না। এটা যে চরম মিথ্যা, তার প্রমাণ দিচ্ছিঃ
কিছু কিছু লোক বলে থাকেনঃ ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন তার প্রিয় বস্তুকে কুরবানি করতে বলা হয়েছে। তিনি তার প্রিয় ১০০ উট কুরবানি করে দিলেন। আবার স্বপ্নে দেখানো হলোঃ প্রিয় বস্তু কুরবানি দিতে। তিনি ১০০ দুম্বা কুরবানি দিলেন। আবার প্রিয় বস্তু কুরবানির স্বপ্ন দেখানোর পর তিনি অনেক চিন্তা করে পেলেন তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন ছেলেকে নিয়ে দাওয়াত খেতে যাবেন। তাকে যেন সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দেন।
বের হবার পর শয়তান ইসমাইল (আঃ) কে কানে কানে বলছিল তাকে কুরবানির কথা। তখন ইসমাইল (আঃ) পাথর মেরে শয়তানকে তাড়িয়ে দেন। এরপর ইসমাইল তার পিতা ইবরাহিম (আঃ) কে বলেন তাকে শক্ত করে বেধে নিতে যেন ইব্রাহিম (আঃ) গায়ে রক্ত না লাগে। ইব্রাহিম (আঃ) এর চোখও তিনি বেধে নিতে বলেন যেন তার মায়া কাজ না করে। আর অনুরোধ করেন তার রক্তমাখা জামা তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে।
উপরের ঘটনার কিছু অংশ সত্য আর বেশির ভাগ মিথ্যা-বানোয়াট। এর কিছু কিছু অংশ হয়ত এলাকা ভেদে আরো ডালপালা মেলে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। চলুন এই মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচন করি। দেখে নিই কুরবানির ইতিহাস নিয়ে কুরআন কী বলে?
কুরআনে বলা হয়েছে “হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্য্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, হে প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি। অতএব দেখ তোমার কী অভিমত? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন, ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে অবশ্যই ধৈর্য্যশীলদের সাথে পাবেন।
অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে (ইসমাইলকে) কাত করে শুইয়ে দিল তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান যবেহের (জান্নাতী দুম্বা) বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম।” (সূরা সফফাত, আয়াত নং ১০০-১০৭)
জনাব! তাহলে বুঝলেন তো! আমাদের সমাজে প্রচলিত গল্পটা কত বড় মিথ্যা, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সেই গল্পে বলা হচ্ছে একজন নবী মিথ্যা (দাওয়াতের কথা) বলে তার ছেলেকে কুরবানি করতে নিয়ে গেছেন! (নাউযুবিল্লাহ)
অনেক ওয়াজে এসব বলে শ্রোতাদেরকে আবেগাপ্লুত করা হয়। মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় প্রিয় বস্তু কুরবানি দিতে হবে। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে স্বপ্নে যবাই করার কথা দেখানো হয়েছে। সেখানে আমরা সেটাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রিয় বস্তুর কথা নিয়ে এসেছি।
আল্লাহ আমাদের মিথ্যা কথা বলা এবং শোনা হতে হেফাজত করুন৷