শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জান্নাতের নেয়ামতঃ 

জান্নাতীদের প্রথম খাবার ও পানীয়

রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোলাম সাওবান রাযিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট দাঁড়িয়ে ছিলাম। ইতোমধ্যে ইহুদীদের পাদ্রীদের মধ্য থেকে একজন পাদ্রী আসল এবং জিজ্ঞেস করল, "যে দিন আকাশ ও যমিন প্রথম পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে?" রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "পুলসেরাতের নিকটবর্তী এক অন্ধকার স্থানে"। অতঃপর ইহুদী আলেম জিজ্ঞেস করল, "সর্ব প্রথম কে পুলসিরাত পার হবে?" তিনি বললেন, "গরীব মুহাজিরগণ (মক্কা থেকে মদীনার হিযরতকারী)"। ঐ ইহুদী পাদ্রী আবার জিজ্ঞেস করল, "জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্ব প্রথম তাদেরকে কী খাবার পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "মাছের কলিজা"। ইহুদী জিজ্ঞেস করল, "এর পর কী পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এরপর জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে পালিত গরুর গোশত পরিবেশন করা হবে"। এরপর ইহুদী জিজ্ঞেস করল, "খাওয়ার পর পানীয় কী কী পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "সালসাবীল নামক ঝর্ণার পানি"। ইহুদী পাদ্রী বলল, "তুমি সত্য বলেছ..."। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল হায়েজ)


এ পৃথিবী হবে জান্নাতীদের রুটি

আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ কিয়ামতের দিন এ পৃথিবী একটি রুটির ন্যায় হবে। আল্লাহ্‌ স্বীয় হস্তে তা এমনভাবে উলট পালট করবেন যেমন তোমাদের কেউ সফররত অবস্থায় তার রুটিকে উলট পালট কর। আর ঐ রুটি দিয়ে জান্নাতীদেরকে মেহমানদারী করা হবে"। (সহীহ মুসলিম)


সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতীদের খাবার পরিবেশন করা হবে


কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন,


এবং সকাল সন্ধ্যায় তাদের জন্য রিযিকের ব্যবস্থা থাকবে। "(সূরাহ মারইয়ামঃ ৬২)


”জান্নাতের শরাব পান করার পর কোন প্রকার মাতলামি ভাব দেখা দিবে না। (সূরাহ আস্‌-সা-ফ্‌ফাতঃ ৪১-৪৭)"


"জান্নাতীদেরকে এমন শরাব পান করানো হবে যার মধ্যে আদার স্বাদ থাকবে। (সূরাহ আদ্‌-দাহ্‌রঃ ১৫-১৮)"


"জান্নাতীদের পানের জন্য সুস্বাদু পানি, সুমিষ্ট দুধ, সুস্বাদু শরাব, পরিষ্কার স্বচ্ছ মধুর নদীও জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে। (সূরাহ মুহাম্মদঃ ১৫)"


"জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য অন্যান্য ফল ব্যতীত খেজুর, আঙ্গুর, আনার, বরই, আনজীর ইত্যাদি ফলও থাকবে। (সূরাহ আর-রহমানঃ ৬৮), (সূরাহ আল-ওয়াক্বি'আহঃ ২৭-৩২)"


"জান্নাতীদের সেবায় 'শারাবান ত্বাহুরা' (পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়) পেশ করা হবে। (সূরাহ আদ্‌-দাহ্‌রঃ ২১)"


"উটের গর্দানের মত পাখির গোশত জান্নাতীদের পরিবেশন করা হবে। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)"


জাহান্নামের বিবরণঃ  


আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

আমরা একদা রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় একটি বিকট শব্দ শোনা গেল। রাসূল (সা.) বললেন, "তোমরা কি জান এটা কিসের শব্দ?" আমরা বললাম, "আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলই এ ব্যাপারে ভাল জানেন।" তিনি বললেন, "এটি একটি পাথর, যা আজ থেকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, আর তা তার তলদেশে যেতে ছিল এবং এত দিনে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে।"

(সহীহ মুসলিম)

আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত -

তিনি রাসূল কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, "বান্দা মুখ দিয়ে এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে আকাশ ও যমিনের দূরত্বের চেয়েও গভীরে চলে যায়।"

(সহীহ মুসলিম-কিতাবুয যুহদ)


জাহান্নামের পরিবেশ: বিশ্বাস করা হয়, জাহান্নামীরা যখন খাবার চাইবে তখন তাদের দেয়া হবে যাক্কুম নামক কাটা যুক্ত ফল, আর তাদেরকে দেয়া হবে জাহান্নামীদের উত্তপ্ত রক্ত ও পুজ।

জাহান্নামীদের অবস্থা: হযরত আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী করিম (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, 'হে লোক সকল ! তোমরা (আল্লাহর আযাবের ভয়ে) বেশী করে কাঁদ । আর যদি তোমরা এরূপ করতে না পার (কান্না যদি না আসে) , তাহলে অন্তত (ভয়ে) কান্নার ভান কর । কেননা, জাহান্নামীরা জাহান্নামে গিয়ে এমনভাবে কাঁদবে যে, তাদের অশ্রু তাদের মুখের উপর এভাবে গড়িয়ে পড়বে , মনে হবে এটা পানির নালা । এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে এবং এর স্হলে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করবে । তারপর (এ রক্ত ক্ষরণের দরুন) তাদের চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে যাবে । ( এরপর এই ক্ষত স্হান থেকে আরো বেশী রক্ত বের হবে, তখন জাহান্নামীদের এই অশ্রু এবং রক্তের পরিমাণ এমন হবে যে,) সেখানে যদি অনেকগুলো নৈাকা চালিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অনায়াসে চলতে পারবে । - শরহুস সুন্নাহ ।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত , রাসূলূল্লাহ (সাঃ) এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন, 'তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর যে, মুসলিম না হয়ে তোমরা মরবেনা ।' এরপর তিনি (আল্লাহকে এবং আল্লাহর আযাবকে ভয় করা প্রসঙ্গে ) বললেনঃ যাককুম (যার প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে এটা জাহান্নামে উৎপন্ন এক প্রকার গাছ এবং এটা জাহান্নামীদের খাবার হবে ) এর একটি ফোটা যদি এই দুনিয়ায় ছিটকে পড়ে, তাহলে পৃথিবীতে বসবাসকারী সবার জীবনোপকরণ বিনষ্ট করে দিবে । অতএব, ঐ ব্যাক্তির কি অবস্হা হবে যার খাবারই হবে যাক্কুম ?' - তিরমিযি ।


জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আবু তালিবের। তার পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। বুখারী- ইবেন আব্বাস (রাঃ) দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ের বের করা হবে। তাকে বলা হবে, তুমি দুনিয়াতে কখনো সুখ ভোগ করেছিলে? সে বলবে না, আমি কখনো সুখ ভোগ করিনি। মুসলিম- আনাস (রাঃ) জাহান্নামের সবচেয়ে কম ও সহজতর শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতো। বুখারী, মুসলিম- আনাস (রাঃ)।



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ