গ্যালিলিও গ্যালিলি (ইতালীয় উচ্চারণ: ɡaliˈlɛːo ɡaliˈlɛi, জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ - মৃত্যু: ৮ জানুয়ারি, ১৬৪২)। একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরণের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এরিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
জীবনীঃ গ্যালিলিও ১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ইতালির টুসকানিতে অবস্থিত পিসা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ এবং সংগীতশিল্পী ছিলেন। ভিনসেঞ্জো ১৫২০ সালে ইতালির ফ্লোরেনসে জন্ম নেন। তার মা'র নাম গিউলিয়া আমানাটি (Giulia Ammannati)। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা মা'র সাত সন্তানের (কারও কারও মতে ৬) মধ্যে সবার বড়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবীও ছিলেন।
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও ১৫৮৯ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন।
গ্যালিলিও এবং মারিনা গ্যামবা তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। গ্যালিলিও একজন নিবেদিত রোমান ক্যাথলিক ছিলেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা মেনে নিলে তার বিবাহবহির্ভূত এই যৌনাচার অনেকটাই অবাস্তব মনে হয়। তাদের দুই মেয়ে (ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া) এবং এক ছেলে (ভিনসেঞ্জিও) জন্মেছিলো। বিবাহবহির্ভূত সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের দুই মেয়েকেই স্বল্প বয়সে আরসেট্রিতে অবস্থিত সান মেটিও নামক চার্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের দুই মেয়েকে বাকি জীবন সেখানেই পার করতে হয়েছিলো। কনভেন্টে প্রবেশের পর ভার্জিনিয় মারিয়া সেলেস্টি নাম ধারণ করে, সে-ই ছিলো গ্যালিলিওর সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। ভার্জিনিয়া সবচেয়ে আদরের সন্তানও ছিলো এবং বাবার মেধার খানিকটা উত্তরাধিকার সে-ই লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলো। ১৬৩৪ সালের ২ এপ্রিল তারিখে সে মারা যায়। তার কবর বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জে গ্যালিলিওর কবরের পাশেই অবস্থিত। লিভিয়া (জ. ১৬০১) সুওর আরকাঞ্জেলা নাম ধারণ করে। বড় বোনের মত সে কিছু করে দেখাতে পারেনি, জীবনের বেশির ভাগ সময়ই সে অসুস্ত ছিলো। ছেলে ভিনসেঞ্জিও (জ. ১৬০৬) পরবর্তীতে বৈধ জাত্যাধিকারী হয় এবং সেসটিলা বচ্চিনারিককে (Sestilia Bocchineri) বিয়ে করে।
১৬১২ সালে গ্যালিলিও রোমে যেয়ে Accademia dei Lincei-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি মূলত সৌর কলঙ্ক পযর্বেক্ষন করতেন। ঐ সালেই কোপারনিকাসের মতবাদের বিরোধী মতবাদ প্রচারিত হয় এবং গ্যালিলিও তা সমর্থন করেন। ১৬১৪ সালে সান্তা মারিয়া নভেলার প্রচারবেদিতে দাড়িয়ে ফাদার টমাসো কাচ্চিনি (Tommaso Caccini, ১৫৭৪ - ১৬৪৮) ব্যাখ্যা সহকারে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদ বর্ণনা করেন। এরপর সেই মতবাদের ভিত্তিতে তার বিচার করেন এবং ঘোষণা করেন যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। এধরণের অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় তিনি রোমে যান। কিন্তু ১৬১৬ সালে কার্ডিনাল রবার্ট বেলারমাইন ব্যক্তিগতভাবে তার মামলাটি হাতে নেন এবং তাকে হেনস্ত করতে শুরু করেন। ধর্মীয় আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় কোপারনিকাসের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং ধর্মীয় আইন হিসেবে কোপারনিকান জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়তে বা পড়াতে বাধ্য করা হয়। ১৬২২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই দ্য অ্যাসাইয়ার (Saggiatore) রচনা করেন যা ১৬২৩ সালে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। ১৬২৪ সালে পৃথিবীর প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ১৬৩০ সালে তিনি রোমে ফিরে যান তার রচিত একটি বই প্রকাশের লাইসেন্স নেয়ার জন্য। বইটির নাম ছিল, ডায়ালগ কনসারনিং দ্য টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেম্স। এটি এই লাইসেন্সের আওতায়ই ১৬৩২ সালে ফ্লোরেন্স থেকে প্রকাশিত হয়। ঐ বছরেরই অক্টোবর মাসে তাকে রোমের পবিত্র দপ্তরের (Holy Office) সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছিল "Congregation for the Doctrine of the Faith" (বিশ্বাসের উপদেশাবলীর জন্য সমাবেশ)। আদালত থেকে তাকে একটি দন্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা শপথের মাধ্যমে পরিত্যাগের জন্য বলা হয়। এই দন্ডাদেশের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্যই তাকে সিয়েনায় একঘরে জীবন কাটাতে হয়। এর কিছু পর ১৬৩৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে তার নিজ বাড়ি আরসেট্রিতে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। ১৬৩৪ সালে তার বড় মেয়ের মৃত্যুর পর গ্যালিলিও অনেকটাই ভেঙে পড়েন। বড় মেয়ে সিস্টার সেলেস্টি (১৬০০ - ১৬৩৪) তাকে সবসময় সঙ্গ দিতো, এই অকালমৃত্যুতে তাই গ্যালিলিও হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। ১৬৩৮ সালে গ্যালিলিও লিডেন থেকে তার সর্বশেষ বই টু নিউ সায়েন্সেস প্রকাশ করেন। আরসেট্রিতে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ছাত্র ভিনসেঞ্জো ভিভিয়ানি তার পাশে ছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
ধন্যবাদ।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
কোপার্নিকাস (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪৭৩ - ২৪ মে ১৫৪৩) একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন। যেখানে তিনি পৃথিবী নয় বরং সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র হিসাবে উল্লেখ করেন।...
দেমোক্রিতোস (Democritus) (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Δημόκριτος দ্যামোক্রিতোস্) (৪৬০ খ্রিস্ট পূর্ব_ ৩৭০ খ্রিস্ট পূর্ব) প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত পরমাণুবাদী দার্শনিক। তাঁকে বলা হয়েছে তাঁর সময়ের সবচেয়ে বিদ্বান ও ধনী ব্যক্তি। তিনি লিউকিপ্পোসের...
অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে ছিলেন একজন ফরাসি বিজ্ঞানী।১৭৪৩ সালের ২৬ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রসায়নের এই কিংবদন্তি। তার পিতা ছিলেন ফরাসী পার্লামেন্টের অ্যাটর্নি।পিতার ইচ্ছা ছিল পুত্রও বড় হয়ে তার মতো...
রবার্ট বয়েলঃ-
জন্মঃ আধুনিক রসায়নের স্থপতি রবর্ট বয়েল ১৬২৭সালে ইংল্যান্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করে। অবদানঃ ১. বয়েল প্রথম মৌলিক পদার্থের ধারনা প্রদান করেন। তিনি মৌলিক পদার্থ ও মিশ্রণের...
স্যার ফ্রান্সিস বেকন (ইংরেজি Francis Bacon , ২২শে জানুয়ারি , ১৫৬১ - ৯ই এপ্রিল , ১৬২৬) একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। আইনজীবি হিসেবে পেশাগত জীবন...
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানী জন ডাল্টনের (১৭৬৬-১৮৪৪) জন্ম ইংল্যান্ডে। ছিলেন ইংরেজ রসায়নবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদ।
আধুনিক পরমাণুতত্ত্ব প্রস্তাবনার জন্য তিনি বিখ্যাত।
ডাল্টনের প্রথম হাতেখড়ি বাবার কাছে। পরে গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি হন। সংসারের...
স্যার আইজ্যাক নিউটন (ইংরেজি : Sir Isaac Newton) (জন্ম : জানুয়ারি ৪, ১৬৪৩ – মৃত্যু : মার্চ ৩১, ১৭২৭) প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে,...
লিবনিজ ছিলেন একজন বড়মাপের বিজ্ঞানী, যাকে ক্যালকুলাস এর জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। উনার ব্যাপারে জানতে ক্লিক করুনঃ- https://bn.m.wikipedia.org/wiki/লিবনিজ
বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন ছিলেন একজন বড়মাপের বিজ্ঞানী। যিনি কেলভিন একক ও কেলভিন স্কেল আবিষ্কার করেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন:- https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lord_Kelvin
কুলম্ব (Charles Augustin de Coulomb) (জুন ১৪, ১৭৩৬- আগস্ট ২৩, ১৮০৬) একজন ফরাসি পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৭৩৬ সালের জুন ১৪ তারিখে ফ্রান্সের অঙ্গুলেমে তার জন্ম। তিনি “টরসন ব্যালান্স” যন্ত্রের বিভিন্ন...
1 Answers
2726 views
Close ×
ভিডিও কলে পরামর্শ নিতে প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ