, সেহেতু এটা প্রমাণ করে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফেরেশতাগণ।সুতরাং আয়াতের অর্থঃ হবে: ফেরেশতাগণ ছাড়া অন্য কেউ এই সুরক্ষিত কিতাব স্পর্শ করে না।আর সুরক্ষিত কিতাব হচ্ছে লওহে মাহফুয। আবার কেউ কেউ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐসব সহীফা, যা ফেরেশতাদের হাতে বিদ্যমান আছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿كَلَّآ إِنَّهَا تَذۡكِرَةٞ ١١ فَمَن شَآءَ ذَكَرَهُۥ ١٢ فِي صُحُفٖ مُّكَرَّمَةٖ ١٣ مَّرۡفُوعَةٖ مُّطَهَّرَةِۢ ١٤ بِأَيۡدِي سَفَرَةٖ ١٥ كِرَامِۢ بَرَرَةٖ ١٦ ﴾ [عبس: ١١، ١٦] “কখনো নয়, এটা তো উপদেশ বাণী, কাজেই যে ইচ্ছে করবে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা আছে মর্যাদাসম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র, লেখক বা দূতদের হাতে, (যারা) মহাসম্মানিত ও নেককার।” - (সূরা ‘আবাসা: ১১ - ১৬)। শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন ফতোয়ায়ে মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ১ / ১১৫

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ