শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
  • 'রোহিঙ্গা' শব্দের অর্থ : রোহ শব্দের অর্থ আরোহণ, রোহি শব্দের অর্থ আরোহণকারী, অঙ্গ শব্দের অর্থ দেহ/শরীর, আঙ্গা শব্দের অর্থ পোশাক। 'রোহিঙ্গা' শব্দের অর্থ 'আরোহণ ও আরোহণকারী এবং দেহ ও পোশাকের সমন্বয়'। রোহিঙ্গা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জাতিগত গোষ্ঠী।
  • রোহিঙ্গা (/ˈroʊɪŋjə'/, অথবা /ˈroʊhɪŋjə'/): ঐতিহাসিকভাবে আরাকানী ভারতীয়ও বলা হয়ে থাকে। রোহিঙ্গা হলো পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি রাষ্ট্রবিহীন ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী। (২০১৬-১৭) মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের পূর্বে অনুমানিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করত। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারি যদিও কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মের অনুসারিও রয়েছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৯৮২ সালের বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন অনুসারে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে।
  • রোহিঙ্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠী (Ruáingga ရိုဟင်ဂျာ ﺭُﺍَࣺﻳﻨڠَ):-
  1. মোট জনসংখ‍্যা : ২,০০০,০০০+
  2. উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চলসমূহ : মায়ানমার (রাখাইন রাজ্য), বাংলাদেশ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, সৌদি আরব।
  3. মায়ানমার : ১.৩ মিলিয়ন (২০১৬-২০১৭ নির্যাতনের পূর্বে)।
  4. বাংলাদেশ : ১৫০০,০০০+ (২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে ৪০০,০০০ এখন পর্যন্ত এসেছে)।
  5. পাকিস্তান : ২০০,০০০।
  6. থাইল্যান্ড : ১০০,০০০।
  7. মালয়েশিয়া : ৪০,০৭০।
  8. ভারত : ৪০,০০০।
  9. যুক্তরাষ্ট্র : ১২,০০০+
  10. ইন্দোনেশিয়া : ১১,৯৪১।
  11. নেপাল : ২০০।
  12. ভাষা : রোহিঙ্গা।
  13. ধর্ম : ইসলাম, হিন্দু।
  • হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে “রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে।”
  • এছাড়াও তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, (১৯৯১-১৯৯২), ২০১২, ২০১৫ ও (২০১৬-২০১৭) সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে অাখ্যা দিয়েছে, যেখানে গণহত্যার মত অপরাধের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মায়ানমারের বিশেষ তদন্তকারী ইয়ংহি লি, বিশ্বাস করেন, মায়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতড়িত করতে চায়। ২০০৮ সালের সংবিধান অনুসারে, মায়ানমারের সেনাবাহিনী এখনো সরকারের অধিকাংশ বিষয় নিয়ন্ত্রন করে থাকে, যার মধ্যে অন্তুর্ভূক্ত রয়েছে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেনাবাহিনীর জন্য সংসদে ২৫% আসন বরাদ্দ রয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
  • রোহিঙ্গারা বলে আসছেন, তারা পশ্চিম মায়ানমারে অনেক আগে থেকে বসবাস করে আসছেন। তাদের বংশধররা প্রাক-উপনিবেশিক ও উপনিবেশিক আমল থেকে আরাকানের বাসিন্দা ছিলো। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নির্যাতন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গারা আইনপ্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে মায়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পূর্বে যদিও মায়ানমার রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করত। কিন্তু হঠাৎই মায়ানমারের সরকারি মনোভাব বদলে যায় এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মায়ানমার সরকারের অফিসিয়াল মন্তব্য হলো- তারা জাতীয় জনগোষ্ঠী নয়, বরং তারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মায়ানমারের সরকার তখন থেকে “রোহিঙ্গা” শব্দটি ব্যবহার বন্ধ করে তাদের 'বাঙ্গালী' বলে সম্বোধন করে। রোহিঙ্গাদের অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা জাতীয় সংস্থা তাদেরকে মায়ানমারের মধ্যে জাতিসত্ত্বার পরিচয় দেওয়ার দাবী করে আসছে।
  • জাতিসংঘের তদন্তের প্রতিবেদন অনুসারে রোহিঙ্গারা মায়ানমারের ভিতরে অতি-জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের দ্বারা ঘৃণা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হচ্ছে। একই সাথে মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অপব্যবহারের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তাদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করছেন। জাতিসংঘের মতানুসারে, রোহিঙ্গাদের উপর চলা এ নির্যাতনকে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বলা যেতে পারে।
  • ২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সেনাবাহিনীর অভিযানের পূর্বে মায়ানমারে ১.১ থেকে ১.৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাস করতেন, যাদের অধিকাংশের বাসস্থান ছিলো মূলত (৮০-৯৮)% রোহিঙ্গা অধ্যূষিত রাখাইন রাজ্যে। ৯ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে দক্ষিণ-পূর্বের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিবেশী দেশসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে পালিয়ে গিয়েছে। ১০০,০০০-এর বেশি রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচুত হয়ে মায়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে রয়েছে।  ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরোদ্ধে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন” শুরু করে। এই অপারেশনে ৪০০-৩০০০ রোহিঙ্গা নিহত হোন, অনেক রোহিঙ্গা আহত, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হোন। তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৪০০,০০০ (মায়ানমারের রোহিঙ্গার ৪০%) এর বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
  • রোহিঙ্গা ভাষা : মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের (রাখাইন) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আধুনিক লিখিত ভাষাই হলো রোহিঙ্গা ভাষা। এটি ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, যার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মিল রয়েছে। রোহিঙ্গা গবেষকগণ আরবি, হানিফি, উর্দু, রোমান এবং বার্মিজ স্ক্রীপ্ট ব্যবহার করে সফলতার সাথে রোহিঙ্গা ভাষা লিখতে সক্ষম হয়েছেন। হানিফি হচ্ছে নতুন তৈরি করা স্ক্রীপ্ট যা আরবি এবং তার সাথে চারটি বর্ণ (ল্যাটিন এবং বার্মিজ) সংযোগে সৃষ্ট। সম্প্রতি একটি ল্যাটিন স্ক্রীপ্টের উদ্ভাবন হয়েছে, যা ২৬টি ইংরেজি বর্ণ এবং অতিরিক্ত ২টি ল্যাটিন বর্ণ, Ç (তাড়নজাত R -এর জন্য) এবং Ñ (নাসিকা ধ্বনি-র জন্য) সংযোগে সৃষ্ট। রোহিঙ্গা ধ্বনি সঠিকভাবে বোঝার জন্য ৫টি স্বরধ্বনি (áéíóú) ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আই.এস.ও দ্বারা স্বীকৃত।
  • মায়ানমারে ইসলাম : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত সুন্নি ইসলামের অনুসারী, যদিও কেউ কেউ সুফিবাদেও বিশ্বাস করে। যেহেতু মায়ানমার সরকার তাদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাই অনেকেই মৌলিক ইসলামী শিক্ষাকেই একমাত্র পড়াশুনার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। অধিকাংশ গ্রামেই মসজিদ এবং মাদ্রাসা (ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে, পুরুষরা জামাতে এবং মহিলারা বাড়িতেই প্রার্থনা করে থাকে।
  • তথ‍্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
  • ধন্যবাদ।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ