দয়াকরে বিস্তারিত জানাবেন |
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

وَوَجَدَكَ عَآئِلًا فَأَغْنٰى তিনি তোমাকে পেলেন নিঃস্ব, অতঃপর করলেন অভাবমুক্ত। নামকরণ: ضُحٰي বলা হয় পূর্বাহ্ন‎‎ বা চাশতের সময়কে। যখন সকালে সূর্য একটু উঁচুতে ওঠে। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الضُّحٰي শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে আল্লাহ তা‘আলার সম্পর্ক বহাল রাখার কথা ও রাসূলের ওপর পূর্বাপর কয়েকটি নেয়ামতের কথা স্মরণ করে দেয়া হয়েছে। শানে নুযূল: সাহাবী জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা নাবী (সাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। দু-তিন রাত তাহাজ্জুদ পড়তে পারেননি। এক মহিলা তাঁর নিকট এসে বলল : হে মুহাম্মাদ! মনে হয় তোমার শয়তান তোমাকে ত্যাগ করেছে। তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৫০, সহীহ মুসলিম হা. ১৭৯৭)। এ মহিলা হলো আবূ জাহলের স্ত্রী উম্মে জামিলা। (ফাতহুল বারী ৮/৯০৭) (إِذَا سَجٰي) শব্দের অর্থ হলো: নিঝুম হওয়া। অর্থাৎ যখন রাত্রি নিঝুম হয়ে যায় এবং তার অন্ধকার পূর্নরূপে ছেয়ে যায়। যেহেতু তখনই প্রত্যেক জীব স্থির ও শান্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (فَالِقُ الْإِصْبَاحِ ج وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ط ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ)‏ “তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন এবং গণনার জন্য সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ।” (সূরা আনআম ৬: ৯৬) (مَا وَدَّعَكَ) অর্থ : ما تركك বা আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বর্জন করেননি। وَمَا قَلٰي অর্থ : وما ابغضك বা তিনি তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। সুতরাং যে বা যারা বলে আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদকে বর্জন করেছেন তাদের জন্য এ আয়াত দাঁতভাঙ্গা জবাব। বরং এ আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেন যে, যখন থেকে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবেসেছেন এবং ওয়াহী নাযিল করেছেন তখন থেকে তিনি তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হননি। বরং সর্বদা তোমার ওপরে তার অনুগ্রহ বর্ষণ হতে থাকবে। (وَلَلْاٰخِرَةُ خَیْرٌ لَّکَ مِنَ الْاُوْلٰی) অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন অপেক্ষা আখিরাতের জীবন উত্তম। এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করা হয়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমার পর আমার উম্মতের জন্য যে বিজয় দেওয়া হবে তা আমার সামনে উত্থাপন করা হলো, ফলে আমার আনন্দ লাগল; তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সনদ হাসান, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল।) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চাটাইয়ের ওপর শুয়েছিলেন। ফলে তাঁর পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি ঘুম থেকে ওঠার পর আমি তাঁর দেহে হাত বুলিয়ে বললাম : হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! চাটাইয়ের ওপর আমাকে কিছু বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমি কোথায় ও দুনিয়া কোথায়? আমার ও দুনিয়ার উদাহরণ হলো সেই পথচারী পথিকের মত যে, একটি গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম গ্রহণ করে, তারপর গন্তব্য স্থলের উদ্দেশ্যে চলে যায়। (তিরমিযী হা. ২৩৭৭, ইবনু মাযাহ হা. ৪১০৯, সিলসিলা সহীহাহ হা. ৪৩৯.) (وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضٰي) অর্থাৎ হে নাবী (সাঃ)! আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে এমন নেয়ামত দেবেন যা পেয়ে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য, আখিরাতে নাবী (সাঃ)-এর শাফায়াত। (ইবনু কাসীর) হাফেয সালাহুদ্দীন ইউসুফ (রহঃ) বলেন : এর দ্বারা দুনিয়ার বিজয় এবং আখেরাতের নেকী বুঝানো হয়েছে। এতে ঐ সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত যা নাবী (সাঃ) নিজের গুনাহগার উম্মাতের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট লাভ করবেন। فَاٰوٰي অর্থাৎ তুমি শৈশবকালেই ইয়াতীম হয়ে পিতা-মাতার আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলে, তোমার কেউ ছিল না, আল্লাহ তা‘আলাই তোমাকে আশ্রয় দিয়ে দাদা আবদুল মুত্তালিবের দায়িত্বে দেন, আব্দুল মুত্তালিব মারা গেলে চাচা আবূ তালেবের দায়িত্বে দেন। এভাবেই তোমাকে তাঁর সাহায্য ও মু’মিনদের দ্বারা শক্তিশালী করে তুলেছেন। (وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدٰي) অর্থাৎ তুমি দীন, শরীয়ত ও ঈমান কী জিনিস এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলে। আমি ওয়াহী অবতীর্ণ করে সব কিছুর সঠিক পথ দেখালাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَکَذٰلِکَ اَوْحَیْنَآ اِلَیْکَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاﺚ مَا کُنْتَ تَدْرِیْ مَا الْکِتٰبُ وَلَا الْاِیْمَانُ وَلٰکِنْ جَعَلْنٰھُ نُوْرًا نَّھْدِیْ بِھ۪ مَنْ نَّشَا۬ئُ مِنْ عِبَادِنَاﺚ وَاِنَّکَ لَتَھْدِیْٓ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ) “আর এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওয়াহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে; তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথনির্দেশ করি; তুমি অবশ্যই সরল পথ প্রদর্শন কর।” (সূরা শুরা ৪২: ৫২) (عَآئِلًا فَأَغْنٰي) অর্থাৎ তুমি দরিদ্র ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন শহর, দেশ বিজয় করে তোমাকে দারিদ্রমুক্ত করলেন। আর তোমার অন্তরকে পরিতৃপ্তি ও ধৈর্যের দ্বারা মানুষের অমুখাপেক্ষী করেছেন। সুতরাং তুমি অভাবী অবস্থায় ধৈর্যশীল এবং অভাব মুক্ত অবস্থায় কৃতজ্ঞ হও। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : لَيْسَ الغِنَي عَنْ كَثْرَةِ العَرَضِ، وَلَكِنَّ الغِنَي غِنَي النَّفْسِ মাল ও আসবাবপত্রের আধিক্যই ধনী নয়, বরং আসল ধনী হলো অন্তরের ধনী। (সহীহ বুখারী হা. ৬৪৪৬) (فَلَا تَقْهَرْ) অর্থাৎ যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ইয়াতীম অবস্থায় পেয়েছিলেন, তারপর তাঁর স্বীয় অনুগ্রহে তোমাকে বড় করে তুললেন, অতত্রব তুমিও ইয়াতীমদের প্রতি কঠোর হয়ো না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্র এমনভাবে গড়ে উঠেছিল যে তিনি চরম রাগ করলেও নিজেকে সংযত রাখতেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللہِ لِنْتَ لَھُمْﺆ وَلَوْ کُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِکَﺕ فَاعْفُ عَنْھُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَھُمْ وَشَاوِرْھُمْ فِی الْاَمْرِﺆ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَکَّلْ عَلَی اللہِﺚ اِنَّ اللہَ یُحِبُّ الْمُتَوَکِّلِیْنَ‏)‏ “অতএব আল্লাহর অনুগ্রহে, তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়বান হয়েছিলে; আর তুমি যদি কর্কশ ভাষী, কঠোর হৃদয়বান হতে, তবে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত, অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কার্য সম্পর্কে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অতঃপর যখন তুমি (কোন বিষয়ে) সঙ্কল্প করবে তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা কর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ভরশীলগণকে ভালবাসেন।” (সূরা আলি ইমরান ৩: ১৫৯) আর তুমি ছিলে নিঃস্ব, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে অভাবমুক্ত করেছেন। অতএব অভাবীদেরকে ধমক দিও না। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে যে দুনিয়াবী ও দীনি নেয়ামত প্রদান করেছেনÑ যেমন তুমি ইয়াতীম ছিলে, আল্লাহ তা‘আলা তত্ত্বাবধায়নের ব্যবস্থা করেছেন; তুমি দরিদ্র ছিলে, আল্লাহ তা‘আলা দরিদ্রতা দূর করেছেন; তুমি দীন, শরীয়ত ও ঈমান বলতে কিছুই জানতে না আল্লাহ তা‘আলা তোমার প্রতি রিসালাত প্রদান করে সব জানিয়ে দিয়েছেন। তাই তাঁর প্রশংসা প্রকাশার্থে এসব নেয়ামতের বর্ণনা কর। সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের বিবরণ জানলাম। ২. প্রত্যেক মু’মিনের জন্য আখিরাত শ্রেষ্ঠ। ৩. ইয়াতীম ও দরিদ্রদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলা ঠিক না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মহানবী (স:) বাল্যকালেই তার সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান । চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করেন । চাঁচার সংসারের উন্নতির জন্য মেষ চড়ান । অত:পর আল্লাহ তায়ালাই তাকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেন , অভাবমুক্ত করেন , সত্যের দিশা প্রদান করেন ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ